ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে সংশোধনী পাসের পর পৌর নির্বাচনের তফসিল

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৫ নভেম্বর ২০১৫

সংসদে সংশোধনী পাসের পর পৌর নির্বাচনের তফসিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী সংসদে পাসের আগে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে না। জানা গেছে আগামী বুধবার নাগাদ জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত আইন পাস হতে পারে। আর আইন পাসের পরই নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালার সংশোধন করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। এর পরই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষণার উদ্যোগ নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন আইন সংশোধনের কারণে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা আটকে আছে। এটি চূড়ান্ত না হওয়ায় আটকে আছে তফসিল ঘোষণার কাজও। তারা জানান, সংশোধিত এ আইনে নতুন করে সংশোধনী আনা হয়েছে। বিশেষ করে আগে সব পদে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনের কথা বলা হলেও এ ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী শুধু মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। বাকি কাউন্সিলর বা সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে নির্দলীয় ভাবে। তারা জানান, ওই সংশোধনী অনুমোদন সংসদের পাস হওয়ার পর স্থানীয় সরকারের সব স্তরে (সিটি, পৌর, উপজেলা, ইউপি) মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকবে। কাউন্সিলর, সদস্য, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আগের মতো নির্দলীয়ভাবে প্রার্থিতার সুযোগ থাকবে। তবে তারা উল্লেখ করেন ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পৌরসভা নির্বাপন করতে চায় ইসি। সে ক্ষেত্রে এ সপ্তাহের মধ্যেই বিধিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হলেও তফসিল ঘোষণার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে। বিশেষ করে ৪০ দিন হাতে সময় নিয়েই তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব হবে। জানা গেছে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন সংক্রান্ত আইনটি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের পর আজ সোমবার তা সংসদে বিল আকারে উঠছে। যাচাই-বাছাই শেষে আগামী বুধবার তা সংসদে পাস হতে পারে। আইন পাসের পর এ আইনের আলোকে পৌরসভা বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা সংশোধন করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। বিধিমালা অনুমোদনের পরই পৌরসভার তফসিল ঘোষণার উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীব উদ্দিন আহমেদ জানান, নির্বাচনী বিধিমালা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে না আসা পর্যন্ত পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে না। বিধিমালা এখনও মন্ত্রণালয়ে আছে। এটা না আসলে আমরা কোন কাজ করতে পারছি না। বিধিমালা হাতে আসলেই আমরা কাজ শুরু করব। ইসি জানিয়েছে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ অনুযায়ী মেয়র, চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলরসহ সব পদেই দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দল মনোনীত প্রার্থীরা দলী প্রতীকে অংশ নেবেন। বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। এ অধ্যাদেশের আলোকে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আইন সংশোধনের কারণে এখন বিধিমালায় কিছু পরিবর্তন হবে। এ কারণে আইন পাসের আগে বিধিমালা চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গত ১২ অক্টোবর দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয় গত ২ নম্বেবর। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি পর পরই ইসির পক্ষ থেকে পৌরসভা নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালার খসড়া ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রিসভায় আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ার কারণে বিধিমালার ভেটিং আটকে রয়েছে। আইন সংশোধনের পরই বিধিমালা জারির সব প্রক্রিয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বুধবারের মধ্যে সংসদে এ সংক্রান্ত বিল পাস হবে। তখন সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে কোন্ পদে দল কোথায় মনোনয়ন দেবে, কোথায় দেবে না। ১৮ নবেম্বরের মধ্যে বিল পাস হলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন আইন-বিধি সংশোধন নিয়ে মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। ইসি জানিয়েছে দেশে প্রায় ২৪০টি পৌরসভা নির্বাচন উপযোগী হওয়ার কারণে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ এসব পৌরসভার নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারির পর থেকে পৌরসভা নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে অনুযায়ী তৈরি করা হয় নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা। তবে আচরন বিধিমালায় মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ রেখে বিধিমালা তৈরি করা হয়। জানা গেছে মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে এ আচরণ বিধিমালার এ ধারায় সংশোধনীর কথা বলা হয়েছে। এ ধারায় সংশোধনী আনা হলে মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী প্রচারের অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে না। ইসি জানিয়েছে পৌরসভা নির্বাচনের মাঠ পর্যায়ের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। শুধু বিধিমালা চূড়ান্ত হলে পৌরসভার নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।
×