ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেম-প্রকৃতির এক জলকাব্য

পারভেজ আহসান 

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২১ মার্চ ২০২৪

প্রেম-প্রকৃতির এক জলকাব্য

প্রেম-প্রকৃতির এক জলকাব্য

অদ্বৈত মারুত রোমান্টিক ভাবধারায় প্রভাবিত শূন্যদশকের কবি। তাঁর প্রতিটি কবিতা পাঠককে নিয়ে যায় ভাবনার অতলান্তে। বাংলা কবিতার ঐতিহ্য ধারণ করেই কবিতায় বাঁকবদল আনতে নিমগ্ন এই কবি। জীবন ও প্রকৃতিকে তিনি দেখেন ভিন্ন দৃষ্টিতে। এ বছর অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত তাঁর ‘নীল অথই নির্জনতা’ শীর্ষক কাব্যগ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে ৩৩টি অনবদ্য কবিতা। প্রতিটি কবিতা পাঠক-হৃদয়ে ভিন্ন কাব্যরসের সৃষ্টি করে।

তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে স্মৃতিকাতরতা, প্রকৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ, বৈরী সময় ভেঙে এগিয়ে চলার প্রত্যয়। ‘প্রাচীর’ শীর্ষক প্রথম কবিতাটি সম্পর্কের দূরত্বকে আবর্তন করে লেখা। সম্পর্কের দূরত্বের কারণে মানব মনে তীব্র দহন, ক্ষরণ ও অবচেতনের গহিনে মিলনের প্রবল আকুতি শৈল্পিক ঢঙে অন্ত্যানুপ্রাস অনূসৃত নি¤েœাক্ত পঙ্ক্তিগুচ্ছে প্রকাশিত হয়েছেÑ ‘অথচ ঘর নেই; মনে পড়ার মতো করেওনি সন্ধি/ পরস্পরের কাছে পরস্পরÑ হয়নি এ হৃদয় বন্দি!/তবু হারতে থাকে, দূরত্ব বাড়তে থাকে মনবাগানের/পাহাড়ের সমতল ভূমির...’।
জীবন চলার পথে মানুষ হোঁচট খায়, কখনো পা ভাঙে তবু ‘উড়ে ভেসে গিয়ে কোথাও তো নিশ্চিত থামা হয়’। মানুষ স্বপ্ন বোনে। সব দুঃখ অতিক্রম করে বাঁচতে চায়। জীবন চলার পথ বদলিয়ে আবারও হাঁটে। ‘নিস্তরঙ্গ’ শীর্ষক কবিতায় উল্লিখিত বক্তব্যের অনুরণন হলোÑ ‘জাহাজের মাস্তুলে লেপ্টে থাকা এই জীবনের শ্বাস/কতবার কতভাবে দিতেও থাকে বাঁচবার আশ্বাস’।
এই কবি বাংলার বৈচিত্র্যময় ঋতুগুলো ভিন্ন দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেন। তিনি দৃশ্যমানতা ভেদ করে অন্তর্লীন বাস্তবতার অনুসন্ধান করেন। আর তাই তিনি বলেন, ‘আমাদের হেমন্তের দুধকুয়াশা গাঢ় সবুজ অথবা নীল’। কবি তাঁর কবিতায় রূপকের যুৎসই ব্যবহার করে কবিতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান। ‘হে চাঁদ, অশ্বেরা ফেরেনি হ্রেষা ধ্বনি তুলে’ নামক কবিতায় বৈরী সময়ের বিমূর্ত ভাষাচিত্রায়ন পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করে : ‘পা ভেঙে পড়ে;/অশ্বেরা ফেরেনি হ্রেষা ধ্বনি তুলে/.../ চাঁদ, তুমি শান্ত থাকো।/আশ্বিনে মেঘডুম্বুর শাড়ি পরে আছে।’ 
প্রকৃতির সঙ্গে রয়েছে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক। প্রকৃতিই মানুষের আবেগ-অনুভূতিতে ঢেউ তোলে, প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার তীব্র বাসনা জাগায়। এ কথাগুলো প্রতিভাত হয় তার ‘শ্রাবণে ¯œান’ কবিতায়Ñ ‘শরৎ নীল আঁচলে বেঁধে নিয়ে এলো নীলাম্বর/পাখি ওড়ে, ঘোরেÑ সেও চায় বাঁধিতে ঘর।/প্রবল বাসনায় শরৎ ফুলের মতো হয়ে দোলে/এসো বন্ধু এসো, পড়ে থাকো হৃদয়কোলে।’  
রোমান্টিক বৈশিষ্ট্যের এ কবির কবিতায় আছে বাঁধন ছিঁড়ে যাওয়ার তীব্র দহন। আর তাই তিনি বলেন, ‘ও কোকিল, তুমি  গেয়ো না আগুনের গান।/ঝরাপাতা বুকে নিয়ে একাকার হয়ে বেশ আছি।’ 
বাংলা কবিতার ঐতিহ্য ধারণ করেই কবি অদ্বৈত মারুতের কাব্যযাত্রা। আর সে কারণেই তাঁর কবিতায় আছে গীতলতা, আছে ছন্দের নিরীক্ষণ। দশমিক থেকে প্রকাশিত এ কাব্যগ্রন্থটি কবিতা অনুরাগীদেরকে কাব্যরসে সিক্ত করবে বলে আমি বিশ^াস করি।  

×