ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শতবর্ষের আলোয় কবি চন্দ্রাবতী

প্রদীপ দত্ত

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২১ মার্চ ২০২৪

শতবর্ষের আলোয় কবি চন্দ্রাবতী

কবি চন্দ্রাবতী

‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন-’ একজন বাঙালি কবি এভাবেই তাঁর আত্মোপলব্ধি থেকে এ কথা উচ্চারণ করেছিলেন কবিতায়। শেষটুকুতে লিখেছিলেন ‘-পাইলাম কালে মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে’। বঙ্গ-ভা-ারের এই বিবিধ রতনের সন্ধানে ব্রতী হয়েছিলেন শ্রী দীনেশ চন্দ্র সেন। এখন থেকে  একশ’ বছর আগে কোলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের আনুকূল্যে ১৯২৩-এর নভেম্বর মাসে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘মৈমনসিং গীতিকা’ যা ছিল চারখ-ে সমাপ্ত ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকার’ প্রথম খ-।

সেই অর্থে ময়মনসিংহ গীতিকা প্রকাশের শতবর্ষ পূর্তি উদ্যাপিত হয়েছে গত বছরের নভেম্বর মাসে। উত্তর-পূর্বের গারো পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহের হাওড়-বাঁওড়-নদীবেষ্টিত বিশাল ভাটি অঞ্চলের গণমানুষের নিত্যদিনের জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম- পরিণয়, বিচ্ছেদ-বঞ্চনা আর দ্রোহের গাথাভিত্তিক এই পালাগানগুলো গ্রাম্য কবিরা অসামান্য মমতা আর কুশলতায় জীবন্ত করে রেখে গেছেন। তাদের এই সৃষ্টিকর্ম তথা পালাগানগুলো কথিত ভদ্রজনের জন্য লেখা হয়নি।

সমাজের নি¤œবর্গ তথা মাঝিমাল্লা, ওঝা-সাঁপুড়ে, কৈবর্ত  এ সকল প্রান্তজনের জীবনচর্যার এক বাস্তব রূপায়ণ; তাদের এই আপন সাহিত্যকর্ম যা ছিল বিদ্বজ্জনের অবজ্ঞা আর উপেক্ষার শিকার। ‘ইংরেজী শিক্ষার দর্পে’ তাঁদের অনেকেরই অভিমত ছিল যে ‘ঐ গানগুলির মধ্যে এমন কি থাকিতে পারে যে শিক্ষিত সমাজ তৎপ্রতি আকৃষ্ট হইতে পারেন?’ এর উত্তরে শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন এই গ্রন্থের ভূমিকায় লিখছেন ‘পালাগানের অধিকাংশই পূর্ব-মৈমনসিংহের কোনো কোনো যথার্থ ঘটনা অবলম্বন করিয়া রচিত হইয়াছে।

যে সকল  ঘটনা অশ্রুশিক্ত হইয়া লোকেরা শুনিয়াছে, যে সকল অবাধ ও অপ্রতিহত অত্যাচার যমের দুর্জয় চক্রের ন্যায় সকল নিরীহ প্রাণকে পিষিয়া চলিয়া গিয়াছে সেই সকল অপরূপ করুণ কথা গ্রাম্য কবিরা পয়ারে গাঁথিয়া রাখিয়াছেন। তাহারা ছন্দের শব্দৈশ^র্যের কাঙ্গাল হইতে পারেন, তাহারা হয়ত বড় বড় তালমানের সন্ধান জানিতেন না। কিন্তু তাহাদের হৃদয় অফুরন্ত কারুণ্য ও কবিত্বের উৎসস্বরূপ ছিল।

যাঁহারা লিখিয়াছিলেন তাঁহাদের অশ্রু ফুরাইয়া গিয়াছে, কিন্তু এই সকল কাহিনীর শ্রোতাদের অশ্রু কখনও ফুরাইবে বলিয়া মনে হয় না।’ ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার তাঁর ‘বাংলা দেশের ইতিহাস’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খ-ে লিখেছেন  ‘ময়মনসিংহ-গীতিকা বাংলা সাহিত্যের সম্পদ বলিয়া গণ্য হইবার যোগ্য। ইহাদের মধ্যে মানুষের হৃদয়ানুভূতি, মানুষের সৌন্দর্য এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য এই তিন উপাদানের সমন্বয়ে এক সজীব ব্যঞ্জনাময় কবিত্ব-স্বর্গ রচিত হইয়াছে। এই স্বর্গ যাহারা রচনা করিয়াছিলেন, তাঁহারা যে প-িত, সংস্কৃতিবান নাগরিক কবিগোষ্ঠী নহেন, সুদূর গ্রামাঞ্চলের অশিক্ষিত কবি-সম্প্রদায় Ñইহা ভাবিয়া আমরা বিস্ময় অনুভব করি’।

আমাদের মধ্যযুগের সাহিত্যের উপাদান মূলত পুরাণভিত্তিক  আর ধর্মাশ্রিত; সেক্ষেত্রে ময়মনসিংহ গীতিকার কাহিনীগুলোতে পুরাণের প্রভাব খুবই সীমিত। এখানে যেমন হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি সাধারণ মানুষের জীবনের প্রেম-প্রণয় বিচ্ছেদ এইসব কাহিনী অপূর্ব রোমান্টিকতায় ভরপুর। ‘বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন ‘সংগৃহীত পালাগানের মধ্যে যেগুলিতে বাস্তব প্রেম-প্রণয়ের কথা বলা হয়েছে, কাব্যের দিক থেকে সেগুলি উৎকৃষ্ট যেমন- মহুয়া, মলুয়া প্রভৃতি।

শুধু প্রেমের জন্য জাতিপাঁতি বিলিয়ে দেওয়া, উচ্চবর্ণ কতৃক নি¤œবর্ণের কন্যাকে প্রেয়সীরূপে গ্রহণ করে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া এমন কি বেদিয়ার সাথে ব্রাহ্মণপুত্রের বিবাহ, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যেও  প্রেমের চিত্রাঙ্কন প্রভৃতি ঘটনা অশিক্ষিত কবিরা বিস্ময়কর নিপুণতার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন।’ শ্রী দীনেশচন্দ্র সেনের এই অসামান্য প্রচেষ্টার ফলে  অতি সাধারণ গ্রাম্য কবিদের রচনা এই মহৎ সৃষ্টিসম্ভার কালের আবর্তে লোকচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।

জীবনের প্রথম পর্যায়ে পূর্ববাংলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতার সূত্রে এ অঞ্চলের পুঁথি সংগ্রহের কাজ তিনি বেশ আগেই শুরু করেন। ১৯১৩ সালে কেদারনাথ মজুমদারের সম্পাদনায় ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ‘সৌরভ’ পত্রিকায় কবি চন্দ্রাবতী প্রসঙ্গে কবি চন্দ্রকুমার দে’র লেখা একটি প্রবন্ধ পড়ে তিনি মুগ্ধ হন। দীনেশচন্দ্রের অনুরোধে ও পৃষ্ঠপোষকতায় নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়ার আইথর গ্রামের এই চন্দ্রকুমার দে ভাটিবাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে লোকমুখে প্রচারিত এই গাথা কাব্যগুলি সংগ্রহ করতে থাকেন।

সংগৃহীত এই পালাগুলোর সম্পাদিত সংকলন ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ যাতে ভিন্ন ভিন্ন রচয়িতার মোট দশটি পালাগান স্থান পেয়েছে। দ্বিজকানাই,দ্বিজ ঈশান, নয়ানচাঁদ ঘোষ, মনসূর বয়াতি প্রমুখের পাশাপাশি আমরা চন্দ্রাবতী নামে একজন নারীকবির নাম ও রচনার সাথে পরিচিত হওয়ার সূযোগ পাই। ষোড়শ শতকের এই কবিকেই বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারীকবি হিসাবে মনে করা হয়ে থাকে। মলুয়া, দস্যু কেনারামের পালা, দেওয়ান ভাবনা ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’র এই তিনটি পালা কবি চন্দ্রাবতীর লেখা।

তৃতীয় পালা হিসাবে নয়নচন্দ্র ঘোষের লেখা ‘চন্দ্রাবতী-জয়চন্দ্রের পালা’ যা থেকে আমরা এই ভাগ্যবিড়ম্বিত এই নারীর ব্যক্তি আর কবি জীবনের প্রায় অনেকটাই জানতে পারি। ময়মনসিংহ গীতিকার সংকলন আর প্রকাশনা না হলে কালের বিস্মৃতিতে হারিয়ে যেতেন কবি চন্দ্রাবতীসহ অন্য পালাকারগণ। কবি চন্দ্রাবতী ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। সে হিসাবে তাঁর রচনা পাঁচ শতাব্দিকাল অতিক্রম করেছে। তাঁর পিতা দ্বিজ বংশীদাস ছিলেন পদ্মপুরাণের কবি, যিনি মনসার ভাসান পালা রচনা করে বিখ্যাত হয়েছিলেন।

জানা যায়, তিনি গ্রামে বিদ্যাশিক্ষার জন্য টোল পরিচালনা করতেন, আর সেখানেই এক অনাথ ব্রাহ্মণপুত্র জয়চন্দ্র আর নিজ কন্যা চন্দ্রাবতী সহপাঠী হিসাবে বেড়ে উঠতে থাকে। কালক্রমে উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পালাগানের ভাষায় ‘বাড়ীর আগে ফুইট্টা রইছে মল্লিকা মালতি/ জন্মে জন্মে পাই যেন তোমাকেই পতি’।

একসময় পিতা বংশীদাসের কাছে ঘটক মারফত বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় জয়চন্দ্র, চন্দ্রাবতীর আগ্রহ জেনে তিনি এ বিয়েতে সম্মতি দেন। বিয়ের দিনক্ষণও ঠিক হয় কিন্তু জয়চন্দ্র একদিন নদীর ঘাটে কাজীর মেয়ে আসমানীকে দেখতে পেয়ে তাকে চিঠি দিয়ে প্রেম নিবেদন করে, তারপর নিজে ধর্মান্তরিত হয়ে আসমানীকে বিয়ে করে।

এই ঘটনায় চন্দ্রাবতী অত্যন্ত ব্যথিত হন। ‘না কান্দে না হাসে চন্দ্রা, নাহি বলে বাণী/আছিলো সুন্দরী কন্যা হইলো পাষাণী’। ব্যথিত চন্দ্রাবতী এরপর থেকে আজীবন কুমারী থাকার ব্রত গ্রহণ করেন ‘পিতা মম বাক্য ধর /জন্মে না করিব বিয়া হইব আইবর’। পিতা দ্বিজ বংশীদাস আদেশ দিয়েছিলেন ‘অনুমতি দিয়া পিতা কয় কন্যার স্থানে/শিবপূজা কর আর লেখ রামায়ণে’। এভাবেই যোগিনী বেশে মন্দিরে শিবপূজা আর কাব্যচর্চায় নিজেকে সমর্পণ করে হয়ে উঠেছিলেন পালাকার চন্দ্রাবতী। ‘নিম্মাইয়া পাষাণশিলা বানাইয়া মন্দির /শিবপূজা করে কন্যা মন করে স্থির /অবসরকালে কন্যা লেখে রামায়ণ/যাহারা পড়িলে হয় পাপ বিমোচন।’ 
চন্দ্রাবতীর জীবনে আবার ফিরে আসতে চেয়েছিলেন প্রেমিক জয়চন্দ্র, কিন্তু মন্দিরের দরজা থেকেই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন চন্দ্রাবতী। জয়চন্দ্রকে দেখা পর্যন্ত দেননি। প্রত্যাখ্যাত জয়চন্দ্র বেদনাভরা মন নিয়ে ফুলেশ^রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দেন। এভাবেই ময়মনসিংহ গীতিকার জয়-চন্দ্রাবতী পালার নায়িকা হিসাবে তিনি অমর হয়ে আছেন।
মলুয়ার পালার ভণিতায় চন্দ্রাবতীর নাম পাওয়া যায়। ফলে, বিদ্বজ্জনেরা অনেকেই মনে করেন এটি তাঁরই রচনা। তাছাড়া তিনি রচনা করেছিলেন দস্যু কেনারামের পালা, দেওয়ান ভাবনা বা সোনাই মাধব পালা, পিতার আদেশে তিনি রামায়ণ লিখেছিলেন। তিনটি খ-ে বিস্তৃত কিন্তু  অসমাপ্ত এই রামায়ণে আদিকবি বাল্মীকি কিংবা পঞ্চদশ শতাব্দীর বাঙালি কবি কীর্ত্তিবাস ওঝার কোনো প্রভাব ছিলো না। চন্দ্রাবতীর রামায়ণ ছিলো সীতাকেন্দ্রিক যা ছিলো মূলত সীতাকথন, এখানে কথক সীতা নিজেই।

কবি চন্দ্রাবতী এই পালায় পাঠক কিংবা শ্রোতাদের সন্মোধন করেছেন ‘শুন সখিগণ’ বলে, অর্থাৎ কথক আর শ্রোত্রাম-লী উভয়েই নারী আর স্বভাবতই তারা প্রান্তজন। রামায়ণ অনুসারে সীতা ধরিত্রীর কন্যা, কৃষকদের রাজা জনক জমিতে লাঙল দিতে গিয়ে সীতাকে পেয়েছিলেন। সীতা প্রকৃতি ফসল আর উর্বরতার প্রতীক। তাঁকে জয় করেছিলেন আর্যবীর রামচন্দ্র। পিতৃসত্য রক্ষা করতে গিয়ে রামসহ সীতার বনবাস।

তাঁকে কৌশলে লুঠ করে নিয়ে যান রাক্ষসকুলের রাজা রাবণ, তিনি অনার্য, তাই আর্য কবির দৃষ্টিতে তিনি দুরাচারী-দুবৃর্ত্ত, তাকে বধ করা ক্ষত্রিয়ের ধর্ম! যুদ্ধে সমূলে বিনাশ হয়েছিলেন রাবণ, আর্যপূজিত দেবতারাও চেয়েছিলেন রাম বিজয়ী হোক। বিজয়ী রাম হয়ে উঠলেন সসাগরা আর্যভূমির অধিপতি। কিন্তু যুদ্ধে সীতা উদ্ধার হলেও তিনি দুঃখিনী। 
নিজ পুত্রদের পিতৃপরিচয় দিতেও রামচন্দ্র ছিলেন কুণ্ঠিত। গর্ভাবস্থায় আবারও সীতাকে বনবাসে পাঠিয়েছিলেন এই রামচন্দ্র। রাজধর্ম রক্ষার অজুহাতে রামের আদেশে সন্তানতুল্য প্রজাদের কাছে তাঁকে সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়েছে বারবার। লাঞ্চিত হয়েছে নারীর মর্যাদা আর শ্রেষ্ঠত্ব। তাই অপমানের গ্লানি নিয়ে সীতা আবার ধরিত্রীর কোলেই শেষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। সীতাকে হারিয়ে ব্যথাতুর রামচন্দ্র পুত্রের হাতে রাজ্য ছেড়ে দিয়ে সরযু নদীতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন।

চন্দ্রাবতী  রামায়ণ লিখতে গিয়ে রামচন্দ্রের ব্যক্তিত্ব আর দৃঢ়তার অভাবের সমালোচনা করতে ছাড়েননি। ‘পুড়িবে অযোদ্ধাপুরী গো কিছুদিন পরে/ লক্ষীশূন্য হইয়া গো রাজ্য যাবে ছারখারে/ পরের কথা কানে লইলে গো নিজের সর্ব্বনাশ / চন্দ্রাবতী কহে রামের গো বুদ্ধি হইল নাশ’। মধ্যযুগের গীতিকাব্যের যুগে অসংখ্য পুরুষ  কবিদের ভিড়ে একক কোনো নারীকবির এভাবে কোনো বীরপুরুষকে অভিসম্পাত রীতিমতো দুঃসাহস ! তাও আবার বাল্মীকির মহাকাব্যের নায়ক ত্রেতাযুগের অবতার শ্রী রামচন্দ্রকে।

তিনি কি সীতার জীবনের সাথে নিজের জীবনের মিল খুঁেজ পেয়ে এভাবেই প্রকাশ করেছিলেন তাঁর মনের ক্ষোভ আর যন্ত্রণা? রামকাহিনী রচনায় তিনি স্বতন্ত্র মনীষার পরিচয় দিয়েছিলেন। মহাকবি বাল্মীকি তুলসীদাস কিংবা কীর্ত্তিবাসের মতো তিনি রাম প্রশস্তিতে যাননি। সীতার জন্ম কাহিনীতেও তিনি প্রচলিত লোকগাথার আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখানে সীতাদেবীর জন্মকথায় সতা আর মাধব নামে এক জেলে দম্পতির নাম পাওয়া যায়। যারা মাছ ধরতে গিয়ে জলে ভাসমান একটা সোনার কৌটা দেখতে পেয়ে বাড়িতে এনে ভক্তিভরে পূজা করতে থাকে। ‘একদিন রাতে গো সতা দেখিল স্বপন/সে বড় আশ্চর্য্য কথা শোন সখীগণ’ সেখান থেকে জন্ম হয় সীতাদেবীর, তখন তাদের সংসার প্রাচুর্যে ভরে উঠে।

শিশু সীতাকে তাঁরা পৌঁছে দেয় জনক রাজার মহিষীর কাছে। এ যেন অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষের কুড়িয়ে পাওয়া সন্তানের উপর দেবীত্ব আরোপ করে তাঁকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা। তাই চন্দ্রাবতীর রামায়ণে সীতার প্রাধান্য, সীতার বারমাস্যার মধ্যে দিয়ে ‘দুঃখিনী সীতাকে’ উপস্থাপন করা হয়েছে। 
তিনি মহাকাব্যের রামায়ণকে নিয়ে এসেছেন পয়ার-পাঁচালীর ছন্দে আর বারমাস্যায় এনেছেন মঙ্গলকাব্যের মাধুরী। এখানেই অনন্য কবি চন্দ্রাবতী। ময়মনসিংহ গীতিকার শতবর্ষে আপন আলোয় উদ্ভাসিত কবি চন্দ্রাবতী নারীশক্তির মহাজাগৃতির প্রতীক হয়ে বর্তমান ও ভাবীকালের কবিদের জন্য প্রেরণা ও দ্যুতি ছড়িয়ে যাবেন। 

×