নিষেধাজ্ঞার মধুর হুঁশিয়ারি
বদরুল হায়দার
আলোদের সাথে দেখা হলে কালো রেখাগুলো মুছে যায়।
শরীর আগলে রাখে মহাজাতকের চোখ। তুমি
ভুলের কবুলে রহস্যের ফাঁকে খোঁজো নিরাময় রোগ।
শূন্য গোয়ালের দুধে সুদে আমি আত্ম প্রতিরোধে
প্রাকৃত মায়ার জালে খুঁজি তোমার বানানো অভিযোগ।
বীণাতারে বাজে না সেতার। হৃদয়ের কাঁটাতারে
অকাতরে বলী হয় পরাভয়। ঘরে ও বাইরে চলে
ভালোবাসার জয় পরাজয়।
ধরাশায়ী মনে বহুজনে আবেগ ও আপ্যায়নে তুমি
হৃদয়ের চোরাবাঁকে ভাসো রণাঙ্গনে। আমি
রংতুলির সবাকে চির প্রেমিকের ইতিহাসে নাম লিখি।
সমমনের বাগানে ফোটে পরজীবী অর্কিডের ফুল
তুমি আদায় উসুলে ইস্কাবিবির কৌশলে ছাড়ো
প্রি-পেইড ভুল।
দেখা না দেখার রেখা টেনে পালামন
বেদনার দরশনে হয় দরদাম। তোমার শখের
অভিমান মনপুড়ার আবেগে খোঁজে নিরাবেগ সমাধান।
আমি পাষাণ হৃদয়ে নিষেধাজ্ঞার মধুর হুঁশিয়ারি মেনে
যৌবনের কাছে নত এক ভাললাগা ব্যবধান।
*
দোলনা বিলের কাব্য
সোহেল মাজহার
বিমর্ষ ধানের স্মৃতি
মানুষকে তাড়া করবে,
তার করতলের ক্ষতচিহ্ন
রোদে পোড়া তামাটে শরীরের
ভাঙন, ভূমি ক্ষয়ের কারণে
তার বুকে নতুন করে পলি জমে
বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপের জন্ম হবে
এমন কোন কথা ছিল না।
তার শরীর ও নিঃশ্বাস থেকে
ধান পচা খড়ের গন্ধ
বাসি ভাতের নেশা ঘুম ছুটে গিয়ে
মাছের আঁশটে ঝাঁঝ
রক্ত আহত, লবণার্ত করে
তাদের ভুলিয়ে দেবে চিরতরে
দোলনা বিলের স্মৃতি
ফসলের অন্তরঙ্গ ঘুমের ওম
এমন কোন কথা ছিল না।
*
মহুয়ার ডাক এবং তারপর
রহমান মুজিব
মহুয়ার ডাক। রাত চিড়ে তার আগুনের শিস
নেমে আসে না ঘরে যদিও তারার কোরাস
শিলাখণ্ডে জবার ব্যর্থ মৈথুন শেষে মৈত্রীর লালট্রেন
অতিক্রম করে আপেল বাগান, শ্যাওলা জমা বুকে ভাসে
শহরের জলছাপ, চোখে জৈব রসায়নের কাইতন
কবে যে জীবন শুধু ফুর্তির নাও। জল হওয়ার পালে
তার মেঘের গ্রাম। হৃদয়ের নামে হেরে গেলে পাশা খেলায়
ভরে উঠে নিঃসঙ্গতায় খসে পড়া তারার অভিমান।
*
শেকড়
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান
বুকভরা নিঃশ্বাস টেনে অমন সবুজে
একদিনেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রঙচটা মুখখানি
বহুকাল কানে জমেছিল শহুরে হুইসল
নিয়ন আলোয় ম্লান থেকেছে জ্যোৎস্না ও চাঁদ
পাখি? কেবল পাড়াজুড়ে ছিল কা কা ডাক!
বধির হতে হতে খুব বেঁচে গেছি একদিন
এই গ্রাম, শত পাখির স্বাগত ভাষণ শেষে
অজানা এক বৃক্ষের প্রার্থনায় রোদ্দুরে
দেহে নেমেছে শৈশব কোমলতা
আর আমি যান্ত্রিক খোলস ছেড়ে
কৃষক হয়েছি গোপনে
এই নবান্নে আমার মুখেও জমেছে হাসি।
স্বপ্নের মতো দিন উড়ে যায় কোথাও
শহুরে আমি ফিরে আসি বাসের হুইসলে
ফিরে আসি নিয়ন আলোর নিচে চাঁদ রেখে
তখনো কৃষক মন রয়ে গেছে প্রান্তিক মাঠে
বুনে যাচ্ছে সবুজ, ছুঁয়েছে পাখি, শেকড়ের গান..
*
অনুজীব
দুলাল সরকার
বিশ্ব নির্মাণে অবদান রাখে প্রকৃতি বিধান
কখনো পেছনে ফেরা, সগতোক্তি পুরনো লেখায়
নতুন চিন্তার রেখা অভিধানে দেখবে জীবন
প্রাচীন পুঁথির অধ্যাদেশে গ্রন্থিত অতীত——
দেহের মনের ভাঁজে অনুজীব থেকে
প্রস্তর লিপির স্তরে অস্পস্ট লেখায় পথের সঞ্চয়
নিবিষ্ট পাঠক তুমি করে নিও সেসব কাহিনী
নিজের অভ্যাস মতো লিখে নিও অফুরাণ
প্রাণের বিষয়ে মোড়া প্রকৃতি বিধানে অঙ্কুরের স্নান;
ফিরে যায়, ফিরে আসে রক্তে রোয়া উৎসের বীজ
জীবন জানে না স্বয়ংক্রিয় বিধান সম্পর্কিত
আপাত দৃশ্যের মধ্যে মানুষের খুছরো জীবনে
প্রকৃতির হস্তক্ষেপে নতুন ভুবনে রয়েছে নিরাপদ স্বপ্নের গ্রাম।
*
যোগসূত্র
মাসুদ পথিক
সমস্ত রাস্তা পড়ে রইলো, তুমি পৌঁছে গেলে নদী তীরে
ঢেউ স্থির হয়ে বসে আছে, তুমি কি তার গভীরে
ডুবে দেখেছো? কার কি হারিয়েছে!
দূরত্ব, কীরূপে গন্তব্যের পথে থাকে বেঁচে?র্
তুমি এসবের কি কি নিলে? সমস্ত বৃক্ষ যায় না পোড়ে,
তবু, মাটিতে যায় মিশে
জগতের সমস্ত কথার থেকে তোমার প্রিয় কথা খুঁজে পেতে তুমিও কি নদীকে খেয়েছো গিলে?র্
অতীত কোনো রূপকথা, আজ মনে পড়ে, খুব একা হলে
তোমার নুনে ভেজা মা, ডুবে মরেছে, তোমাতেই নিহিত জলে
ফলে, ফলে সমস্ত রাস্তা পড়ে রইলো, নদী নিয়েছে বাঁক
অতীতের দিকে, গিয়েছে ঢেউ তুলে, থাক, স্মৃতি হয়ে থাকর্
আর নদী তীরে যারা যারা ফলায় ফসল- শস্যদানা ইতিহাসের
জেনে নিয়ো তুমি, জন্মান্তরে তুমিও তার হও কেউ বা শূন্য ও কাছের
*
অবস্থান
শেলী সেনগুপ্তা
ওরা একদিন বলেছিলো,
‘প্রতিবাদের ভাষা শেখো,
না হলে তুমিও আমাদের মতো
চলৎশক্তিহীন হবে’,
বলছি আমার আসবাবপত্রের কথা,
ওরা প্রাচীন অভিভাবকের কণ্ঠে
সচেতনতার গল্প বলেছিলো।
‘রুখে দাঁড়াও,
না হলে একদিন তুমিও পায়ে পায়ে
দলিত হবে বহুতলভবনের সিঁড়ি যেমন’,
নির্বিকার আমাকে দেখে
বিদগ্ধ আলোচনায় অংশ নিলো
পড়ার টেবিল এবং কম্পিউটার।
ছাদ বাগানের পাখিরা চটুল কণ্ঠে বললো,
‘ভালোবাসা ছাড়া কিইবা শিখেছো
সমাজের অচল মুদ্রা তুমি’,
নিরুত্তর আমাকে দেখে
সদ্য জল পাওয়া গুল্মগুলো বললো,
‘এভাবেই থাকো,
আপন আনন্দে বিভোর তুমি
আমাদের উজ্জীবিত করো,
কোলাহলমুখর অশান্ত সভ্যতায়
পাতার বাঁশি হও,
ওরা এগিয়ে যাক
তুমি নাহয় আলো জ্বালো
মশালধারী হয়ে’....
মাথা উঁচু করে আকাশ দেখছি,
আমি তো আমাকে দেখছি সপ্তর্ষীমণ্ডলের পাশে...
*
শেষ বিকালের ক্লান্ত সময়
ফখরুল হাসান
তুমি কাশফুল বনে আগুন লাগিয়ে
স্বপ্নের ভূমিতে স্থাপন করেছিলে
প্রণয়ের ফায়ার সার্ভিস ভবন।
স্বর্ণালি, যদি কখনো মনে হয়
পরন্ত বিকালে আঁধার নেমে এসেছে
তোমার খরস্রোতা নদী শুকিয়ে গেছে।
গোধূূলিলগ্নে বিরানভূমি বসতভিটা,
হারিয়ে গেছে শেষ আশ্রয়টুকু ও তাহলে
মনে গুচ্ছগ্রামে বসতি স্থাপন করে নিয়ো।
নদী কখনো জঙ্গল, কখনো গ্রাম, কখনো শহর,
সবার পাশ দিয়ে বয়ে যায়। তাই বলে কি?
তাদের কাছে নদীর মহিমা কমে যায়?
তোমার জন্য পুরুষোত্তমসত্তা নিয়ে অপেক্ষায়...।
স্বর্ণালি, এখনো তুমি নদীর মতো বয়ে যাও
মনের মৃত্তিকায় যান্ত্রিক সময়ে।
শীর্ষ সংবাদ: