ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সেঁজুতির উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৫৯, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সেঁজুতির উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা

সেঁজুতি জয়ী ভট্টাচার্য

বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিগামিতায় সমসংখ্যক নারীর এগিয়ে চলা আধুনিক সময়ের নির্মাল্য। গৃহলক্ষ্মীর আদলে সংসার চালানোই যাদের নিত্য জীবন তারা আজ সেখান থেকে বের হয়ে পেশাগত পর্যায়ে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্যে তাদের উদাসীনতা চোখে পড়ার মতো ছিল কোনো এক সময়। সেখানে আজ তাদের বাণিজ্যিক কর্মযোগ সত্যিই চমকপ্রদ। সেঁজুতি জয়ী ভট্টাচার্য এক উদীয়মান উদ্যোক্তা যিনি কি না আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে পেশাগত অবস্থানকে সাধ্যমতো চালিয়ে নিচ্ছেন।

প্রসঙ্গ ক্রমে পেছনের গল্পও এসে যায়। ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের কন্যা সেঁজুতি। জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই রাজধানীকেন্দ্রিক। পিতা কৃষ্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য। মাতা মিলি চক্রবর্তী। বাবা পেশাগত জীবনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। আর মা লক্ষ্মী প্রতিমার মতো সুগৃহিণীর মর্যাদায় সন্তান মানুষ করা থেকে পারিবারিক দায়-দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন করে যাচ্ছেন। পিতার কর্মযোগ এনজিও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই।

সেখানে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে শিশুদের শিক্ষার আলোকে তৈরি করতে প্রাতিষ্ঠানিক সার্বিক দায়িত্ব পালন করে যান। শুধু তাই নয় প্রতিবন্ধী শিশুসহ নারীবান্ধব এক বেসরকারি কর্মপ্রবাহ। যেখানে এনজিওর আর্থিক সহায়তায় সব ধরনের কর্মযোগ এগিয়ে যায়। দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করে তাদের দক্ষ করে তোলা হয়। যাতে সেলাইয়ের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সাবলীলভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়। আর কন্যা সেঁজুতি?

এমন সচেতন মানবিক নারীঘনিষ্ঠ কর্মযোগ দেখতে দেখতে পিতার প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধায় সেঁজুতির যে জীবন গড়া তাও কন্যার নিঃশর্ত সমর্পণই বলা যায়। মুগ্ধতার বিস্ময়ে তেমন গল্পে মশগুল হলেন পিতৃভক্ত কন্যা। নিয়ে আসলেন নিজেকে তৈরি করার অনন্য পালাক্রম। মেয়ে হিসেবে নয় শুধু বরং পরিপূর্ণ এক মানুষ গড়ার অনন্য চিত্র আজও উদ্বেলিত করে দেয়। শিক্ষা  জীবন ও চালিত হয় স্বাচ্ছন্দ্যে, সাবলীল গতিতে। মিরপুর বিসিআইসি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন।

পরবর্তীতে পড়াশোনা করেন রাজধানীর স্বনামখ্যাত কলেজ হলিক্রসে। সেখান থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক করে ভর্তি হলেন ঢাকা সিটি কলেজে। হিসাববিজ্ঞান বিভাগে সম্মান নিয়ে ¯œাতক আর ¯œাতকোত্তর করা শিক্ষা জীবনকে নানামাত্রিকে ভরিয়ে তোলা। তার মধ্যে ঘটে যায় জীবনের আর এক মহাযোগ। এমএ শেষ পর্বে কনের সাজে বিয়ের পিঁড়িতে বসা যেন নতুন জীবনের অনন্য দোলা। স্বামী তন্ময় চক্রবর্তী পেশায় আইনজীবী। হাইকোর্ট, জজকোর্টে সমান ভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

তবে স্বামী সবচেয়ে বেশি দায়বদ্ধ তার জীবন সঙ্গিনী সেজুঁতির প্রতি। যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে, অবলীলায় স্বীকার করতে এতটুকু কার্পণ্য করলেন না। শিক্ষা জীবনের বাকি পর্ব ও বিয়ের পরই সম্পন্ন করেছেন স্বামীর নিরন্তর সাহায্য সহযোগিতায়। তবে তারা দুজনেই প্রাতিষ্ঠানিক কর্মযোগের বাইরে গিয়ে নিজেরা অন্যভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজতে থাকেন। পেয়েও গেলেন। দ্বৈত সম্মিলনে শুরু করলেন প্রযুক্তির আঙিনায় ব্যবসায়িক কর্মদ্যোতনা। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের আওতায় বৈচিত্রিক পোশাকের সাড়ম্বরে সাজিয়ে নিলেন তাদের নতুন বাণিজ্যিক কর্মপ্রকল্প।

তবে গ্রাহকদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে সময়ও লেগেছে প্রচুর। কিন্তু দমে যাননি কেউই। সমানে এগিয়ে যাওয়ার নিরন্তর কর্মপ্রচেষ্টায় পেছন ফিরে তাকালেন না পর্যন্ত। আস্তে আস্তে সফলতার দর্শন জীবনের অনন্য প্রাপ্তি। সেঁজুতি মূলত কাজ করেন ঐতিহ্যিক বাঙালি শাড়ির সম্ভার নিয়ে। যা দেশ-বিদেশের চাহিদায় সমানভাবে অবদান রাখে। দেশজ চমকপ্রদ শাড়ির রং-তুলিতে আঁকা নকশাসহ বুটিকের কারুকার্যখচিত নয়নাভিরাম শৈল্পিক বুনন যেন আবহমান বাংলা ও বাঙালির বয়নশিল্পের অভাবনীয় শৌর্য।

সেখানে দেশজ তাঁতশিল্প রাজশাহীর রেশম শিল্পের মিহি সিল্ক শাড়ির অনবদ্য আকর্ষণ গ্রাহকদের সত্যিই দারুণভাবে  উদ্বেলিত করে। দেশীয় ঐতিহ্যের এমন  নজরকাড়া বস্ত্রশিল্পের  কদর সেই যুগ-যুগান্তরের পরম নির্মাল্য। যা আধুনিকতাও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বেগবান হয়েছে। কিন্তু নিজস্ব বৈভবের বিন্দুমাত্র স্খলন ঘটায়নি। আগে হস্তচালিত শিল্পগুলো এখন কারখানার গতিময় বেগে ছুটে চলে। কম  সময়ে বেশি উৎপাদন বাণিজ্যিক সক্ষমতার আর এক মাত্রা  তো বটেই।

তবে সেঁজুতি অনুপ্রেরণায় অনেক নবীন উদ্যোক্তা সংশ্লিষ্ট  ব্যবসাকে বিবেচনায় এলে নিজেরাও তৈরি হতে এগিয়ে যাচ্ছেন। যা  সেঁজুতিকে অনেক বেশি আনন্দ আর গতিময়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। জীবনাচরণের চমকৃত পোশাক সম্ভার নতুনভাবে সাজানো-গোছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে সেঁজুতির ফেসবুক পেজে। বাংলার বয়নশিল্পে জামদানির খ্যাতি বহুকালের। তেমন খ্যাতিময় ভুবন সময় ও যুগের চাহিদায় সম্প্রসারিত হতে খুব বেশি দেরি লাগছে না। মেয়েদের জন্য থ্রি পিসের সুব্যবস্থাও রাখা হয়েছে অনলাইন এমন কার্যক্রমে।

দোকানে বসে বিকিকিনি আর অনলাইনে বেচাকেনা কিন্তু এক রকম নয়। চোখের সামনে দেখে-শুনে যা সহজে যাচাই-বাছাই করে আস্থা-বিশ্বাস অর্জনে খুব বেশি বেগ পেতেই হয় না। কিন্তু প্রযুক্তির আঙিনায় সেখানে ধীরগতি, আস্থার সংকট সবই যেন ঘিরে ধরে। সময়ের অপব্যয় হয় প্রচুর। প্রতিষ্ঠাও সহজে হাতের মুঠোয় ধরা দেয় না। ধৈর্য আর অপেক্ষা করা ছাড়া আসলে ভিন্ন কোনো পথই নেই।

তবে পণ্যের মানের দিকে নজর দিতে হয় অনেক বেশি। সেখানে গাফিলতি কিংবা অবহেলা করার কোনো জায়গাই থাকে না। এমনও হয় পণ্য যদিও বা কিছু খারাপ থাকে দামে কম হলে সেটা আবার বিক্রিও করা যায় বেশি তাড়াতাড়ি। তবে সেঁজুতি চান ভালো টেকসই পোশাক যার মূল্য বেশি হলেও সেটাই তার ব্যবসার মোড় ঘোরাবে আর ফেরাবেও। তেমন সুদিনের আশায় সেঁজুতি অপেক্ষা করছেন। 

অপরাজিতা প্রতিবেদক

×