ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটে পর্যটক সংকট, হরতাল অবরোধকেই দায়ী ব্যবসায়ীদের

বদরুল ইসলাম, সিলেট

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

সিলেটে পর্যটক সংকট, হরতাল অবরোধকেই দায়ী ব্যবসায়ীদের

ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র

পাহাড়, প্রকৃতি আর পর্যটনে ঘেরা সিলেট। আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরান (র.) এর মাজারসহ ৩৬০ আউলিয়া শুয়ে আছেন। এখানকার ছোট-বড় পাহাড়. টিলা, চা-বাগান, বনবনানী, হাওর, মাছ, শীতের পাখি নানা জীববৈচিত্র্য, বিছানাকান্দি, সাদা পাথরের মতো নয়নকাড়া পর্যটন স্পট দেখতে শীতে পর্যটক সমাগম ঘটে বেশি।

সেই হিসেবে বলা যায়- অপার সৌন্দর্যের এক অনন্য ভূমি।ঋতুগত পরিবর্তন যেমন প্রকৃতিকে আকর্ষিক করে তুলে ঠিক তেমটাই আকর্ষিত করে পর্যটন স্পট গুলোকে। বিশেষ করে শীতের মৌসুম অপরূপ নান্দনিকতা নিয়ে ফিরে পর্যটনগুলো। অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসেন দেশ বিদেশের পর্যটকরা। জমে উঠে ব্যবসা বাণিজ্য। পর্যটনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হলেও এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।পর্যটনকেন্দ্রীক ব্যবসা বাণিজ্যেরও বেহাল দশা।আর তার জন্য চলমান হরতাল অবরোধকেই দায়ি করছেন ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনতা।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের এ সময় থেকেই পর্যটননগরী সিলেট এর পর্যটন স্পটগুলোতে ভিড় করতে শুরু করেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। কিন্তু হরতাল ও অবরোধের কারণে এবার পর্যটনগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসার জন্য গণপরিবহন না পাওয়া ও রাস্তাঘাটে সংঘাত-সংঘর্ষের ভয়ের কথা চিন্তা করে মানুষ পর্যটনমূখী হচ্ছে না।বিশেষ করে অবরোধে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সিলেটে পর্যটক আসা কমে গেছে।এতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র জাফলং, সারি নদী, লালাখাল, তামাবিল, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, বিছনাকন্দি, পান্থুমাই জলপ্রপাত, মিঠাপানির জলাবন রাতারগুল, ওসমানী শিশু পার্ক, ড্রিমল্যান্ড, টিলাগড় ইকোপার্ক প্রায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। পর্যটক কম থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটনকেন্দ্রিক দোকানপাটের ব্যবসায়ীরা।

শহর এবং পর্যটনকেন্দ্রিক হোটেল-মোটেলেরও মন্দা অবস্থা। যেখানে শীত মৌসুম এলে পর্যটকদের ভিড়ে আগে থেকেই হোটেল বুকিং দেওয়া হত, সেখানে অহরহ সিট খালি পড়ে থাকে। সড়কের পাশে সন্ধ্যায় ‘চিতই পিঠা’ ও ‘ভাপা পিঠা’র দোকানগুলোতে যেখানে  লাইন পড়তো- সেখানে অনেকটাই নিরবতা। 

শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে বিছানাকান্দি ও সাদা পাথর এলাকায় পাহাড়ি পানির প্রবাহ কমে গেলেও হিমশীতল পানির স্পর্শ আনন্দ দেয় । আসাম-মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার কল কল শব্দও হ্রাস পেলে মেঘহীন আকাশে এর সৌন্দর্য আরো স্পষ্ট। কিন্তু উপভোগের লোক নেই। চারদিকে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা।

পর্যটন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘বিগত বছর মরণব্যাধি করোনা। তার পর ভয়াবহ বন্যায় বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসায় যে থাবা পড়ে, তা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এখন হরতাল, অবরোধ আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে,’ এই মন্তব্য করে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা লাখ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে এখন অন্ধকার দেখছি। ব্যাংক ঋণ শোধ করব কীভাবে সেই চিন্তায় ঘুম হয় না। নিত এনে নিত খাওয়া ব্যবসায়ীরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। 

‘যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখানে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য আজও সেভাবে গড়ে উঠছে না। সঠিক উদ্যোগ নিলে বছরে এখানে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে,’ বলেন, পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন সময় সরকারি ছুটি উপভোগ করতে সিলেটে নানা বয়সের অন্তত ৫০ হাজার পর্যটক সমাগম ঘটে সিলেটে। তিল ধারণের ঠাই হয় না নগরীর হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউজগুলোতে। আর যারা আগে থেকে হোটেল বুকড না করে আসেন তাদের দুর্ভোগে পোহাতে হয়। 

‘কক্সবাজারের পরেই সিলেটে পর্যটক সমাগম ঘটে বেশি’ বলেন, সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স গ্রুপের সভাপতি এ টি এম সোয়েব আহমদ। তিনি বলেন ‘সিলেট  প্রকৃতির অপার দান। মেঘালয় পাহাড় ও চেরাপুঞ্জির পাদদেশের এই জনপদে সঠিক উদ্যোগ নিলে আগামীতে পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থান হবে। 

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিকাশে সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনাময় খাত।’

 

 এসআর

×