ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতাধর সেরা ১০ নারী ॥ ২০১৭

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

ক্ষমতাধর সেরা ১০ নারী ॥ ২০১৭

বর্তমান সময়টা নারীর ক্ষমতা উন্নয়ন পর্ব। রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান গণমাধ্যম, জনকল্যাণসহ সব জায়গাতেই এখন নারীরা পুরুষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছে নারীরা। নারীর এই ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ফোর্বস ম্যাগাজিন’ ১০০ নারীর তালিকা তৈরি করে থাকে। যা তাদের বিবেচনায় বিশ্বের ক্ষমতাধর নারী। ২০১৭ সালের ১০০ নারীর মধ্যে প্রথম ১০ জনের তালিকা। লিখেছেনÑ শহিদুল ইসলাম এ্যাঙ্গেলা মার্কেল ২০১৭ সালের ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে এ্যাঙ্গেলা মার্কেল একেবারে শীর্ষে। গত এক যুগ ধরে তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তিনি দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপ্রধান। তার দৃঢ় নেতৃত্ব। অর্থনৈতিক সংস্কার এবং অভিবাসী সমস্যার সমাধানে বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য তাকে ‘ডিফ্যাক্টো লিডার’ বলা হয়। বস্তুগত রসায়নে ডক্টরেট ডিগ্রীধারী এ গবেষক রজনীতিতে যোগ দেন ১৯৮৯ সালে। ১৯৯১ সালে তিনি নারী ও যুব মন্ত্রণালয় এবং ১৯৯৪ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০০ সালে তিনি তার দল সিডিইউয়ের প্রধান পদ লাভে আসীন হন। ২০০৫ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে সরকার গঠন করেন। এরপর ২০০৯, ২০১৩ সালেও তিনি জয়ী হয়ে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি এ পর্যন্ত দশবার ফোর্বসের জরিপে ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক ‘পার্সন অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। টাইম ম্যাগাজিন তাকে চ্যান্সেলর অব দ্য ফ্রি ওয়ার্ল্ড উপাধিতে ভূষিত করে। টেরেসা মে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। ব্রেক্সিট বিতর্কে অত্যন্ত কঠিন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং আগাম নির্বাচনের আয়জন করে তিনি বার বার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। কিন্তু সব চ্যালেঞ্জকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করে তিনি এখনও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বৃটেনের এই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেরেসা মে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচারের পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে দেশটির সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিস্ময়করভাবে তিনি সারাবিশ্বের নারী ক্ষমতাধরদের মধ্যেও ২য় স্থানে চলে আসলেন যা তাঁকে এক অনন্য সম্মানে অভিষিক্ত করে। মেলিন্ডা গেটস তিন নম্বর অবস্থানে রয়েছেন। বিল গেটের স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস। তার বর্তমান বড় পরিচয় তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থা বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি। বিশ্বব্যাপী জনকল্যাণ কাজের জন্য এর আগেও তিনি ফোর্বসের জরিপে দশে স্থান নিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি এবং বিল ক্লিনটন টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে পার্সন অব দ্য ইয়ার হয়েছিলেন। এ বছর ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ তাকে এবং বিল ক্লিন্টনকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার ‘লেজিয়ন অব অনার’-এ ভূষিত করেছিলেন। শেরিল স্যান্ডবার্গ চতুর্থ নম্বরে আছেন শেরিল স্যান্ডবার্গ। তিনি বর্তমানে বিশ্বের ব্যবসায়িক জগতের সবচেয়ে প্রভাবশালী একজন। এর আগে তিনি গুগলের অনলাইন সেলস এ্যান্ড অপারেশন বিভাগের সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফেসবুকের চীফ অপারেটিং অফিসার। ২০০৮ সালে তিনি এ পদে বহাল আছেন। সফলভাবে বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফেসবুককে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ব্যাপারে তার অবদান আছে। ২০১২ সালে তিনি নারী হিসেবে প্রথম ফেসবুকের পরিচালনা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি একসঙ্গে একজন নারী অধিকার কর্মীও। ম্যারি বারা ম্যারি বারার অবস্থান পঞ্চম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মোটরস কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং সিইও। ২০১৪ সালে সিইওএর দায়িত্ব পাওয়া ম্যারি বারা ছিলেন মোটরগাড়ি শিল্পের প্রধান কোম্পানির মধ্যে প্রথম নারী সিইও। সিইও হওয়ার আগে তিনি কোম্পানিটির ক্রয় এবং সরবরাহ বিভাগের সহসভাপতি ছিলেন। ফোর্বসের জরিপে তিনি এ পর্যন্ত ছয় বার স্থান পেয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি ২০১৫-১৬ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের জরিপে ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। সুজান ওইচিজকি ছয় নম্বর অবস্থানে আছেন সুজান। সুজান বিশ্বের জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ২০১৪ সাল থেকে তিনি এই পদে বহাল আছেন। গুগলের জন্মলগ্ন থেকেই কোম্পানিটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যে গ্যারেজটিতে গুগলের জন্ম হয়। সেই গ্যারেজটি ছিল সুজানের। তিনি গুগলের প্রথম মার্কেটিং ম্যানেজার ছিলেন। সুজানের পরামর্শ অনুযায়ীই গুগল ইউটিউব কিনেছিল। ২০১৫ সালের টাইম ম্যাগাজিনে তাকে ইন্টারনেটের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ্যাবিগেইল জনসন ২০১৭ সালের ফোর্বসের জরিপে এ্যাবিগেইলের অবস্থান সপ্তমে। তিনি একজন মার্কিন ব্যবসায়ী। তিনি মার্কিন বিনিয়োগকারী সংস্থা ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্টসের সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী নারী। যার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৪শ’ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৪ সাল থেকে তিনি ফোর্বসের জরিপে স্থান পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এবারই প্রথম সেরা দশে স্থান পেয়েছেন। ক্রিস্টিন লাগার্দ ক্রিস্টিন আছেন, অষ্টম স্থানে। তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বিভিন্ন সময় ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালে প্রথম ৫ বছরের জন্য নিযুক্ত হলেও পরবর্তীতে ২০১৬ সালে তাকে আরও ৫ বছরের জন্য আইএমএফের এমডির দায়িত্ব দেয়া হয়। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ২০০৯ সালে তাকে ইউরো জোনের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী হিসেবে স্থান দেয়। এ্যানা প্যাট্রিশিয়া বটিন প্যাট্রিশিয়া বটিনের অবস্থান নবমে। তিনি একজন স্প্যানিশ ব্যাংকার। ২০১৪ সাল থেকে তিনি স্যানট্যান্ডার গ্রুপের নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ইউরোজোনের প্রথম নারী, যিনি প্রধান কোন ব্যাংকের শীর্ষ পদের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৫ সালে ফোর্বস জরিপে তিনি ৯৯তম অবস্থানে ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি ৪৫তম এবং ২০১৬ সালে ১০ম স্থানে উঠে আসেন। এ ছাড়া বিবিসির রেডিওর উইমেন্স আওয়ার অনুষ্ঠানে তাকে ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের তৃতীয় ক্ষমতাধর নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জিনি রমেটি জিনি রমেটির অবস্থান দশমে। তিনি বিখ্যাত কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইবিএমের সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রথম নারী প্রধান। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি আইবিএমের সঙ্গে জড়িত আছেন। ২০১২ সালে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে তিনি দীর্ঘদিন ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। ফরচুন ম্যাগাজিন ২০১৫ সালে তাকে ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় তিন নম্বরে স্থান দিয়েছিল। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১৪ সালের তালিকায়ও তিনি দশম ক্ষমতাধর নারী হিসেবে স্থান পেয়েছিলেন।
×