ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গঠনতন্ত্রে গৃহীত

মাওয়ের পর শি চিন্তাধারা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

মাওয়ের পর শি চিন্তাধারা

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রাজনৈতিক চিন্তাধারা পার্টি গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। এর মধ্য দিয়ে মাও সেতুংয়ের পর সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তিনি আত্ম প্রকাশ করলেন। এএফপি ও বিবিসি। আধুনিক চীনের নেতা মাও সেতুংয়ের চিন্তাধারা এতদিন অনুসরণ করত চীনের কমিউনিস্ট পার্ট। শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারা গঠনতন্ত্রে যুক্ত হলে মাওসেতুং ও দেংজিয়াও পিংয়ের পাশাপাশি তার নামও উল্লেখ করা হবে। ২০১২ সালে পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন শি। তখন থেকে দলের ওপর ক্রমেই তার প্রভাব বাড়ে। পরের বছর তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। মঙ্গলবার পার্টি কংগ্রেস শেষ হওয়ার আগে শি’র চিন্তাধারাকে পার্টি গঠনতন্ত্রে স্থান দেয়ার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। দুই হাজারের বেশি প্রতিনিধির অংশগ্রহণে পার্টি এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গত সপ্তাহে শি’র সাড়ে তিন ঘণ্টার ভাষণের মধ্য দিয়ে ১৯তম কংগ্রেস শুরু হয়। ওই ভাষণে তিনি ‘নতুন যুগে সমাজতন্ত্রের’ কথা তুলে ধরেন। চীনের বিশেষত্বকে বিবেচনায় নিয়েই এই চিন্তাধারা তিনি তুলে ধরেন। এ থেকে ধারণা পাওয়া যায় দলের মধ্যে এখন শি’র নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিবিসি চায়নার সম্পাদক কারি গ্রেসি বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্রে ‘শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারা’ যুক্ত করায় তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা এখন কমিউনিস্ট পার্টির শাসন হুমকির মুখে ফেলা ছাড়া অন্য কোনভাবে শি’কে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন না। এছাড়া এখন থেকে শি’র প্রতি কোন হুমকি পার্টির প্রতি হুমকি হিসেবে গণ্য হবে। এর আগেও অনেক নেতা নিজেদের চিন্তাভাবনা পার্র্টির গঠনতন্ত্রে ঢুকিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালে একমাত্র মাও ছাড়া আর কারো চিন্তাধারা ‘তাত্ত্বিক ভিত্তি’ হিসেবে স্থান পায়নি। দেং জিয়াওপিংয়ের চিন্তাধারা ঠাঁই পায় তার মৃত্যুর পর। বুধবার কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পলিট ব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির নাম ঘোষণা করবে। চীনের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর এই কমিটিই আগামী পাঁচ বছর দেশ শাসন করবে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য সংখ্যা ৯ কোটি। শি’র থট বা চিন্তাধারা অধ্যয়ন করার জন্য স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং রাষ্ট্রীয় কলকারখানার শ্রমিকদের এখন এতে যোগ দিতে হবে। এখানে যে নতুন যুগের কথা বলা হয়েছে সেটি আধুনিক চীনের তৃতীয় অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় শুরু করেন মাও। তিনি গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। এরপর দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেন দেং জিয়াওপিং। এরপর নতুন যুগের সূচনা করলেন শি। এটি ঐক্যবদ্ধ ও সমৃদ্ধ চীনের ভবিষ্যত যাত্রা নিশ্চিত করবে। শি’র পাঁচ বছরের শাসনামলের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা যায়। প্রথমত তিনি এ সময় চীনের স্বার্থ দেশের বাইরে সম্প্রসারিত করেছেন। দ্বিতীয়ত তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথ বা নি¤œমুখী হয়ে পড়লে ওই অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়ার কৌশল দেখিয়েছেন। তৃতীয়ত প্রশাসনের সর্বস্তর থেকে দুর্নীতিবাজদের বিদায় করার উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন। চতুর্থত হংকংয়ের ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সর্বশেষ তার সময়ে গৃহীত উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হলো এক সন্তান নীতির অবসান ঘটানো। কমিউনিস্ট পার্টির মূলনীতিতে ১৪টি আদর্শের কথা বলা হয়েছে। শি’ এতে সংস্কার আনার এবং এগুলো নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনটি আনতে চেয়েছেন তা হলো পিপলস আর্মির ওপর কমিউনিস্ট পার্টির নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। হংকং ও তাইওয়ানের নাম উল্লেখ না করে এতদিনের চলে আসা ‘একদেশ দুই নীতি’র পাশাপাশি শি এখন ‘মূল ভূখ-ের সঙ্গে একত্রীভূত হওয়ার’ কথা বলেছেন।
×