সিরিয়ার অবরুদ্ধ শহরগুলোতে মানবিক সহায়তা পাঠাতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। ত্রাণ পৌঁছে দিতে ১ জুনের সময়সীমা মেনে চলতে চলতে ব্যর্থতার জন্য দেশগুলো দামেস্ক সরকারের সমালোচনা করেছে। আঞ্চলিক ও বিদেশী শক্তিগুলোর মধ্যস্থতায় ওই সময়সীমা মেনে নিতে আসাদ সরকার এর আগে রাজি হয়েছিল। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের।
জানা গেছে, রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী ছোট শহর দারায়ায় বুধবার একটি সীমিত পরিমাণ ত্রাণ পৌঁছাতে দেয়া হলেও কোন খাদ্য সেখানে পাঠানো যায়নি। আসাদ বাহিনীর অবরোধের ফলে মানবিকভাবে চরম দুর্দশাগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) বিমান থেকে ত্রাণ নিক্ষেপ করা হবে কী না তা নিয়ে আলোচনা করতে নিরাপত্তা শুক্রবার বৈঠকে বসবে। বুধবার দারায়া শহরে আন্তর্জাতিক ও সিরিয়ান রেড ক্রস সোসাইটির ত্রাণবাহী গাড়ি ঢুকতে দেয়াকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া। ২০১২ সালের নবেম্বরের পর শিশু খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে এই প্রথম সেখানে ত্রাণবহর গেল। শিশুদের জন্য গুঁড়ো দুধ ছাড়া অন্যকোন খাদ্য নিয়ে যাওয়া হয়নি। আইসিআরসির মুখপাত্র পাওয়েল ক্রিজিয়েসিক বলেন, যদিও তারা খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অবরুদ্ধ শহরটিতে যাননি তা সত্ত্বেও নগরবাসী তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। তিনি বলেন, শহরের লোকজন ক্ষুব্ধ ছিল না। তারা শান্তভাবে ত্রাণকর্মীদের স্বাগত জানিয়েছে। এপ্রিল মাসে জাতিসংঘ জানিয়েছিল দারায়ার শহরতলী এলাকার অন্তত চার হাজার বাসিন্দাকে আসাদ বাহিনী চার বছর ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার অভাবে তারা চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে বিদ্রোহী অবরুদ্ধ দারায়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় মুয়াজামিয়া শহরতলী এলাকাতেও বুধবার রেডক্রসের ত্রাণবাহী গাড়ি পৌঁছেছে। তিন বছর ধরে শহরটির বিদ্যুত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জাতিসংঘের জরুরী ত্রাণ সমম্বয়কারী স্তেফান ও ব্রিয়েন এপ্রিলে বলেছিলেন, ‘অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছে দিতে অসংখ্যবার অনুরোধ করা হলেও আসাদ সরকার তাতে কান দেয়নি।’ সেভ দ্য চিলড্রেন ইন সিরিয়ার প্রধান সোনিয়া খুশ দারায়ায় ত্রাণ বহর ঢুকতে দেয়াকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে দেখলেও খাদ্যবাহী ট্রাককে সেখানে যেতে বাধা দেয়াকে তিনি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কারবি বুধবার বলেছেন, সিরিয়ার লাখ লাখ মানুষের এখন ‘নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণ‘ ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। এদিকে পূর্বসম্মত সময়সীমা অনুযায়ী সিরিয়ায় ত্রাণ পৌঁছাতে ব্যর্থতার জন্য ইন্টারন্যাশনাল সিরিয়া সাপোর্ট গ্রুপের (আইএসএসজি) সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড। তিনি বলেছেন, ‘বিমান থেকে ত্রাণ নিক্ষেপ করা একটি জটিল, ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। অবরুদ্ধ এলাকার বিপদগ্রস্ত লোকজনকে বাঁচাতে এটি শেষ উপায়।’ ১৭টি দেশ ও আরব লীগ, ইইউ ও জাতিসংঘের মতো সংস্থার সমম্বয়ে গঠিত আইএসএসজির যৌথ সভাপতিত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।
দারায়ায় মানবিক সাহায্য দিতে ৪৮ ঘণ্টা বিরতি দিতে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাশিয়ার সমঝোতা হয়েছে বলে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় বুধবার জানিয়েছে। অবরুদ্ধ এলাকায় ত্রাণ পৌঁছতে আসাদ সরকারকে রাজি করাতে রাশিয়া ও ইরানকে নিজেদের প্রভাব খাটাতে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। উল্লেখ্য, রাশিয়া ও ইরানই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। জাতিসংঘ মনে করে, সিরিয়ার দুর্গম অঞ্চলগুলো প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ বসবাস করে।