ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে যোগব্যায়াম

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৪ মার্চ ২০২৪

রমজানে যোগব্যায়াম

.

আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় সারা পৃথিবীতে সুস্থ থাকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা নিজেকে সুস্থ আর সুন্দর রাখতে প্রতিদিন কিছু ইয়োগা এক্সারসাইজ করে থাকি। তবে রোজার মাসে যেহেতু আমরা সারাদিন ফাস্টিং বা উপবাস অবস্থায় থাকি, তাই সময় বছরের অন্যান্য দিনগুলোর মতো ঘাম ঝরিয়ে ইয়োগা করার দরকার হয় না।

কেননা রোজা নিজেই একটি থেরাপি, অর্থাৎ সঠিক নিয়ম মেনে রোজা রাখলে প্রাকৃতিকভাবেই শরীর থেকে দূষিত ময়লা-আবর্জনা বেরিয়ে যায়। তবে রোজার সময় কিছু সহজ ইয়োগা এক্সারসাইজ করলে রোজা থাকা অবস্থায় আমাদের শরীরের ক্লিনিং প্রসেস বা শরীরের ময়লা পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া সহজ হয় পাশাপাশি সারাদিনের রোজার ক্লান্তি কম অনুভূত হয় এবং দিনের কাজকর্ম আনন্দময় হয়। রোজা রেখে সহজে করা যায় এমন দুইটি ইয়োগা এক্সারসাইজ সম্পর্কে জানাচ্ছেন কনসালটেন্ট অ্যান্ড ট্রেইনার অব ন্যাচারোপ্যাথি অ্যান্ড ইয়োগা- ঐন্দ্রিলা আক্তার ইয়োগা থেরাপির অন্যতম একটি শাখা হলো প্রাণায়াম বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ। নাড়িশুদ্ধি প্রাণায়াম এবং ভ্রামরি প্রাণায়াম এই দুটি প্রাণায়াম রোজার মাসে প্রতিদিন সকালে করলে ফুসফুস, হার্টসহ শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ভালো থাকে।

নাড়িশুদ্ধি প্রাণায়াম করার নিয়ম

- পিঠ, ঘাড়, মাথা সোজা রেখে ইয়োগাম্যাট বা মাদুর অথবা চেয়ারে বসতে হবে।

- চোখ বন্ধ করে প্রথমে ছয়বার স্বাভাবিক শ্বা-প্রশ্বা নিব।

-এবার বাম হাত হাঁটুর ওপরে রাখব এবং ডান হাতের তর্জনী এবং মধ্যমা আঙ্গুল গুটিয়ে থাকবে আর বৃদ্ধাঙ্গুল, অনামিকা এবং কনিষ্ঠ আঙ্গুল খোলা থাকবে।

- প্রথমে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ডান নাসারন্ধ্র (নাকেরছিদ্র) বন্ধ করে বাম নাক দিয়ে শ্বা ছাড়ব, এরপর বাম নাসারন্ধ্র দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বা নিয়ে অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে বাম নাসারন্ধ বন্ধ্র করব।

- এখন ডান নাসা রন্ধ্র দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বা ছেড়ে আবার এই নাসারন্ধ্র দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বা নিব।

এভাবে দুই নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বা ছাড়া এবং গ্রহণ করার মাধ্যমে এক রাউন্ড নাড়িশুদ্ধি প্রাণায়াম সম্পন্ন হয়। এই নিয়মে ছয়, দশ, বারো, ষোলো এমনকি ত্রিশ রাউন্ড পর্যন্ত করা যায়।

উপকারিতা

- ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

- সর্দি, ঠান্ডা, কাশি, হাঁপানি, সাইনোসাইটিস ইত্যাদি রোগ সারাতে উপকারী।

- শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ভালো রক্ত চলাচল হতে সাহায্য করে।

- শক্তি বাড়ায়।

- স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে।

- ওজন কমাতে সাহায্য করে, কারণ এই প্রাণায়াম করলে মেটাবলিজম ভালো হয়।

- শরীরের অতিরিক্ত তাপ কমায়।

- মানসিক চাপ কমায়।

- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ভ্রামরি প্রাণায়াম করার নিয়ম

- পিঠ, ঘাড়, মাথা সোজা রেখে ইয়োগাম্যাট বা মাদুর অথবা চেয়ারে বসতে হবে।

- চোখ বন্ধ করে প্রথমে ছয়বার স্বাভাবিক শ্বা-প্রশ্বা নিব।

- এবার হাতের তর্জনী আঙ্গুলগুলো দিয়ে দুই কান বন্ধ করব এবং বাকি চার আঙ্গুল গুটিয়ে রাখব। কান এমনভাবে বন্ধ করব যাতে বাইরের কোনো শব্দ কানে না ঢোকে।

- এবার দুই নাসারন্ধ্র দিয়ে ধীরে ধীরে বুক, পেট ভরে শ্বা নিব।

- এখন শ্বা ছাড়ব এবং শ্বা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গলা দিয়ে ভ্রমর ডাকে এমন শব্দ করে পুরো শ্বা ছাড়ব।

এভাবে করলে এক রাউন্ড ভ্রামরি প্রাণায়াম হলো। এই নিয়মে ছয়, দশ, বারো, ষোলো এমনকি ত্রিশ রাউন্ড পর্যন্ত করা যায়।

উপকারিতা

- মানসিক চাপ এবং মনের চঞ্চলতা কমায়।

- স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।

- দুর্বলতা কমায়।

- ভালো ঘুম হয়।

- মাইগ্রেন এবং সাইনোসাইটিস রোগে উপকারী।

- উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী।

- থাইরয়েড রোগীদের জন্য উপকারী।

রোজার এই মহিমান্বিত মাসে রোজা রেখে শরীর-মন-আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য নাড়িশুদ্ধি এবং ভ্রামরি প্রাণায়াম বেশ সহায়ক এবং উপকারী হতে পারে সবার জন্য।

×