ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সারতাজ আলীম

গোয়েন্দা চরিত্রের বরপুত্র

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ৫ নভেম্বর ২০২০

গোয়েন্দা চরিত্রের বরপুত্র

জেমস বন্ডকে বলা হয় প্রতিটি পুরুষের মধ্যে আজন্ম লালিত স্বপ্নের সমন্বয়। দুর্ধর্ষ এই স্পাই চরিত্র একটা চরিত্রের থেকেও বেশি কিছু। অনবদ্য এই চরিত্রের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা দুনিয়ায় নতুন এক ধারা শুরু করে বন্ড। বইয়ের গণ্ডি ছাপিয়ে নামটা হয়ে উঠল একটা ব্র্যান্ড, একটা লাইফস্টাইল, একটা আইকন। জেমস বন্ডের সংস্থা স্যার ইয়ান ফ্লেমিং নিজেও এতটা আশা করেনি। বন্ডকে আইকন করার সব থেকে বড় ভাগিদার রুপালি পর্দায় অভিনয় করা প্রথম বন্ড শন কনেরি। মজার ব্যাপার তাকে অবশ্য ইয়ান ফ্লেমিংয়ের প্রথমে পছন্দ হয়েছিল না। কিন্তু ডক্টর নো তে অভিনয় দেখার পর মত বদলান ফ্লেমিং। পরের উপন্যাসগুলোতে তিনি জেমস বন্ডের বাড়ি হিসেবে স্কটল্যান্ডকে দেখান। ১৯৬১ সালে ইংল্যান্ডের ইয়ন প্রডাকশন ইয়ান ফ্লেমিংয়ের লেখা ১১টা বন্ড উপন্যাস এবং ২টি গল্পের স্বত্ব অর্জন করে। পরে ১৯৯৯ সালে ইয়ন প্রডাকশন ১ম উপন্যাস ক্যাসিনো রয়্যালের স্বত্ব লাভ করে এবং বন্ডকে সম্পূর্ণ নিজেদের করে নেয়। ১৯৬২ সালের অক্টোবরে জেমস বন্ড প্রথম উপন্যাসের পাতা থেকে রুপালি পর্দায় আসে। প্রথম জীবনে শন কনেরি কফিন পলিশার থেকে গোয়ালা নানা কাজ করেছেন। কিছুদিন কাজ করেছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীতেও। পরে স্বাস্থ্যগত কারণে নৌবাহিনী ছেড়ে আসেন। ১৯৫৩ সাল নাগাদ তরুণ কনেরি শরীরচর্চার দিকে ঝুঁকে পড়েন। সেখানে খুব একটা সফল না হলেও সেখান থেকে অভিনয়ে নিজের রাস্তা করে নিতে শুরু করেন তিনি। তবে অভিনয় জীবনের শুরুতেও কোন ব্লকবাস্টার সিনেমাতে অভিনয়ের সুযোগ পাননি শন কনেরি। প্রথমে ক্যারি গ্র্যান্টকে বন্ড করতে চাইলেও তিনি জানান মাত্র একটি ছবিতে অভিনয় করতে পারব। এরপর রিচার্ড টড, প্যাট্রিক ম্যাকোহন, ডেভিড নিভনসহ অনেককে বিবেচনা করে নির্মাতারা। কিন্তু কাউকেই মনে ধরছিল না। বাধ্য হয়ে ফ্লেমিং নিজেই নাক গলাতে শুরু করেন। দ্য ডেইলি এক্সপ্রেসের সম্পাদক এগিয়ে আসেন। উপন্যাসের বন্ড তখন ইতোমধ্যে অনেক জনপ্রিয়। ‘কে হতে চায় বন্ড’- এ রকম এক প্রতিযোগিতার কথা ছেপে দেয় দ্য ডেইলি এক্সপ্রেস। বেশ কয়েক দফা বাছাই করে ৬ জনকে রাখা হয়। ৬ জনের মধ্যে বয়সে শন কনেরি ছিলেন সব থেকে ছোট। ইয়ান ফ্লেমিংয়ের নিজেও তাকে পছন্দ হচ্ছিল না। উল্টো তিনি শন কনেরি ‘শ্রমিক শ্রেণীর স্কটিশ’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। মোট কথা বন্ডের মতো অভিজাত ব্রিটিশ চরিত্রে শন কনেরিকে একদমই পছন্দ করছিলেন না তিনি। তবে প্রযোজক ব্রক্কলির স্ত্রী মত দেন বন্ডকে উপন্যাসে যেমন আগ্রাসী, ভাবলেশহীন, দুর্ধর্ষ, দুঃসাহসী আবেদনময়ী পুরুষ হিসেবে দেখানো হয়েছে সেটা একমাত্র প্রতিফলিত করতে পারবে শন। জেমস বন্ড সম্পর্কে বলা হয় ‘পুরুষরা যেন তার মত হতে চায়, নারীরা যেন তাকে চায়।’ ব্রক্কলির স্ত্রী ডানা বলেছিলেন, ‘শনের মধ্যে আবেদনের চুম্বকার্ষণ আছে যেটা এই চরিত্রের সঙ্গে দারুণ মানাবে।’ এমনকি লেখক ফ্লেমিংয়ের বান্ধবী ব্রাঞ্চে ব্ল্যাকওয়েলও শন কনেরির আবেদনময়িতার প্রশংসা করেন। ব্যাস এভাবেই শন কনেরির বন্ড হবার রাস্তা খুলে যায়। ১৯৬২ সালের অক্টোবরে জেমস বন্ড প্রথম উপন্যাসের পাতা থেকে রুপালি পর্দায় আসে। নির্মাতাদের কাছে এক স্বপ্নের নাম বন্ড। ৬ দশক হতে চলল জনপ্রিয়তা কমার নাম নেই বরং বাড়ছে। দীর্ঘদিন সিক্যুয়েল চালানোর রেকর্ডটা বহু আগেই করে নিয়েছে বন্ড। সিরিজের ৩য় ছবি এড়ষফভরহমবৎ সিনেমাতে জেমস বন্ডকে প্রথম এ্যাস্টন মার্টিন নিয়ে গতির ঝড় তুলতে দেখা যায়। পরবর্তী প্রায় সব সব সিনেমাতেই ভদকা মার্টিনির মতো এ্যাস্টন মার্টিনও বন্ডের অবিচ্ছেদ্য হয়ে যায়। পধঃপয সব রভ ুড়ঁ পধহ মুভিতে প্রতারক ফ্রাঙ্কের একবার জেমস বন্ড হবার সাধ জাগে। গ্রে স্যুট আর এ্যাস্টন মার্টিন ডিবি ফাইভ নিয়ে সেও নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমে পরে। গোল্ডফিঙ্গারের আরেকটি দিক তখনকার দর্শকদের কাছে উপভোগ্য ছিল, এই সিনেমাতেই প্রথম লেজার বিম দিয়ে কাউকে হত্যার চেষ্টা দেখানো হয়। থান্ডারবলে বন্ড হিসেবে চতুর্থবারের মতো অভিনয় করেন শন কনেরি। বন্ড গার্ল হিসেবে অভিনয় করেন মলি পিটার্স। তিনিই প্রথম বন্ড গার্ল যিনি নগ্ন হয়ে অভিনয় করেছিলেন। এই দৃশ্য নিয়ে ব্রিটিশ সেন্সর বোর্ড প্রথমে আপত্তি তুলেছিল। জেমস বন্ড সিরিজের ২য় ব্যবসা সফল সিনেমা থান্ডারবল। পরপর ৫টি সিনেমায় অভিনয় করার পর ভদকা মার্টিনি, শেকেন নট স্টিয়ার্ডের সার্ভিস থেকে সরে যান শন কনেরি। ফ্রানচাইজের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক ুড়ঁ ড়হষু ষরাব ঃরিপব-এর সেটেই টের পাওয়া গিয়েছিল। অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দাবি করার শেষ পর্যন্ত তার আর পরের সিনেমায় অভিনয় করা হয়নি। ড়হ যবৎ সধলবংঃু’ং ংবপৎবঃ ংবৎারপব ইয়ন প্রডাকশন নতুন বন্ডের খোঁজ শুরু করে। ৪০০ জনের উপরে অভিনেতার মধ্যে থেকে জর্জ ল্যাজেনবিকে বাছাই করা হয়। মুক্তি পাবার আগেই জর্জ ল্যাজেনবি ঘোষণা দেন তিনি আর বন্ড চরিত্রে অভিনয় করবেন না। ফ্রানচাইজের কঠোর শর্তের ফলে তিনি মাত্র ১টি সিনেমায় অভিনয় করার পরই সরে যান। ৬ জন বন্ডের মধ্যে একমাত্র তিনিই নন-ব্রিটিশ। ব্যক্তিগত জীবনে হলিউডি চাকচিক্য একদম পছন্দ করতেন না তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রী চিত্রশিল্পী মিশেলিন রোকিউবার্নকে নিয়ে তিনি থাকতেন স্পেনে। ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের আভিজাত্যের প্রতীক হয়েও নিজ জন্মভূমি ছিল তার হৃদয়ে।
×