ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ল রান্নার খরচ

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ২৬ জুলাই ২০২২; আপডেট: ১৬:৫০, ২৬ জুলাই ২০২২

বাড়ল রান্নার খরচ

তিতাস গ্যাসের প্রিপেইড মিটার

আগাম কোন ঘোষণা ছাড়াই তিতাস প্রিপেইড মিটারের চার্জ ৪০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ঢাকাবাসীর রান্নার খরচ আরও বেড়ে গেছে। 


গ্রাহকরা জানান, কোম্পানিটি এতদিন মিটার চার্জ বাবদ প্রতিমাসে ৬০ টাকা করে নিত, যা জুলাই থেকে ১০০ টাকা করা হয়েছে। তবে এজন্য কোনো নোটিশ দেয়নি সংস্থাটি। তিতাসের পক্ষ থেকে চার্জ বৃদ্ধির কথা স্বীকার করা হলেও এজন্য নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে  করছেন কোম্পানির কর্তাব্যক্তিরা।


জানা যায়, গত জুন থেকে পাইপলাইনে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের পাইকারি দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), যা জুন থেকেই কার্যকর হয়েছে। আর প্রিপেইড মিটারে প্রতি ইউনিটের খরচ ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৪৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১৮ টাকা করা হয়েছে।


তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ মোল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, একটা গ্যাসের মিটার ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকায় কিনতে হয়, যার লাইফ টাইম (মেয়াদ) হচ্ছে ১০ বছর। ৬০ টাকা করে বিল নিতে থাকলে মিটারের দাম উঠতে সময় লাগবে ৩৫ বছর। তিতাস নিজের টাকায় মিটার কিনে ৩২ বছর ধরে টাকা উসুল করবে? এটা কি খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে? 

কোম্পানির বোর্ড সভায় এই চার্জ ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব উঠেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বোর্ড থেকে বলা হলো, ঠিক আছে- আস্তে আস্তে বাড়ান। মাত্র ৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাতে এত কথা উঠার কথা না। গ্রাহকের উচিৎ প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া। কারণ মিটারের ফলে তার সাশ্রয় হয়েছে ৫০০ টাকা করে। এটা নিয়ে অভিযোগ আসার কথা না। 

চার্জ বৃদ্ধির দাপ্তরিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে বলেন, নোটিশ কেন যাবে? আমরা সব মিটারের সফটওয়্যারে আপডেট করে দিয়েছি। অলরেডি গ্রাহকরা জেনে গেছে। 

গ্রাহকরা বলেন, প্রিপেই মিটারে সাশ্রয় হওয়ার কারণ হচ্ছে, সবাই প্রয়োজন ছাড়া চুলা বন্ধ করে রাখেন। এতে ম্যাচের কাঠি বেশি লাগছে। বিপরীতে গ্রাহক বেশি ব্যবহার না করার কারণে তার সাশ্রয় হচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে আবাসকি খাতে প্রাকৃতকি গ্যাসের মাসিক বিল এক চুলার ক্ষেত্রে ৯৯০ টাকা এবং দুই চুলার ক্ষেত্রে ১ হাজার ৮০ টাকা। গত জুলাই মাস থেকে এ দাম র্কাযকর হয়েছে। এই যে এক চুলা এবং দুই চুলার গ্যাসের বিল নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি হিসাব করা হযেছে একটি বা দুটি চুলা ২৪ ঘন্টা জ্বালিয়ে রাখলে কী পরিমান গ্যাস ব্যবহৃত হয় তার মুল্যের ভিত্তিতে। কিন্তু কোন গ্রাহকই ২৪ ঘন্টা কোন চুলা জ্বালানি রাখেন না। এ কারণে প্রিপেইড মিটার যারা ব্যবহার করছেন তারা যে পরিমান গ্যাস ব্যবহার কারছেন সেই পরিমানই বিল দিচ্ছেন। কম গ্যাস ব্যবহার করার কারণে তার বিলও সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু যারা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন না, তারা কম গ্যাস ব্যবহার করেও বেশি বিল দিচ্ছেন। সরকার এটা তাদের কাছ থেকে জোর করে নিচ্ছে।   

আগাম নোটিশ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিতাসে কোন জবাবদিহিতা নেই, এ কারণে তারা আগে চার্জ বৃদ্ধির কথাটি জানানোরও প্রয়োজন মনে করছে না। অথচ বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের জন্য বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বার বার জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করছেন। 

তিতাসের মোট ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪৮ জন গ্রাহকের মধ্যে আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন ২৮ লাখ ৫৬ হাজার ২৪৭ জন। ২০২১ সালের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ গ্রাহককে মিটার প্রিপেইড পদ্ধতিতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা থাকলেও এখন পর্যন্ত তিন লাখ ২৮ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের সুবিধা দিতে পেরেছে তিতাস। গ্যাসের অপচয় রোধে ২০১১ সাল থেকে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে আবাসিক শ্রেণির গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। আবাসিক শ্রেণিতে গ্যাসের গ্রাহক ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৯ জন।
 

কেআর

×