ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইমেজ সঙ্কট কাটানোই মূল লক্ষ্য

বীমা খাতে শৃঙ্খলা আনতে ৬৩২ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ১২:২২, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

বীমা খাতে শৃঙ্খলা আনতে ৬৩২ কোটি টাকার প্রকল্প

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বীমা খাতে শৃঙ্খলা আনা, গ্রাহকের আস্থা অর্জন ও উন্নয়নে অটোমেশন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আইডিআর)। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩২ কোটি টাকা। আগামী ২০২২ সালে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন আইডিআরের সদস্য গোকুল চাঁদ দাস। এছাড়াও বীমা খাতে দক্ষ লোকবল তৈরি, সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ, কোম্পানিগুলোর অনৈতিক কমিশন বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে ২৭ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। গোকুল চাঁদ দাস বলেন, বীমা খাতে শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে। মানুষের আস্থার অভাব রয়েছে। এটা একদিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এগুলো দূর করার জন্য আইডিআর গঠন করা হয়। এখাতে শৃঙ্খলা আনা এবং মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ফেরাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এই খাতটাকে যদি অটোমেটেড করা যায় তাহলে অনেক অনিয়মই দূর হয়ে যাবে। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩২ কোটি টাকা। এছাড়াও দক্ষ জনবল তৈরি করতে বিভিন্ন কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ খাতে ব্যাংকিং খাতের মতো আকর্ষণীয় কোন বেতন কাঠামো নেই সে কারণে অনেক মেধাবী বীমায় চাকরি করতে আসেন না। এই আকর্ষণীয় বেতন কাঠামো তৈরির জন্য কাজ করা হচ্ছে। বীমা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে অভিজ্ঞ এই কর্মকর্তা বলেন, অটোমেশন একটা বড় ধরনের পদক্ষেপ। আমরা অটোমেশনের মাধ্যমেই সুশাসনটা করতে চাই। সুশাসনের জন্য আমাদের প্রথম পদক্ষেপ যেটা সেটা হলো সময়মতো গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করা। আমরা এটার ওপরে বেশি জোর দিচ্ছি। আমরা চাই গ্রাহকের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে সভা করে জনসম্মুখে দাবিটা পরিশোধ করা হোক। জনসম্মুখে দাবি পরিশোধ করলে মানুষ আকর্ষিত হবে ইন্স্যুরেন্সের প্রতি। আরেকটা দিক হলো পুরো বীমা দাবি না পেলে জনসম্মুখে অভিযোগ করার সুযোগ পাচ্ছে। সুশাসনের এটা একটা দিক। আরেকটা হলো প্রচার। ইন্স্যুরেন্সের প্রচারের দিকেও আমরা আগ্রহী। মিডিয়ায় যারা কাজ করে তাদের বলব আপনার মানুষ যেন জেনে বুঝে পলিসি করে সে বিষয়ে প্রচার করুন। তিনি বলেন, শুধু অটোমেশন নয় পলিসির শর্তগুলো বাংলায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেখা যায় পলিসির শর্তগুলো ইংরেজী হওয়ায় সাধারণ মানুষ না বুঝে পলিসি করে শেষ পর্যন্ত কিছুই পায় না। এসব অনিয়ম দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে বীমা খাতের ইমেজ সঙ্কট কাটাতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন। ইমেজ সঙ্কট বলতে ‘ক্লেইম’ না দেয়াকে বুঝায়। অনেক কোম্পানিই আছে বীমা ম্যাচিউর হলে ‘ক্লেইম’ দেয় না বা গ্রাহককে হয়রানি করে। এসব কারণেই কিন্তু ইমেজ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ১৫ শতাংশ কমিশন বাস্তবায়ন হলে রি-ইন্স্যুরেন্সসহ অন্যান্য সবই করবে কোম্পানিগুলো। ‘ক্লেইম’ হলে কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের ডেকে এনে বীমার টাকা পরিশোধ করবে। তখন কিন্তু আমরা ইমেজ সঙ্কটে থাকব না। বর্তমানে আইডিআরে শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর নেতৃত্বে যে কমিশনটা আছে তারা খুবই যতœবান এবং সচেষ্ট। তারা চেষ্টা করছেন ইমেজ সঙ্কট কাটানোর। তাদের নেতৃত্বে বিভিন্ন কোম্পানিতে গিয়ে ‘ক্লেইম’ দেয়া হচ্ছে। এগুলো গণমাধ্যমে আসছে। এতে ইমেজ সঙ্কট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। আমার তো মনে হয় ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাব। ২৭ কোম্পানির পুঁজিবাজারে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো শেয়ার বাজারে আসার বিষয়ে এরইমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমার মনে হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা আবেদন করবে। তবে আবেদন করলেই কিন্তু বিএসইসি দেবে না। কতগুলো আইনকানুন আছে, সেগুলো মানতে হবে। এই শর্তগুলো যারা পূরণ করতে পারবে না, অথবা যাদের সামর্থ্য নেই তারা হয়ত আবার আবেদন করবে। তবে আমরা চাই প্রত্যেকটা কোম্পানি শেয়ার বাজারে যাক। সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাবিশ্বে বীমা খাতকে অনন্য মর্যাদায় দেখা হয়ে থাকে। বীমা খাত একটি দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা পালন করে। অথচ বাংলাদেশে বীমা খাতকে দেখা হয় নেতিবাচক দৃষ্টিতে। নানা নিয়ম, সময়মতো বীমা দাবি পূরণ না করা, কমিশন প্রদান নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা, দক্ষ লোকবলের অভাবে দাঁড়াতে পারছে না বীমা খাত। আইডিআরের অটোমেশন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তখন বীমা খাত নতুন যুগে প্রবেশ করবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
×