ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩৫ জলযান নামানোর পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি

লঞ্চ ব্যবসায় নামছে বিআইডব্লিউটিসি

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২ আগস্ট ২০১৮

লঞ্চ ব্যবসায় নামছে বিআইডব্লিউটিসি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এবার লঞ্চ ব্যবসায় নামছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। বেসরকারী লঞ্চগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন রুটে এই লঞ্চগুলো পরিচালনা করবে বিআইডব্লিউটিসি। এ লক্ষ্যে আপাতত ৩৫টি জলযান নামানোর পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তথা বিআইডব্লিউটিসি এই উদ্যোগকে সেবার উদ্যোগ বললেও আসলে এ উদ্যোগ হবে বাণিজ্যিক। এ লক্ষ্যে ৩৫টি নতুন জলযান নির্মাণ করে তা দেশের বিভিন্ন নৌ রুটে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিআইডব্লিউটিসির নৌবহর শক্তিশালীকরণ ও আধুনিকায়ন করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিআইডব্লিউটিসিতে বিদ্যমান জাহাজগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাই পুরনো জাহাজগুলোকে বাদ দিয়ে সেখানে নতুন জাহাজ প্রতিস্থাপন করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ উপকূলীয় নৌপথে নিরাপদ ও দক্ষ নৌপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো, নৌপথে ক্রুজ সার্ভিস চালু করা, সংস্থার জলযান বহরে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং পুনর্বাসন সুবিধার সক্ষমতা বাড়ানো, ভবিষ্যত ট্রাফিক ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করাসহ সংস্থার রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই এ নতুন প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বিআইডব্লিউটিসির জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন সিøপওয়ে নির্মাণ’ শিরোনামে নেয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে ১ হাজার ২৫৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং বিআইডব্লিউটিসির নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে দুই ফেইসে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। রাজধানী ঢাকাসহ বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ২৭টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, সড়ক ও রেল পরিবহন ব্যবস্থার তুলনায় নৌপথ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত। নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে নদীপথ সবচেয়ে সহজ, জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য মাধ্যম। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ২৮নং অধ্যাদেশ বলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন এবং ৯টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ও নৌযান একীভূত করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে বিআইডব্লিউটিসির মোট জলযানের সংখ্যা ছিল ৬০৮টি। এ সবই ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। অধিকাংশ জলযান বয়সের ভারে ছিল ন্যুব্জ। ফলে ৬০৮টি জলযান বহরে থাকলেও বিআইডব্লিউটিসি জলযান সার্ভিস পরিচালনায় নিয়োজিত করতে পারেনি। সূত্র জানায়, এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিসি জলযান বহরের উন্নয়নে পুরান জলযান পুনর্বাসন এবং নতুন জলযান সংগ্রহে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। আশি ও নব্বই দশকে ডেনমার্ক, জার্মানি, বেলজিয়াম এবং পরবর্তী চীন সরকারের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজ সংস্থার জলযান বহরে সংযুক্ত হলেও ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে বর্তমানে জলযানগুলো অত্যন্ত নাজুক ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক জলযান অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অতিক্রম করেছে। বর্তমানে এ সংস্থাটির ১২৮টি বাণিজ্যিক জলযান ও ৫৩টি সহায়ক জলযানসহ মোট ১৮১টি জলযানের মাধ্যমে ফেরি সার্ভিস, যাত্রীবাসী সার্ভিস, কার্গো সার্ভিস ও শিপ রিপেয়ার সার্ভিস দেয়া হচ্ছে। তবে জলযানের সংখ্যা কম ও মানসম্মত আধুনিক না হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ নৌপরিবহন সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এর পরিপ্রেক্ষিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিআইডব্লিউটিসি নতুন করে ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন সিøপওয়ে নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করে। প্রস্তাবটির ওপর ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পিইসি সভায় প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত জলযানসমূহের প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন এবং এ সংক্রান্ত সম্ভব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে জলযান ক্রয় সম্পর্কিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। পিইসি সভার ওই সিদ্ধান্তের আলোকে ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করে পুনরায় পাঠানো হয়। এরপর ওই প্রস্তাবের ওপর ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর পুনরায় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত ও বর্তমান পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুসারে ১ হাজার ৩১৯ কোটি ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ফেইজে নতুন চারটি জাহাজ নির্মাণ করা হবে, সি-ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে ৮টি। ইম্প্রুভড কে-টাইপ ফেরি নির্মাণ করা হবে ৪টি। ইম্প্রুভড ইউটিলিটি ফেরি নির্মাণ করা হবে ৬টি। মর্ডান কেবিন ক্রুজার কাম ইন্সপেকশন বোট বানানো হবে ১টি। ফেরি পল্টুন নির্মাণ করা হবে ৬টি। ঘাট পন্টুন নির্মাণ করা হবে ২টি। ফায়ার ফাইটং কাম-স্যালভেজ টাগ নির্মাণ করা হবে ১টি। অয়েল ট্যাংকার বানানো হবে ১টি। এ ছাড়াও প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেইজে প্যাসেঞ্জার ক্রজার নির্মাণ করা হবে ৩টি। আধুনিক অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণ করা হবে ৩টি। ফায়ার ফাইটিং কাম-স্যালভেজ টাগ নির্মাণ করা হবে ১টি। অয়েল ট্যাংকার (ডাবল হাল ও ডাবল বটম) নির্মাণ করা হবে ১টি। ইম্প্রুভড কে-টাইপ ফেরি নির্মাণ করা হবে ২টি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, বিআইডব্লিউটিসিকে আধুনিকায়ন করে সেবা ও বাণিজ্যিক মনোভাব নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যেই এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সংস্থা লাভবান হবে। জনসাধারণও লাভবান হবে।
×