ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কমিশনবাণিজ্য জটিলতায় পিছিয়ে পড়ছে বীমা খাত

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কমিশনবাণিজ্য জটিলতায় পিছিয়ে পড়ছে বীমা খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বীমা খাতের বিকাশে কমিশন বাণিজ্য বড় সমস্যা বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এ সমস্যার সমাধান করে গ্রাহকদের কাছে বিমার নতুন নতুন পণ্য তুলে ধরতে পারলে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশের বীমা শিল্পের বর্তমান : বিরাজমান সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এমন কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইয়ের চেয়ারম্যান ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইডিআরএর চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, বীমা খাতের কয়েকটি সমস্যা খাতের বিশাল সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর মধ্যে অন্যতম বীমা খাতে গ্রাহকদের অনাস্থাও কমিশন বাণিজ্য। ফলে তৈরি হচ্ছে ইমেজ সঙ্কট। এগুলো দূর করার উদ্যোগ নিয়েছি। সবাইকে মিলে অনৈতিক প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। ২০১৮ সালেই এ সমস্যার সমাধান করতে চাই। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে বলেন, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো একটি আইনের খসরা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরে অনেক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। সেগুলো আইডিআরএতে পাঠানোর পর স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে অনেক সময় নষ্ট হয়। এতে সঠিক সময়ে সঠিক আইন করে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তিনি আরও বলেন, সবকিছু মিলিয়ে বীমা খাতে যে সম্ভাবনা রয়েছে তার সুফল পেতে হলে গতানুগতিক পণ্যের বাইরে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ওপর যদি বীমার পণ্য ডিজাইন করা যায়, তাহলে বীমা প্রচারে অনেক সহজ হবে। আইডিআরএ সদস্য গোকুল চাঁদ দাস বলেন, কমিশন নিয়ে সমস্যা সমাধান না করলে নতুন করে বাজার সৃষ্টি করে কোন লাভ হবে না। এটা লাইফ আর নন-লাইফ হোক। এই বছর এজেন্টদের কমিশন দেয়ার যে অনৈতিক প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, বীমানীতি বাস্তবায়ন করা হয়নি। বীমানীতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে নতুন করে সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি বেশকিছু আইনের পরিবর্তন করা যেতে পারে। এসবিসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম বলেন, বীমা খাতের আস্থার অভাব রয়েছে। তার কারণ একই ব্যক্তির কাছে পলিসির জন্য সব কোম্পানির লোকেরাই যায়। কিন্তু কোন নতুন প্রেডাক্ট ডিজাইনের কোম্পানিগুলো গুরুত্ব দেয় না। কোম্পানিগুলোকে ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট, ই-প্রোডাক্টসহ নতুন ও আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট বাজারে আনতে হবে। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকিং দেশের প্রচার রয়েছে। কিন্তু ইসলামী বীমা সেক্ষেত্রে প্রচার নেই। এটা প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে হবে। এছাড়াও পুনঃবীমা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা দরকার। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি এমডি বিএম ইউসুফ আলী বলেন, বীমা কোম্পানির এমডি নিয়োগে সর্বনিম্ন বয়স ৪০ সীমা রয়েছে। এটা আরও কমানোর পাশাপাশি বীমা সম্পর্কে প্রচারণা বাড়ানো দরকার। মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, লাইফ ইন্স্যুরেন্সগুলোকে দেখার কেউ নেই। বীমা কোম্পানিতে নিয়মিত অডিট হচ্ছে না। আইডিআরএকে অন্তত ২ বছর পরপর অডিট করতে হবে। পাশাপাশি বীমা কোম্পানির এমডিকে গ্রাহকদের টাকা সঠিকভাবে দেখবালের জন্য আইডিআরএকে তদারকি হবে। সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান রুবিনা হামিদ বলেন, জীবন বীমা কোম্পানির উন্নয়নে এজেন্ট দিয়ে বীমা পলিসি বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনে পলিসি বিক্রি করতে হবে। ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স (ব্যাংক গ্যারান্টিতে বীমা) বীমা বাধ্যতামূলক করা দরকার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়ের সঠিক নির্দেশনা আসা দরকার। এছাড়াও নতুন করে স্কুল ব্যাংকিংকে বীমার আওতায় আনা পাশাপাশি ব্যাংক ও গার্মেন্টসহ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রুপ বীমায় অনিহা প্রকাশ করছে। সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা দরকার। সাধারণ বীমা নিয়ে সেমিনারে একেএম মনিরুল হক বলেন, দেশের অর্থনীতির তুলনায় বেশি বীমা কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে বীমা খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে দক্ষ বিমা বিক্রিয় কর্মী নেই। দেশের স্কুল কলেজগুলোতে বীমা সম্পর্কে পড়াশুনার সুযোগ নেই। রূপালী ইন্স্যুন্সের এমডি পি কে রায় বলেন, বীমা নীতিতে যে পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করার প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইডিআরএর সদস্য বোরহান উদ্দিন, জীবন বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. শেলিনা আফরোজা, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এমডি জালালুল আজিম, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান তৌহিদ সামাদ, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির চিফ ফ্যাকাল্টি সদস্য এস এম ইব্রাহিম হোসেন, বিআইএ সাবেক চেয়ারম্যান নাসির এ চৌধুরী, জীবন বীমা কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন ও মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরামর্শক দাস দেব প্রসাদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সহযোগিতায় ছিল অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি ডটকম।
×