ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা দিবসে আজ অন্যরকম জাগরণ

ইতিহাসের কাছে ফেরা, মুক্তির স্বাদ

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২৬ মার্চ ২০২৪

ইতিহাসের কাছে ফেরা, মুক্তির স্বাদ

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মতিঝিলে নিয়ন আলোয় ফুটিয়ে তোলা জাতীয় স্মৃতিসৌধ

স্বাধীনতা বিরোধীদের কথাই আগে বলা যাক। নির্লজ্জ নপুংসক স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বাংলাদেশে আগে যেমন ছিল, এখনো আছে। এরা মন থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয় মেনে নিতে পারেনি। ফলে সময় সুযোগ পেলেই পা কামড়ে ধরতে চায়। স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করে। এই এখনো নানা ছুঁতোয় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে পরাজিত পাকিস্তানপন্থিরা। জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আর তো কেউ ছিল না পাশে, ভারত ছিল।

বাঙালির জন্য কী করেনি বন্ধুরাষ্ট্রের সরকার ও জনগণ? এমনকি তাদের সৈন্যরা প্রাণ দিয়েছে। মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর রক্তে মুক্ত স্বাধীন দেশ পেয়েছি আমরা। রাজাকার-আলবদরদের প্রজন্ম এই ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায়। ৩০ লাখ মানুষ খুন করেছিল যে পাকিস্তান, সে পাকিস্তানের সঙ্গে তারা আঁতাত করে চলছে এখনো। 
কিন্তু মার্চ যে প্রতিরোধের মাস! বিশেষ করে ২৬ মার্চ বাঙালি নতুন করে জেগে ওঠে। প্রতিবাদী চেতনা আর মুক্তির আনন্দ এদিন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

১৯৭১ সালের আজকের দিনেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। তার পর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছিল চূড়ান্ত বিজয়। 
আজ সেই বিজয়ের আনন্দ, মুক্তির স্বাদ নিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করবে বাঙালি। সে লক্ষ্যে পতাকার রঙে চারপাশ সাজিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলোকসজ্জা করা হয়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে। প্রস্তুত করা হয়েছে সভা সেমিনার উৎসব অনুষ্ঠান করার মঞ্চ। এসব মঞ্চ থেকে আজ ইতিহাসের কথা হবে। সঙ্গীতে কবিতায় চলচ্চিত্রে বর্ণনা করা হবে স্বাীধনতার মাহাত্ম্য। 
স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যুষে আজ ঢাকা থেকে বের করা হবে ‘শোক থেকে শক্তি ॥ অদম্য পদযাত্রা।’ গত ১২ বছর ধরে স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ এই পদযাত্রার আয়োজন করে আসছে ‘অভিযাত্রী’ নামের একটি সংগঠন। আজ প্রত্যুষে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু হবে। শেষ হবে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পথ, পথে পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইতিহাস, স্থাপনা, গণকবর ইত্যাদি অতিক্রম করে এগিয়ে যাবে অভিযাত্রী দল।

আয়োজকদের প্রধান পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার জানান, মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতিগুলোকে নতুন করে জাগিয়ে তোলার প্রয়াসেই এই পদযাত্রা। অংশগ্রহণকারীরা সকালে জাতীয় পতাকা হাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমবেত হবেন। এখানে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সূচনা করা হবে কর্মসূচির। পরে সবাই যাবেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল বধ্যভূমিতে। সেখানে ২৫ মার্চ কালরাতে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

পরে টিএসসি, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শিখা চিরন্তন, মধুর ক্যান্টিন, অপরাজেয় বাংলা, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, পিলখানা, মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজসহ সে সময়ের বিভিন্ন স্থাপনার সামনে দিয়ে হেঁটে যাবেন। স্থির দাঁড়িয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। নদীপথও ব্যবহার করবেন তারা। সবশেষে সন্ধ্যা নাগাদ গিয়ে পৌঁছবেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে। নিশাত জানান, স্মৃতির মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার দীপ্ত শপথে শেষ হবে তাদের পদযাত্রা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শারীরিকভাবে সক্ষম যে কেউ এই পদযাত্রায় অংশ নিতে পারবেন। সুযোগ থাকলে অভিযাত্রী হতে পারেন আপনিও। 
শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ছায়ানটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করা হবে আজ। টিএসসি, শহীদ মিনার এলাকায় দিনভর থাকবে বিচিত্র আয়োজন। এভাবে গোটা দেশজুড়েই দেখা যাবে অদ্ভুত জাগরণ। এই জাগরণ এই অনিশ্বর চেতনার কাছে রাজাকার-আলবদরদের হার মানতে হবে। হবেই। আজ তেমনই দিন।

×