ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আইনের দৃষ্টিতে;###;শুভ্র ঘোষ

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ ধর্ষক!

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ ধর্ষক!

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হতে শুরু করেছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো বাংলাদেশেও এর সংক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত সামাজিক মূল্যবোধ, প্রকৃত শিক্ষার অভাব এবং নিচু মানসিকতার কারণেই এর প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অনেক সমাজবিদ মনে করেন। আমাদের দেশে প্রতিদিনই ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার শিকার হচ্ছে ছোট শিশুরাও। গ্রাম বা শহরে রাস্তাঘাটে অথবা ঘরে কখনও আবার বাসে কিংবা লঞ্চে কোথাও নিরাপদ নয় আমাদের নারীরা। ঘরে ঢুকে বাবা-মা কিংবা স্বামীকে বেঁধে রেখে ধর্ষণ, রাস্তায় ভাইকে বেঁধে রেখে বোনকে ধর্ষণ, বেড়াতে গেলে ফুঁসলিয়ে বা চকলেট দিয়ে বাচ্চাকে ধর্ষণ করা- এসব চিত্র যেন বেড়েই চলেছে সমাজে। ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এর প্রতিকারের তেমন কোন উদ্যোগ এখনও আমাদের সমাজে ফলপ্রসূ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই নিজের বা মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ধর্ষণের মতো ভয়াবহ বিষয়টি লোক লজ্জার ভয়ে এড়িয়ে যেতে চান। কিন্তু এতে সমাজের বা ওই পরিবারের কোন লাভ হয় না। বরং সমাজে ব্যাধিটির সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে একজন ধর্ষক হুমকি-ভয় দেখিয়ে অল্পতেই পার পেয়ে যায় এবং এমন কাজে ভবিষ্যতেও উৎসাহী থেকে যায়। তাই নিজেদের সচেতন করার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে এই সামাজিক ব্যাধিটি উৎখাত করতে হবে। একই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার হলে সবাইকেই আইনের দ্বারস্থ হতে হবে। আইনের মাধ্যমে ধর্ষকের প্রাপ্য শাস্তি প্রদান করে দৃষ্টান্ত রাখতে হবে যেন, ভবিষ্যতে আর কেউ এসব অপরাধ সংগঠনে উৎসাহী না হতে পারে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ (প্যানেল কোড ১৮৬০) আইনের ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের পাঁচটি ক্ষেত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই পাঁচটি ক্ষেত্রে কোন নারীর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করলে সে ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে বলে ধরে নেয়া হবে। ক্ষেত্র পাঁচটি হলো: ১. নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে; ২. নারীর সম্মতি না নিয়ে; ৩. নারীকে মৃত্যু ভয় বা জখমের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক সম্মতি আদায় করলে; ৪. কোন নারীর স্বামী না হয়েও তার স্বামী দাবি করে এবং স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে যৌনসঙ্গম করলে; এবং ৫. চৌদ্দ বছরের কম বয়সী কোন মেয়ের সম্মতি বা অসম্মতির বাইরে যৌনসঙ্গম করলে তা ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ধরা হবে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৮৬০ আইনের ৩৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোন ব্যক্তি ধর্ষণের অপরাধ করে তবে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা দশ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।’ দণ্ডবিধি অনুসারে ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ যা আমলযোগ্য কিন্তু জামিনযোগ্য নয়। এমনকি এটি মীমাংসারযোগ্যও নয়। তাই এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের গুটিয়ে না রেখে সবাইকে প্রয়োজনীয় আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে। কলকলিয়াপাড়া, মাগুরা থেকে
×