ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবান - বিষয় ॥ বিশ্বকাপ ফুটবল ও বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৫ জুলাই ২০১৮

সমাজ ভাবান  -  বিষয় ॥ বিশ্বকাপ ফুটবল ও বাংলাদেশ

আশায় বসতি গোপাল নাথ বাবুল ॥ বাঙালী সব সময় খেলাপাগল। সে খেলাটা যদি ফুটবল হয়, তাহলে তো কথাই নেই। নাওয়া-খাওয়া ছাড়তেও রাজি ফুটবলের জন্য। বর্তমানে ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে। কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা, কেউবা অন্য কোন দেশের খেলোয়াড়ের ভক্ত। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে নিয়ে যেভাবে ফুটবল ভক্তদের মাঝে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে, ঠিক একইভাবে আমাদের দেশের আবাহনী-মোহামেডানকে নিয়েও একসময় বিপুল উন্মাদনা ছিল। যেদিন আবাহনী-মোহামেডানের খেলা থাকত, সেদিন সারাদেশে ভক্তদের মাঝে ফুটবল উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ত। মাঝে মাঝে এ উন্মাদনা ও উত্তেজনা আবেগে পূর্ণ ভক্তদের মাঝে মারামারিতে রূপ নিত এবং এ মারামারি স্টেডিয়ামের গ-ি পার হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ও পাড়ার অলিতেগলিতে ছড়িয়ে পড়ত। গত শতক পর্যন্ত আবাহনী-মোহামেডানের ভক্তদের মাঝে এ উন্মাদনা ছিল। আবাহনীর আসলাম, সত্যজিৎ দাশ রুপ, চুন্নু ও মোহামেডানের হামিদ, সাব্বির এসব খেলোয়াড় ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ফুটবল তলানিতে চলে আসে। বাংলাদেশ ফুটবলের এ অবস্থার জন্য বাফুফের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথেষ্ট ব্যর্থতা রয়েছে। এ ব্যর্থতা কাটিয়ে অতীতের ভুলগুলো শোধরাতে পারলে আশা করতে পারি, আমরাও একদিন বিশ্বকাপ খেলব। আমার মতে, ফুটবলে সফলতা পেতে হলে নি¤েœাক্ত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। বাফুফের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বজনপ্রীতি থেকে মুক্ত থাকতে হবে। কিছু কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে উপযুক্ত খেলোয়াড়রা জাতীয় দলসহ বিভিন্ন দলে সুযোগ পায় না। এ রকম অনেক কথা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের তুলে আনতে হবে। এ জন্য পূর্বের মতো স্কুল ও কলেজলীগসহ ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলায় জেলায় প্রিমিয়ার লীগ চালু করতে হবে। সবচেয়ে বেশি যেটাতে নজর দিতে হবে, সেটা হলো- খেলোয়াড়দের দম কীভাবে ধরে রাখা যায়। প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের ১০-১৫ মিনিট খেলার পর খেলোয়াড়রা আর দম ধরে রাখতে পারে না, নেতিয়ে পড়ে। যা খেলোয়াড়দের শারীরিক ভাষায় প্রকাশ পায়। এ জন্য খেলোয়াড়দের ফিটনেসের প্রতি আগে নজর দিতে হবে। উপরোক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারলে আশা করি ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে থেকে অন্তত ১৬ জন খেলোয়াড় উঠে আসবে এবং আমরাও একদিন বিশ্বকাপ খেলতে পারব। দোহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে . বিশ্বকাপে বাংলাদেশ! ইব্রাহীম রাসেল ॥ ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে বাংলাদেশের মানুষের যে উন্মাদনা, তাতেই প্রমাণ করে এ দেশের মানুষ কতোটা ফুটবলপ্রেমী। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার এক মাস আগে থেকেই গ্রামে-গঞ্জে, পাড়ায়-মহল্লায় নানা বয়সী মানুষ ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে। ফুটবল বিশ্বের এক নম্বর জনপ্রিয় খেলা। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা কোন অংশে কম নয়। ফুটবলকে ঘিরে বাংলার মানুষের উচ্ছ্বাস-উৎসব সেটাই প্রমাণ করে। বাঙালী ক্রীড়াপ্রেমী জাতি। তারা খেলতে পছন্দ করে। ফুটবলের প্রতি তাদের ভালবাসা অনন্য উচ্চতায়। তাই বাংলাদেশ ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার মর্যাদা অর্জন করতে না পারলেও বিশ্বের ৩২টি সেরা দল থেকে নিজেদের পছন্দের দলকে তারা বাছাই করে নিয়েছে। কারণ ফুটবলের আনন্দ থেকে তারা কোন মতেই বঞ্চিত হতে চায় না। যদিও বাংলাদেশের সিংহভাগ ফুটবলপ্রেমী দুটি ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ বেছে নিয়েছে আর্জেন্টিনাকে আর এক ভাগ ব্রাজিলকে। ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে এই দুই সিংহভাগের উন্মাদনা তথা খুনসুটি দেখে মনে হয় আহা! আজ যদি বাংলাদেশ ফুটবল দল বিশ্বকাপ খেলত! কতই না গর্বের সঙ্গে বাঙালী জাতি গোটা বিশ্বকাপ উপভোগ করতে পারত। আমাদের ফুটবলের দিকে তাকালে সত্যিই আফসোস হয়। স্বাধীনতার পর থেকে ফুটবলের আশানুরূপ অগ্রগতি চোখে পড়েনি। অথচ এ দেশের মানুষ ফুটবলকে মনে প্রাণে ভালবাসে। এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখে একদিন বাংলাদেশও বিশ্বকাপে খেলবে। তাই ফুটবলকে এগিয়ে নিতে যা করণীয় তা হলোÑ সারাদেশে পর্যাপ্ত ফুটবল একাডেমি তৈরি করা, ক্লাবগুলোর নিজস্ব মাঠ ও আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি করা, বয়সভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্ট বাড়ানো, ঘরোয়া ফুটবলের ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন করা এবং টুর্নামেন্টগুলো আরও আকর্ষণীয় ও প্রতিযোগিতামূলক করা, ঘরোয়া ফুটবলে পেশাদারিত্ব বাড়ানো, ফুটবলের জন্য প্রত্যেক বিভাগে একটি করে আন্তর্জাতিক মানের মাঠের ব্যবস্থা রাখা, জাতীয় দলের জন্য ভাল ও দীর্ঘমেয়াদী কোচের ব্যবস্থা করা, জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে পেশাদারী মনোভাব চালু করা, খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও ইনজুরিকালীন সুবিধা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া, পেশাদার লিগের বড় দলগুলোর বয়সভিত্তিক দল গঠন বাধ্যতামূলক করা এবং ওই দলগুলোর মধ্যে নিয়মিত খেলার ব্যবস্থা করা, আন্তঃস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ফুটবল লিগ চালু করা, এক কথায় স্কাউটিং করা, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে সব চ্যানেলগুলো বিদেশী সেরা লিগগুলোর সম্প্রচারে ভাগাভাগি করে চলে যাওয়া, অর্থাৎ কোন চ্যানেলে যদি লা লিগা দেখানো হয়, তো অন্য চ্যানেল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ! ফুটবল প্রতিভা অন্বেষণে প্রতিযোগিতামূলক বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করা এবং সরকার কর্তৃক ফুটবল উন্নয়নে আলাদা বাজেট করা। সর্বোপরি উপরোক্ত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে অচিরেই বিশ্বকাপে শুধু দর্শক নয় মাঠে থেকেই খেলবে বাংলাদেশ। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে . ফুটবলের দেশ সাহিদা সাম্য লীনা ॥ ফুটবল দুনিয়ায় বাংলাদেশের মতো এমন ভক্ত কোন দেশে আছে! বাংলার ঘরে ঘরে হাটে, মাঠে, ঘাটে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই নানান প্রস্তুতি, গল্পকথায় খেলার আগেই ভবিষ্যদ্বাণী। জার্সি কেনা, বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা, ঘরবাড়ি রং করা ইত্যাদি ভালবাসা প্রিয় দলের প্রতি সমর্থন বোঝানোর নানা ইঙ্গিত। এক রিকশাওয়ালাকে দেখলাম তার রিকশা আর্জেন্টিনার রঙে সাজিয়েছে। এমন কিছু পাগল ভক্তও আছে যারা প্রতি বিশ্বকাপে দৈর্ঘ্য, প্রস্থে বিশালাকৃতির পতাকা বানান। যত ভালবাসা আছে যে যেভাবে পারে প্রকাশ করে। বাংলাদেশের অর্ধেক ভক্ত আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের। এরপর জার্মান, ফ্রান্সের ভক্ত খুব হাতেগোনা। বহু বছর আমরা দর্শক তালিকায়। বাঙালী পারে না এমন কিছু এখন আর অভিধানে নেই। এখন পারে ও পারবে শব্দটির জয়জয়কার এই ভূমির। এই তো ক’দিন আগে নারী ক্রিকেটাররা যা দেখাল তাতে বোধকরি আমাদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মতো ফুটবল বিশ্বকাপে যেতে আর বেশি দেরি নেই। যেখানে মেয়েরাও জেগে উঠেছে। এখন বিশ্বকাপ ফুটবলে আমাদের দামালেরা যাবার অপেক্ষায় শুধু। প্রয়োজন শুধু একটু চেষ্টা, উদ্যম, উৎসাহ, সহযোগিতা আর অনুশীলন। ক্রিকেট যেখানে আমরা দখল করে নিয়েছি সেখানে আমাদের দেশের আর একটি খেলা ফুটবল কেন পেছনে থাকবে? বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ফুটবলের প্রতি যে অনুরাগ তা অন্য কোন খেলার প্রতি নেই। এটা বিশ্বকাপ এলেই বোঝা যায়। অনেক মানুষ আছে বিত্তবান তারা লাখ টাকা খরচ করে বিশ্বকাপ আয়োজক দেশে গিয়ে খেলা দেখে। আশা করা যায় বিপুল দর্শক ও ফুটবলপ্রেমীর দেশ আগামীতে বিদেশের মাঠ কাঁপাবে। এমনটি আমরা ভাবতেই পারি। অন্য দেশে বাংলাদেশের পতাকা উড়বে। আমাদের ফুটবলারদের নিয়ে আকর্ষণীয় সংবাদ হবে। অনেকের হার্ট থ্রব হবে তারা। যেমন মেসি, রোনালদো, নেইমার। বাফুফের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখার প্রত্যাশায় রইলাম। ট্রাঙ্ক রোড, ফেনী থেকে . নান্দনিক ও সৃজনশীল আমিনূর রশীদ বাবর ॥ ফুটবল সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। আর এই জনপ্রিয়তার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো ফুটবল একটি অসাম্প্রদায়িক উদার মনের খেলা। জাত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ এই খেলা খেলে, দেখে এবং ভালবাসে। ফুটবল একটি অসাধারণ, অনন্য খেলা। পৃথিবীতে অনেক খেলা আছে কিন্তু ফুটবলের মতো কোনটাই নয়। ফুটবল নান্দনিক, ছন্দোময় এবং সৃজনশীল খেলা। ফুটবল নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও দৃঢ় আত্মবিশ্বাস তৈরি করে। বল নিয়ে আরও অনেক খেলা আছে যেমন, ক্রিকেট, হকি, রাগবি ইত্যাদি। কিন্তু ফুটবলের মতো কোনটাই নয়। ফুটবল খেলা হাত ছাড়া শরীরের বাকি সব অংশ দিয়ে খেলতে হয়। যে কারণে মস্তিষ্কের সঙ্গে শরীরের সব অংশের সংযুক্তি ঘটে। এতে মেধা, জ্ঞান ও সৃষ্টিশীলতা বিকশিত হয়। যেমন- সামনের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে এড়িয়ে বল বুটের ডগা দিয়ে টুস করে সতীর্থের কাছে পাঠিয়ে দেয়া, সেই সতীর্থ মাথা দিয়ে আরেক জনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া, সেই খেলোয়াড় বুক দিয়ে বলটিকে নিয়ন্ত্রণ করে পায়ের নিচে চেপে ধরে এক পলক সময় নিয়ে সতীর্থের অবস্থান নির্দিষ্ট করে বলটি ঠিক তার কাছে পাঠিয়ে দেয়। সেই সতীর্থ একেবারে জ্যামিতিকভাবে প্রচ- শক্তিতে বলে কিক দিয়ে গোল করে দেয়। এই যে শৈল্পিক, সৃষ্টিশীল কারুকাজ করা হলো, এ কাজ করতে কতুটুক সময় লেগেছে? মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়। এই যে এক পলকের মধ্যে জগদ্বিখ্যাত একটি দৃষ্টিনন্দন খেলা আপানাকে উপহার দেয়া হলো জগতের আর কোন খেলা বা কোন সিনেমা বা কোন সংস্কৃতি অনুষ্ঠান আপনাকে তা দিতে পারবে না। যদি ক্রিকেট খেলার কথা বলেন, এ খেলায় ১৩ জনে খেলে আর বাকিরা সব বসে থাকে। বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে প্রথমেই বলব, ফুটবল খেলাকে করতে হবে শ্রদ্ধা। তা হলেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা যাবে। অতএব, আগে সম্মাান দিতে শিখি, লালন করা শিখি তারপর অনুশীলনের প্রয়োজন। আমার অনুরোধ বাজার থেকে একটি ফুটবল কিনে আপনার সন্তানের হাতে তুলে দিন। সে ছেলে হোক আর মেয়েই হোক তার হাতে বলটি দিয়ে তাকে খেলতে পাঠাবেন। অর্থাৎ যে দিন আপনি ফুটবলকে আপনার পরিবারের একটি অংশ হিসেবে মেনে নেবেন সেদিন থেকেই এ দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে যোগ্যতা অর্জনের যাত্রার সূচনা করবে। গীর্জাপাড়া, মৌলভীবাজার থেকে . চাই কঠোর অনুশীলন এহসান ॥ বাংলায় একটা কথা আছে- যত গুড় তত মিষ্টি- কথাটি লেখাপড়া ও খেলাধুলা এই উভয় ক্ষেত্রেই অতি প্রযোজ্য। যে ছাত্র বেশি লেখাপড়া করবে সে তত ভাল ছাত্র হবে আর যে খেলোয়াড় বেশি খেলাধুলার চর্চা করবে সে তত বেশি ভাল খেলোয়াড় হবে। এখন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার দর্শক টেলিভিশনের পর্দায় এই খেলা উপভোগ করছে। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা এই দুটো দেশের সমর্থকই দেশে বেশি। দেশের সর্বত্র আনাচে-কানাচে, পাড়া-মহল্লায় ফুটবল প্রেমিকরা এই খেলা দেখে অনেক আনন্দ উপভোগ করছে। আজকে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ফুটবলে যে জায়গা দখল করেছে সেটা কি তারা একদিনে অর্জন করতে পেরেছে? ব্রাজিলের স্বনামধন্য তারকা ফুটবল খেলোয়াড় পেলে আর আর্জেন্টিনার মেরাডোনা এরা কী একদিনেই ফুটবলে এত সুনাম অর্জন করতে পেরেছে? তাদের পরে এখন যারা ফুটবলে অসীম কৃতিত্ব দেখাচ্ছে তারাও তো একদিনেই এত বিখ্যাত খেলোয়াড় হননি। পৃথিবীর সব দেশে থেকেই বাছাই করে মোট ৩২টি দেশ ফুটবল বিশ্বকাপে খেলছে। শোনা যাচ্ছে আগামীতে বিশ্বকাপে ফুটবল খেলুড়ে দেশের সংখ্যা ৪৮টি বাছাইকৃত দেশে উন্নীত হবে। বাংলাদেশ যদি এখন থেকেই ফুটবলে ভালভাবে প্রশিক্ষণ নেয় তবে এই ৪৮ দেশে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য অসম্ভব কিছুই নয়। বেশিদিন আগের কথা নয় ক্রিকেটেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে ছিল। মেয়েরা তো ক্রিকেট খেলতে জানতই না। এখন কিন্তু ক্রিকেটে ছেলেরা ও মেয়েরা উভয় ক্ষেত্রেই অনেক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আর সেই দিন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা এশিয়া কাপ ঘরে তুলে নিয়ে এসেছে। এটা কী কম গৌরবের কথা? প্রসঙ্গ ছেলেই হোক বা মেয়েই হোক যদি ফুটবল খেলায় তারা বিশেষভাবে আত্মনিয়োগ করে আর যথাযথ অনুশীলন করে তাহলে ফুটবল খেলাতেও এরা অনেক নৈপুণ্য অর্জন করতে পারবে বলে আশা করা যায়। আর্জেন্টিনার মেসি আর ব্রাজিলের নেইমার আজকে এরা দু’জনই চমকপ্রদ ফুটবল খেলছে। নাইজেরিয়ার মূসা চমৎকার ফুটবল খেলে দুনিয়াবাসীকে অবাক করে দিয়েছে। এটা তো একদিনে সম্ভব হয়নি। কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে তারা ভাল খেলোয়াড় হতে পেরেছে। তাই আগামী বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে চাইলে এখন থেকেই বাংলাদেশের ফুটবল খেলোয়াড়দের এই খেলায় ভালভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে- চেষ্টা করতে আপত্তি কী? দেখা গেছে যে বা যারা চেষ্টা করছে তারাই কৃতকার্য হয়েছে। ব্রাজিল এই যাবত ৫বার বিশ্বকাপ জয় করেছে। আর ইতালী ৪ বার ও আর্জেন্টিনা ২ বার বিশ্বকাপ জয় করেছে। ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশই আজ ফুটবলের অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে, কারণ তারা ফুটবল নিয়ে সাধনা করে। আশা করা যায় বাংলাদেশও যদি এখন থেকে ফুটবল খেলা ভালভাবে অনুশীলন করে তবে নিশ্চয়ই তারা আগামী বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারবে। কলাবাগান, ঢাকা থেকে . ভাবনার ভরাডুবি আবদুল আজিজ ॥ কেউ দেখায় আশা আবার কেউ নিরাশা। মনে করি আমি কোন আশা নিরাশার মধ্যে নেই। বিশ্বকাপ নিয়ে মাপহীনভাবে চলছে তর্ক-বিতর্ক, মারামারি, জুয়া, পতাকা উড়ানো, জার্সি ও পতাকা কেনা। জমি বিক্রি করে পছন্দের দলের কিলোমিটার জুড়ে পতাকা তৈরি ও ব্রাজিল বাড়ি ইতোমধ্যে ভক্তের পাগলামি প্রকাশ পেয়েছে যা আকর্ষণ করেছে সেইসব দেশের রাষ্ট্রদূতসহ সারাদেশের মানুষের। সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন দেশের কোন নাগরিক পছন্দের দল হেরে যাবার জন্য আত্মহত্যা করে। এটা অস্বাভাবিক ও অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। ফেসবুকে ঢুকলেই বোঝা যায়, ভক্তদের পাগলামি, কে কিভাবে অন্য দলকে ছোট করতে পারে রীতিমতো একটা প্রতিযোগিতার মতো হয়ে গেছে। সারা বাংলাদেশ ছেয়েছে ভিনদেশীদের পতাকায়, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও এত পতাকা ওড়ে না। তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে দেশে ছেয়ে যাওয়া পতাকার মিছিল। সুশীল সমাজের মানুষ অতি বাড়াবাড়ি দেখছেন কিন্তু তারাও ভক্ত ফুটবলের, তাদের মধ্যে প্রিয় দলের প্রতি অনুরাগ আছে এবং প্রতিপক্ষ দলের প্রতি আছে শ্রদ্ধা, নেই ক্রোধের কোন স্থান। আসি দেশের ফুটবলের কথায়, আমরা যখন রাত জেগে রাস্তার মোড়ে প্রোজেক্টর কিংবা টিভিতে হৈহুলোড় করে খেলা দেখি, বিশ্বের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচিত হই তখন আমাদেরও ইচ্ছে হয় বাংলাদেশ খেলুক। গ্রামে দেখেছি অনেক প্রতিভাধর ছেলে এবং মেয়েকে যারা ভাল ফুটবল খেলে। তাদের শক্তি প্রকাশের কোন স্থান বা কোচ নেই। অকালে স্বপ্ন ভেঙে যায়। হঠাৎ উন্মাদনায় না ভেসে গ্রাম ইউনিয়ন, উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে গড়ে উঠুক ফুটবল চর্চার কেন্দ্র। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে হাজার পেলে, মেসি, নেইমার, রোনালদো যাদের বিকাশ নেই। দেশের প্রতিভার উঠতি সময় বা বয়সেই পতন। ব্যস এখানেই হয় আমাদের ভাবনার ভরাডুবি। দেশের মাথারা যদি একটু ভেবে উদ্যোগ নেই তাহলে আমরা ব্রাজিল বাজিল বা আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা বলে গলা না ফাটিয়ে বাংলাদেশ বলে অহঙ্কারে চিৎকার করতে পারব। বিদেশী খেলার ভিড়ে যেন দেশীয় খেলা হারিয়ে না যায় সেটার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকেই নিতে হবে এমন বিপ্লবী এবং সাহসী উদ্যোগ। আজাইপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে . ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা আরিফ হোসাইন হিয়া ॥ ফুটবল উন্মাদনায় ভাসছে দেশ। বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে খুব ছোট একটি দেশ। তবে ক্রিকেট পরাশক্তিগুলো বাংলাদেশের নাম খুব ভাল করেই জানে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ইত্যাদি দেশগুলোর বিপক্ষে জয় এখন আর অঘটন নয়। তাই ক্রিকেটে বাংলাদেশ যতটা সামনের পথ হাটছে ফুটবলে ততটাই বিপরীতে। ফুটবলে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থান ১৯৪তম। ফুটবলে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া নিয়ে কারও কোন মাথাব্যথা নেই। অনেকেই ভেবেই নিয়েছেন যে বাংলাদেশ কোনদিন বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না। যার কারণে বিভিন্ন দেশ নিয়ে বিভিন্ন সমর্থক তৈরি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জমে উঠেছে ২০১৮ সালের রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপ। তাই বিভিন্ন দেশ নিয়ে উন্মাদনার শেষ নেই। বিটিভিসহ অন্যান্য কয়েকটি বেসরকারী চ্যানেলে এই খেলা সরাসরি সম্প্রচার করছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ফুটবল দর্শক ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা এই দুভাগে বিভক্ত। এই নিয়ে আনান্দ উল্লাস ও মাতামাতির শেষ নেই। বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগে থেকেই রাস্তাঘাট ছেয়ে গেছে দুই দেশের পতাকায়। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেনের মতো দেশের কিছু সমর্থক থাকলেও মূলত ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। চায়ের দোকানের আড্ডা থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, রাস্তাঘাট বিভিন্ন জায়গায় বিশ্বকাপ গুঞ্জন। ব্রাজিল সমর্থক বনাম আর্জেন্টিনার সমর্থক নিয়ে বাংলাদেশে একটি নাটকও নির্মিত হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে যে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করা নিয়ে একই গ্রামের মানুষের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে এমনকি নায়ক-নায়িকার প্রেমের বিচ্ছেদ ঘটেছে। যে কোন দলকে কারও ভাল লাগতইে পারে বা সমর্থন করাও দোষের কিছু নয় কিন্তু এই নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে হবে এর তো কোন মানে হয় না। প্রতিদিন ফেসবুকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, প্রতিনিয়ত ব্রাজিলের সমর্থকরা আর্জেন্টিনা বা আর্জেন্টিনার সমর্থকরা ব্রাজিল সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে হিংসা ও বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা প্রচার করছে। অহেতুক কথাবার্তা, বিতর্ক, মারামারি, সম্পর্কের অবনতি, সময়ের অপচয় ইত্যাদি ঘটছে। ‘স্বামী ব্রাজিলের খেলা দেখায় স্ত্রীর আত্মহত্যা’ ( দৈনিক যুগান্তর ২৭ জুন, ২০১৮)। দল নিয়ে মজা করা যায় তবে এই মজার ফলাফল যদি এমন হয় তাহলে এই আবেগী সমর্থকের আদৌ দরকার আছে কি? খুব খারাপ লাগে এই বলে যে বাংলাদেশ কি সারাজীবন ফুটবল বিশ্বকাপের দর্শক হয়ে থাকবে? বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের যোগ্যতা কি অর্জন করতে পারবে না। আমার আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশ একদিন না একদিন ঠিকই খেলবে। তবে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করতে হলে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ভাল প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারী তদারকি প্রয়োজন। এছাড়াও দেশের বাইরের প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে খেলার আয়োজন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। হয়ত অনেক সময় লাগবে তবে এই প্রচেষ্টাগুলো যেন কখন থেমে না থাকে। একদিন সত্যিই নিজ দেশের সমর্থক হয়ে ফুটবল বিশ্বকাপ উদযাপন করতে পারব। তখন আর অন্য দেশ নিয়ে এত মাতামাতি থাকবে না। থাকবে না কোন সমর্থকদের মাঝে দল সমর্থন বৈষম্য যেমনটা ক্রিকেটে নেই। শুভ কামনা বাংলাদেশ ফুটবল দলের জন্য, এগিয়ে যাও বাংলাদেশ। নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×