ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

আশাপূর্ণা

সাঁতারু আঁখির স্বপ্নভঙ্গ

প্রকাশিত: ০০:০৬, ২৪ মে ২০২২

সাঁতারু আঁখির স্বপ্নভঙ্গ

স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আজকের যাত্রা শুরু হয় শাহিদা আক্তার আঁখির। মতি নন্দীর কোনি উপন্যাস থেকে ১৯৮৬ সালে সিনেমা তৈরি হয়। সেখানেই সাঁতার কোনি শেষ পর্যন্ত হারেনি। তার মাস্টার মশাই পাশে ছিলেন। কিন্তু আজকের আঁখি যেন হেরে যাওয়া এক কোনি। আঁখির বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবতলায়। বেহাইচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও এসমা খাতুন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। চারবোন আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে সংসার তার। চার বছর আগে বাবা আব্দুল মান্নান স্টোক করে মারা যান। তাই তাঁর ভাজাপোড়ার দোকানটি উঠে যায়। বিপদগ্রস্ত এই পরিবারটির হাল ধরেন আঁখির তৃতীয় বোন মহিমা আক্তার। স্বামী পরিত্যক্তা, এক সন্তানের জননী এনজিওতে চাকরি নিয়ে মা-বোনের বেঁচে থাকার উপায় বের চলেছেন। মাত্র ৪/৫ বছর বয়স থেকেই আঁখি সাঁতারে দক্ষ হয়ে উঠেছিলো। কোচ পাশের বাড়ির হুমনে রাকিবের হাত ধরেই তার সাঁতারের জগতে প্রবেশ। ঢাকা ধানম-ি মহিলা কমপ্লেক্সে বেস্ট স্ট্রোকে মাত্র ৮-১০ বছরে তৃতীয় হয়। সপ্তম শ্রেণীতে পড়বার সময় জাতীয় সুইমিং ফেডারেশনের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়। ধানম-ি মহিলা কমপ্লেক্সে তিন চার প্রথম স্থান অধিকার করে। দ্বিতীয় তিনবার, তৃতীয় হয় দুইবার। ব্যক্তিগতভাবে তার চাম্পিয়ন ট্রফি আছে। ২০১৭ তে সেরা সাঁতারের জেলা পর্যায়ে দ্বিতীয় হয়েছে। ঢাকায় গিয়ে আর এগোতে পারেননি। যারা খেলাধুলা করে তাদের পুষ্টিকর খাবারসহ অন্যান্য অনেক খরচ থাকে। আঁখির দরিদ্র পরিবার পারেনি চালাতে। অভাবের কারণে আঁখি সাঁতার ছেড়ে দিল। অভাব, স্বামী পরিত্যক্তা বোন এবং ভাগনীকে নিয়ে চিন্তিত আঁখির আর সাঁতারের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। যে মেয়েটি জলেই প্রাণ পেতো, হয়ে উঠতো অনন্যা আজ অভাবদানবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ছেড়ে দিয়েছে প্রিয় জল। যদি তখন তার একটি স্থায়ী উপার্জন থাকতো, তবে তিনি আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সম্পদ হয়ে উঠতেন। এখন তার ইচ্ছা পড়াশোনা করে একটি চাকরি পাওয়া, যেটি তার পরিবারকে বাঁচিয়ে তাকে যোগ্য মর্যাদা দেবে সমাজের কাছে। আঁখি এখন বাংলায় সম্মান শ্রেণীতে প্রথম বর্ষে পড়ছে, বালুগ্রাম আদর্শ কলেজে। আবৃত্তি, নাটকসহ কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে স্বচ্ছন্দ। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, সাঁতারের দিনগুলোর স্মৃতি তার খুব ভাল লাগে। সচেতন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের ভাল চান। অন্য সাঁতারুরা যেন অভাবের কারণে সুমিইং না ছাড়ে এটাই তার প্রত্যাশা। স্বপ্নভঙ্গে বেদনায় আঁখি কিন্তু থেমে যায়নি। তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন শত প্রতিকূলতার মধ্যে। তার সুন্দর স্বাপ্নিক জীবন কামনা করি। সম্মান জানাই লড়াকু আঁখিকে।
×