ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের সর্ববৃহত ও সর্বাধুনিক পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী রাবনাবাদ নদীতে বর্ণিল সাজে সজ্জিত রঙিন পালতোলা দুই শতাধিক নৌকা থেকে পতাকা উড়িয়ে ও গানের সুরে সুরে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন

প্রতিটি ঘর আলোকিত ॥ মুজিববর্ষে সবচেয়ে বড় সাফল্য

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২২ মার্চ ২০২২

প্রতিটি ঘর আলোকিত ॥ মুজিববর্ষে সবচেয়ে বড় সাফল্য

বিশেষ প্রতিনিধি/নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াদা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত করা হয়েছে মন্তব্য করে বলেছেন, এই দিন আলোর পথে যাত্রার সফলতার সেই দিন। যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলে রেখে গিয়েছিলেন, আজকে সেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ওয়াদা করেছিলাম প্রতিটি মানুষের ঘর আলোকিত করব। প্রতিটি মানুষ আলোকিত হবে। আলোর পথে আমরা যাত্রা শুরু করেছি। আজকের দিনটা সেই আলোর পথে যাত্রা যে সফল হয়েছে সেই দিন। সোমবার পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকার কারণেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটতে পারছে। মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং আগামীতে রোজা ও ঈদ; এই রোজা-ঈদ সবকিছু সামনে রেখে এই তাপবিদ্যুত কেন্দ্র আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম। মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত করেছে সরকার, এটাই সব থেকে বড় সাফল্য। জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল জানিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ইনশাল্লাহ আর সেই নাম কখনও কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। খুনী আর ওই যুদ্ধাপরাধীরা আর কখনও এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। খুনী ও যুদ্ধাপরাধীরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল, জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। মানুষ নিজেই আজকে জেগেছে, উঠে দাঁড়িয়েছে এবং এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাব আমরা ভবিষ্যতের দিকে। আরও পথ পাড়ি দেয়া যে বাকি আছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ এই চলার গতি আর কেউ থামাতে পারবে না। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটুয়াখালী পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোভিড মহামারী শুরুর পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাইরে দেশে অন্য কোথাও এটিই তার প্রথম সফর। কলাপাড়ায় পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের কোল জেটিতে যান। রাবনাবাদ নদীতে বর্ণিল সাজে সজ্জিত রঙিন পাল তোলা দুই শতাধিক নৌকা থেকে পতাকা উড়িয়ে এবং গানের সুরে সুরে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জেলেদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এক পর্যায়ে নিজ মোবাইলে অপরূপ এই দৃশ্য ধারণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ বিদ্যুত কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন এবং মঞ্চে এসে বিদ্যুত কেন্দ্রের নামফলক উন্মোচন করেন। বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতার স্মারক হিসেবে ১ হাজার ৩২০টি পায়রা এবং বেলুন ওড়ানো হয় এ সময়। বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধনের পর সেখানে সংক্ষিপ্ত সুধী সমাবেশে অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ১৩শ’ ২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিসহ কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুত কেন্দ্রের উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে ‘মেমেন্টো’ উপহার দেয়া হয়। তাকে উৎসর্গ করে ‘ও জোনাকি কি সুখে ঐ ডানা দুটি মেলেছ’ শিরোনামে একটি গানও এ সময় পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে বিদ্যুত খাতের অগ্রগতি এবং পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের একটি অডিও-ভিডিও উপস্থাপনাও প্রদর্শিত হয় পরিবেশবান্ধব আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির সাহায্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ‘মুজিববর্ষে’ দেশকে শতভাগ বিদ্যুত কভারেজের আওতায় আনার সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে আরেকটি মাইলফলক অর্জন করল। আর কোভিডের পর এটিই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগতভাবে প্রথম কোন উন্নয়ন প্রকল্পে সশরীরে অংশগ্রহণ। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র করে গোটা কলাপাড়ায় ছিল সাজ সাজ রব। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সেতু বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করা হয়। বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন স্থাপনার ছবি, ব্যানার- ফেস্টুনে ছেয়ে যায় গোটা উপজেলা। পর্যটন স্পট কুয়াকাটা থেকে পায়রা পাওয়ার প্লান্ট এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজমান ছিল। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুত বিভাগের সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এম খোরশেদুল আলম। এ সময় সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিববৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্ববৃহৎ এই অত্যাধুনিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার সাফল্য তুলে ধরে বলেন, মুজিববর্ষে দেশের প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত করেছে সরকার, এটাই সব থেকে বড় সাফল্য। আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে আমরা আলো জ্বালতে পারলাম এটাই হচ্ছে বড় কথা। আমরা আলোকিত করেছি এদেশের প্রত্যেকটি মানুষের ঘরকে। পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুন্দর ও উন্নত জীবন পায়, সেজন্যই আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা মহৎ কাজ করে যাচ্ছিলেন, আর মহৎ কাজের জন্য মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগ প্রয়োজন। এটাও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কথা। সেই কথাটা স্মরণ রেখেই- যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন, মা জীবন দিয়ে গেছেন, ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন- আমি তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করে এই বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমি মনে করি মুজিব আদর্শের প্রতিটি সৈনিকের সেটাই স্মরণ রাখতে হবে। ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর এদেশকে এগিয়ে নেয়ায় কোন আন্তরিকতাই ছিল না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০২২ সাল এই দীর্ঘ সময় সরকারে থাকতে পেরেছি সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। ভোট দিয়ে আমাদের তারা নির্বাচিত করেছেন। এই ১৩ বছর একটানা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অব্যাহত রয়েছে, এরমধ্যে ঝড়-ঝঞ্ঝা অনেক এসেছে, বাধা অনেক এসেছে কিন্তু সেগুলো আমরা অতিক্রম করেছি। এগুলো অতিক্রম করেও আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। সর্ববৃহৎ এই বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে সহযোগিতা করায় চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে জাতির পিতা একে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে গিয়েছিলেন, আজকে সেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজ বাস্তবে রূপ দেয়া হলো। জাতির পিতার উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ’৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় দেশের অধিকাংশ অঞ্চল অন্ধকারে ডুবে থাকার এবং মাত্র ১৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় সেই অবস্থা থেকে বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট করে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী ৫ বছরে বিএনপি-জামায়াত সরকার ১ ইউনিট বিদ্যুত উৎপাদনতো বাড়াতেই পারেনি বরং কমিয়ে ফেলে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট থেকে তার সরকার আজকে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আলোয় উদ্ভাসিত করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, আজকে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা গড়ে তুলেছি, যাতে সকলের কর্মসংস্থান হতে পারে। যে দক্ষিণাঞ্চল এক সময় সব থেকে অবহেলিত ছিল সেখানে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার পাশাপাশি মানুষের চলাচল সহজ করার জন্য রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রিজ আমরা ব্যাপকভাবে করে দিয়েছি। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি, ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান সবদিকেই আমরা ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি, যা জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের অনুসরণে তার সরকার ভূমিহীন গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। কারণ তার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে একটি মানুষও আর গৃহহীন এবং ঠিকানাবিহীন থাকবে না বা কষ্ট ভোগ করবে না। ইনশাল্লাহ সেটাও আমরা করে ফেলব, এতে কোন সন্দেহ নেই। এই দক্ষিণাঞ্চলের দশমিনায় বীজ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসল উৎপাদনে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রবণ এই এলাকায় এখন তাপবিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। অথচ সারাবছরে এখানে একটি মাত্র ফসল উৎপাদিত হতো। আর তাও প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হলে তাদের দুর্র্ভিক্ষে পড়তে হতো। আল্লাহর রহমতে আর সে দুর্ভিক্ষ হবে না এবং মানুষকে আর কষ্ট পেতে হবে না বরং মানুষ উন্নত জীবন পাবে। তিনি বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে রাঙ্গাবালী, নিঝুম দ্বীপ, সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর নিচ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত পৌঁছে দিয়েছে। আর যেখানে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন নেই সেখানে সোলার প্যানেল করে দিচ্ছে। হাওড়-বাঁওড়, পাহাড়ী দুর্গম এলাকায় এই সোলার প্যানেলের সাহায্যে বিদ্যুত পৌঁছে দিচ্ছে। অর্থাৎ কোন ঘর আর অন্ধকারে থাকবে না, প্রতিটি মানুষের জীবন আলোকিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা এগিয়ে যেতে পারে সে পদক্ষেপ যেমন তার সরকার নিচ্ছে, তেমনি দেশের যুব সমাজ লেখাপড়া শিখে যাতে নিজেরাই উদ্যোক্তা হতে পারে তার সুযোগও সৃষ্টি করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে যাতে আরও ১০টি লোককে তারা কাজ দিতে পারে সেভাবেই যুব সমাজকে চিন্তা করতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে। এ কারণে তার সরকার দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যাণ চিন্তা করেই প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তার সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পসহ এই বিদ্যুত কেন্দ্রে কর্মরতদের অভিজ্ঞতার ভা-ার স্ফীত হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ভবিষ্যতে যেকোন উন্নয়ন প্রকল্প আমরা নিজেরাই বাস্তবায়ন করতে পারব, সেই রকম অভিজ্ঞতা আমরা নিজেরাই অর্জন করছি। তিনি উপকূলে সবুজবেষ্টনি গড়ে তোলার এবং বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে উৎপাদনে নিজেদের সম্পৃক্ত করার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী আগামী আষাঢ় মাস থেকে আওয়ামী লীগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী সফল করতে দলের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটি কাঁচামরিচ গাছও যদি পারেন আপনারা লাগাবেন এবং সবাই কিছু না কিছু উৎপাদন করবেন এবং কৃষকের পাশে দাঁড়াবেন। তিনি করোনার সময় ধান কাটায় তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এগিয়ে আসার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এইভাবে সকল কাজে আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে যাতে বাংলাদেশ আর পেছনে না ফেরে। বিশ্বের ১৩তম দেশ বাংলাদেশ ॥ পায়রা ১৩শ’ ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রটি দক্ষিণ পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার অন্তর্গত রামনাবাদ নদীর পাশে ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ১০০০ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যুত উৎপাদনে আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের ১৩তম দেশে পরিণত হয়েছে। পাওয়ার প্লান্টের প্রথম ৬৬০ মেগাওয়াট ইউনিটটি ২০২০ সালের মে মাসে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়, ৪০০ কেভি পায়রা-গোপালগঞ্জ পাওয়ার ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে এবং দ্বিতীয়টি গত বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু করে। ১৩শ’ ২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুত কেন্দ্র ছাড়াও আরেকটি পাওয়ার প্লান্টের নির্মাণ কাজ চলছে এবং সরকারের আরও একটি ১৩২০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট এবং এখানে পায়রায় একটি সোলার সিস্টেম পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্লান্টটি তৈরি করছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল), চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এর মধ্যে একটি ৫০:৫০ যৌথ উদ্যোগ। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং এনইপিসি এবং সিইসিসি-এর কনসোর্টিয়াম পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের জন্য ২৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে ইপিসি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ এবং ৭৪ শতাংশকে বিদ্যুত নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছে। বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট হয়েছে, যা ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট ছিল। এর মধ্যে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে এবং ১৯ হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে।
×