চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে বইয়ের মধ্যে ডুবে যাওয়ার ব্যাপারটাই তো অন্য রকম! বুক ক্যাফে পাশ্চাত্যে খুব পুরনো বিষয় হলেও আমাদের দেশে এ নিয়ে কাজ হয়েছে মাত্র কয়েক বছর হলো। তেমনই একটি উদ্যোগ নিয়ে পথ চলছেন দুই বোন নাহিদ নেওয়াজ ও রুনি মোস্তফা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীত পাশে এক বছর আগে ‘অপরাজিতা’ নামে ক্যাফে চালু করলেন। যেখানে ফাস্টফুডসহ সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। পাশাপাশি বই পড়ার সুযোগ তো আছেই। লিখেছেনÑ আলম মাহফুজ
চিন্তা যখন এলো...
নাহিদ নেওয়াজ জানান, লকডাউনে দীর্ঘ সময়ে ঘরে বসে চিন্তিত ছিলাম। তড়িঘড়ি করে বাড়িতে আসার কারণে সঙ্গে কোন বইপত্র ছিল না। খুলনার বেশ কিছু লাইব্রেরিতে সিলেক্টিভ কিছু বই কিনতে গিয়ে পেলাম না। তখন থেকে ইচ্ছে হলো একটা লাইব্রেরি দেয়ার।লাইব্রেরি দেয়ার ইচ্ছে থেকে ক্যাফে উইথ লাইব্রেরির ধারণা মাথায় এলো। সাধারণত পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ক্যাফের ধরনটা এমন যে, বই পড়ার পাশাপাশি চা,কফি, স্ন্যাকস থাকে যা আমাদের দেশে তেমনটা দেখাই যায় না। থাকলেও আছে হাতেগোনা কয়েকটি। তা ছাড়া মানুষকে বইমুখী করা উচিত।
‘অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী না হলে নারীর কথার দাম থাকে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা প্রতিবাদ করতে পারে না।’ এমন কথার প্রচলন থেকে বেরিয়ে আসা কি খুব দ্রুত সম্ভব?
বলা আর বাস্তবতার ফারাক যতই থাকুক নারী কিন্তু চার দেয়ালে আগের মতো বন্দী নেই এখন। প্রতিনিয়ত তাদের সাফল্যের গল্পে আমাদের আশাবাদের জায়গা দৃঢ় করছে। নাহিদ জানান, কিছু প্রিয় মানুষের সহোযোগিতায় কাজটি সহজ হয়েছে। আমার বড় বোন রুনি মোস্তফার কথা বিশেষ করেই বলতে হয় যিনি প্রতিটা পদক্ষেপে পাশে ছিলেন, বন্ধু এস এম শাহরুজ্জামান, ছোট ভাই ওয়াহিদুজ্জামান রাব্বি এবং দুজন কর্মী নিয়ে আমরা এটা শুরু করি। মোটামুটি পারিবারিকভাবেই আমরা এটা পরিচালনা করছি।
অপরাজিতা ক্যাফের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, শিল্প ও অমায়িক আতিথেয়তার মধ্য দিয়ে পাওয়া যাবে বাঙালিয়ানার একটি পরিপূর্ণ আমেজ। নতুন কিছু করা চ্যালেঞ্জিং, সেই চ্যালেঞ্জিং কাজটাই করেছেন নাহিদ নেওয়াজ। এমন উদ্যোগের ইতিবাচক মূল্যায়ন পাচ্ছেন তেমনি মিলছে অনুপ্রেরণা। বললেন, অনুপ্রেরণার কথা বলতে গেলে প্রথমেই যার নাম আসেন তিনি হলেন আমার শ্রদ্ধেয় বাবা। তারপর আমার মা। বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বরাবরের মতোই আমার প্রিয় শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. হানিফ মিয়া স্যার এবং আমার কিছু কাছের প্রিয় মানুষ।
অপরাজিতা নিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা বলছিলেন নাহিদ নেওয়াজ, অপরাজিতা আমার মূল পেশা নয়। আবৃত্তি, উপস্থাপনা, নাটক, সঙ্গীতের মতো এটিও আমার একটি শখ। এ ছাড়া মানুষকে বইমুখী করা ও সঙ্গে বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য স্বনির্ভর হওয়ার একটি দিকনির্দেশনা দেয়াই আমার উদ্দেশ্য। আমার লেখালেখির পাশাপাশি নারী শিশুদের জন্য কাজ করতে পারাটা আমার স্বপ্ন।