ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরসার কার্যকলাপ কিসের ইঙ্গিত

আশ্রয় পেয়েও মানবতা রক্ষা করেনি রোহিঙ্গারা, গড়ছে অস্ত্রের মজুদ

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ৮ জানুয়ারি ২০২২

আশ্রয় পেয়েও মানবতা রক্ষা করেনি রোহিঙ্গারা, গড়ছে অস্ত্রের মজুদ

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ওপর যখন দেশটির সেনা বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা বর্বর নির্যাতন-গণহত্যা চালাচ্ছিল, প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে জড়ো হয় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু। তখন ফিরে যাবার শর্তে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আশ্রয় চায় রাখাইন রাজ্যে বাসিন্দা ওই রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ওইসময় ঢাকাকে সুপারিশ করে বিদেশী একাধিক মানবাধিকার সংস্থার নেতৃবৃন্দও। তখন প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মানবতা রক্ষা করেনি রোহিঙ্গারা। তারা মানবপাচার, মাদক কারবার, অস্ত্র সংগ্রহ ও মজুদ করে চলেছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একাধিক নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলে পড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার জের ধরে দেশটির সরকারী বাহিনী সাধারণ রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাওপোড়াও শুরু করলে রোহিঙ্গারা প্রাণে বাঁচতে আশ্রয় দিতে প্রার্থনা জানায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্যাতিত ওইসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেন বাংলাদেশে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরবর্তী তিন মাসে প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। এ সময় দেশটির চিহ্নিত কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসীও ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবেও অসংখ্য রোহিঙ্গা রয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পকেন্দ্রিক অবস্থান করছে। তারা দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বিচরণ করতে পারে না। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে- বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মূল কারণটি হচ্ছে পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়া। পুরনো রোহিঙ্গারা এদেশের বিভিন্ন স্থানে দালান কোটা নির্মাণ, জাতীয় সনদ সংগ্রহ ও বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করে বাংলাদেশী নাগরিকদের মতো বসবাস করছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি অংশের দাবি তাদেরও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হোক। তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি নয়। তাদেরও এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেয়া হোক। এসব রোহিঙ্গার পেছনে ইন্ধন যোগাচ্ছে কতিপয় এনজিও। তারা চাইছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করুক। ভারতে এনজিও প্রতিনিধিগণ রোহিঙ্গাদের সেবা দিচ্ছে বটে, বাংলাদেশের মতো রোহিঙ্গাদের জামাই আদরে রাখতে পারে না। তারা থাকতে ও আরাম আয়েশ করতে পারে না ফাইভস্টার হোটেলে। রোহিঙ্গাদেরও আশ্রয় ক্যাম্প থেকে বাইরে যাওয়া নিষেধ রয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ভয়ঙ্কর ও সন্ত্রাসী। তারা মাদক কারবার করে অস্ত্র কিনে মজুদ করছে। বিশ্লেষকরা এটি দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছেন। মিয়ানমারের ক্যাম্প থেকে অনায়াসে আসছে-যাচ্ছে রোহিঙ্গারা ॥ কোনারপাড়া ক্যাম্পের কমিটি প্রধান আরেফ আহমদ ও দিল মোহাম্মদ বাংলাদেশে আসা যাওয়া করে থাকে প্রতিদিন। তারা উচ্চ মূল্যের মোবাইল সেট হাতে নিয়ে তুমব্রুসহ উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘুরে বেড়ায়। ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে সরবরাহ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে। এমনকি মিয়ানমার সরকারের কাছে দেশের গোপনীয়তাও ফাঁস করছে তারা। মিয়ানমার অভ্যন্তরে স্থাপিত ওই ক্যাম্প থেকে প্রতিদিন রোহিঙ্গারা তুমব্রু বাজারে কেনাকাটা করতে আসে তা সবাই জানে। বিভিন্ন ক্যাম্পে স্বজনদের কাছে আসে এবং কয়েকদিন পর ওপারের ক্যাম্পে ফিরে যায়। সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে অবস্থিত ওই ক্যাম্পটিতে রয়েছে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দলপতিসহ বহু ক্যাডার। কোনারপাড়া ক্যাম্পে অন্তত দুই শতাধিক ভারি অস্ত্র জমা আছে বলে একাধিক সূত্র থেকে খবর মিলছে। বিশ্লেষকরা বলেন, শুক্রবার উদ্ধার হওয়া বিপুল অস্ত্রশস্ত্রও কোনারপাড়া ক্যাম্পে মজুদ করতে তুমব্রু জঙ্গলে লুকিয়েছিল সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা। যেভাবে জব্দ হয় অস্ত্রশস্ত্র ॥ নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমের তুমব্রু পাহাড়ে ঝুপ-জঙ্গলে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কথা জানতে পারে র ্যা ব। শুক্রবার অভিযানে যায় র ্যা বের একটি দল। মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় দুটি বিদেশী পিস্তল ও লাকড়ির বোঝা থেকে এবং শরীর তল্লাশি করে ৬টি দেশীয় তৈরি অস্ত্রসহ মোট ৮টি অস্ত্র ও বেশকিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করে তারা। এ সময় ৪ রোহিঙ্গাকে হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয় র ্যাব। আটক মৃত আশুক জামানের পুত্র মোহাম্মদ নুর, ইমাম হোসেনের পুত্র নাজিমুল্লাহ, ছৈয়দুল ইসলামের পুত্র আমান উল্লাহ ও আব্দুর সাবুরের পুত্র মোঃ খাইরুল আমিন উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত বলে জানা গেছে। যেভাবে লুট করা হয়েছিল সরকারী অস্ত্র ॥ মিয়ানমারে আল-ইয়াকিনের অস্ত্রের প্রয়োজন হওয়ায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘাপটি মেরে থাকা আরএসও ক্যাডারদের দিয়ে আক্রমণ করা হয় টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরে আনসার ব্যারাকে। ভারি অস্ত্র নিয়ে আরএসও জঙ্গীরা হামলে পড়ে আনসার ব্যারাকে। অস্ত্র ভান্ডারের চাবি না দেয়ায় হত্যা করা হয় আনসার কমান্ডার আলী হোসেনকে। লুট করা হয় আনসারের ১৬টি অস্ত্র সাড়ে তিন হাজার গুলি। লুণ্ঠিত অস্ত্রগুলো মিয়ানমারে আল-ইয়াকিনের কাছে পাঠাতে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু পাহাড়ের জঙ্গলে মাটির ভেতর। পরে অবশ্য উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প এলাকা থেকে নুরুল আলম নামে এক আরএসও ক্যাডারকে গ্রেফতারের পর র্যা ব সদস্যরা ওই পাহাড় থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্রগুলো উদ্ধার করেছিল।
×