ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাইব্যুনালে বাদী হওয়ার খেসারত

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে হত্যাচেষ্টা, কক্সবাজার তোলপাড়

প্রকাশিত: ২৩:২০, ২৬ নভেম্বর ২০২১

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে হত্যাচেষ্টা, কক্সবাজার তোলপাড়

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মহেশখালীতে রাজাকারপুত্রের বাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমজাদ হোসেন মারাত্মক জখম হওয়ার ঘটনায় জেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় রাজাকার, বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে তার রক্ত পথে পথে ঝরাবে, এটা মেনে নেয়া যায় না বলে মত প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজ। পূর্বপরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী হামলার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে জানান, বুধবার এশার নামাজ পড়ে রাতে বাড়ি ফেরার পথে মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদ মিয়ার নির্দেশে তার ছেলেসহ প্রায় ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল আদালতে মহেশখালীর রাজাকারদের বিরুদ্ধে বাদী হওয়ায় মেয়র মকছুদ মিয়ার নির্দেশে তাকে খুন করার উদ্দেশ্যে মেয়রপুত্রসহ তার স্বজনরা এই জঘন্যতম হামলা চালিয়েছে। সচেতন মহল বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তারা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানী বর্বর হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করার মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিনিয়ে এনেছিলন মুক্তিযোদ্ধারা। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এই মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের অহঙ্কার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এ অবস্থায় মহেশখালীতে মুক্তিযোদ্ধার ওপর এভাবে হামলার ধিক্কার জানিয়ে রাজাকার পুত্র মকছুদ মিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, মহেশখালী পৌর মেয়র মকছুদ মিয়া বাহিনীর হামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমজাদ হোসেন গুরুতর আহত হওয়ায় বিব্রত জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রভাবশালী মেয়র মাকছুদ মিয়া ও বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডারদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছে না বলে জানা গেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমজাদ হোসেনকে মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকসুদ মিয়ার দুই পুত্র, তিন ভাগিনা ও স্বজনরা মারাত্মকভাবে আহত করেছে। বুধবার রাত সাড়ে আটটায় গোরকঘাটা লিডারশীপ কলেজ সংলগ্ন রাস্তায় এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকসুদ মিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাডাররা গত ১৯ অক্টোবর রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনের চিংড়ি প্রজেক্টে লুটপাট চালায়। পাহারাদার ও কর্মচারীদের অস্ত্রের মুখে তাড়িয়ে দিয়ে মেয়র মকছুদ মিয়া দখলে নেয় ওই চিংড়ি ঘেরটি। থানায় মামলা না নেয়ায় আদালতের শরণাপন্ন হলে বিচারক এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে মহেশখালী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। মামলার পর থেকে মকছুদ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধা আমজাদের ওপর। এছাড়াও যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের বাদী হওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনকে খুন করার উদ্দেশ্যে মেয়র মকছুদ মিয়ার নির্দেশে তার ভাই আতাউল্লাহ বোখারী, তার ছেলে নিশানসহ ১৫-২০ জন নির্দয়ভাবে সশস্ত্র হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন তার ছেলে আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন। যুদ্ধাপরাধী মামলার সুনির্দিষ্ট তথ্যমতে, যুদ্ধাপরাধী মামলার তালিকায় ২২ নম্বর আসামি হাশেম সিকদার ওরফে বড় মোহাম্মদের পুত্র মকছুদ মিয়া। মকছুদ মিয়ার বাবা শান্তি কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার চাচা মৌলবি জাকারিয়া সিকদার ওই কমিটির সভাপতি ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি। ট্রাইব্যুনাল থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া ১৯৭১ সালে হিন্দু সম্প্রাদায়ের ওপর তা-বলীলা চালিয়েছেন ওই পরিবারের ৯ সদস্য। যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আদালতে বিচার চলমান রয়েছে। একাধিকবার কল করেও রিসিভ না করায় মেয়র মকছুদ মিয়ার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
×