ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান খুঁজতে মিয়ানমারকে চাপ দিন

প্রকাশিত: ২১:৫২, ১৬ অক্টোবর ২০২১

রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান খুঁজতে মিয়ানমারকে চাপ দিন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ জার্মানিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে বার্লিনের বেলভিউ প্রাসাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে (বার্লিন সময়) জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমায়ারের এক সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি এ সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সমস্যার একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য জার্মানিসহ সকল আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বাসসর। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীনের বরাত দিয়ে বঙ্গভবনের একজন মুখপাত্র বাসসকে জানান, রাষ্ট্রপতি জার্মানে উচ্চশিক্ষা নিতে ইচ্ছুক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভিসা সহজ করার জন্য জার্মান সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি গত ৯ অক্টোবর থেকে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে তার ১২ দিনের মেডিক্যাল চেকআপের অংশ হিসেবে বার্লিনে রয়েছেন। আবদুল হামিদ চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কটে জার্মানির সমর্থন এবং মিয়ানমারের জন্য উন্নয়ন সহযোগিতা স্থগিত করার এবং জাতিসংঘে বিষয়টি উত্থাপনের (জার্মানি) জন্য জার্মান সরকারকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, ‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আংশিক এবং অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরের ব্যাপারে জার্মানির নীতিগত সহায়তার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। এ লক্ষ্যে আমাদের সরকার এখন জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর)-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। জার্মানির সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকায় বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, সিমেন্স (বিদ্যুত, টেলিযোগাযোগ) এবং ভেরিডোসের (ই-পাসপোর্ট) মতো শীর্ষস্থানীয় জার্মান কোম্পানির অভিজ্ঞতা অন্যান্য জার্মান উদ্যোগের জন্য ভাল উদাহরণ হবে। রাষ্ট্রপতি সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ফেলোশিপের (Bangabandhu Professorial Fellowship) ব্যবস্থা করায় জার্মানিকে ধন্যবাদ জানান। বৈঠকে জার্মানিকে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জার্মান সরকার দেশের স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশকে যে উন্নয়ন সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদান করে বাংলাদেশ তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করে। রাষ্ট্রপতি তার জার্মান প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আমরা জার্মানির সাম্প্রতিক দেয়া প্রায় ৮০০,০০০ এ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা এবং প্রায় ৩০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা আগামী বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী যথাযথভাবে উদ্যাপনের অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন যে, পূর্ব জার্মানিই প্রথম ইউরোপীয় দেশ যারা ১৯৭২ সালের জানুয়ারির প্রথমদিকে একটি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং পশ্চিম জার্মানি ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২১ সালের মার্চে জার্মান রাষ্ট্রপতি তার সুচিন্তিত বার্তা দেয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান। ওই বার্তায় তিনি বাংলাদেশকে একটি গতিশীল গণতান্ত্রিক (ভাইব্রেন্ট ডেমোক্রেসি) দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেয়া সাহসী সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করে রাষ্ট্রপতি হামিদ আশা প্রকাশ করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সুরক্ষায় জার্মানির নতুন আইনী ব্যবস্থা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়তা দেখাবে। বাংলাদেশ ও জার্মানির একসঙ্গে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য কাজ করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে স্থিতিশীল দেশ। কারণ, এটি সব ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বজায় রাখে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমরা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) পর্যায় থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানির দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করে জার্মান প্রেসিডেন্ট দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে সফর বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করে জার্মান প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে তার দেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানান। সাক্ষাতকালে তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতিসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। সাক্ষাতকালে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন এবং জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
×