ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে শোকের ছায়া

নৌকায় বৌভাতে যাওয়ার পথে বজ্রপাত, ১৭ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ৫ আগস্ট ২০২১

নৌকায় বৌভাতে যাওয়ার পথে বজ্রপাত, ১৭ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী/ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মা নদীতে নৌকাযোগে বৌভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা গ্রামে নদীর ধারে এ ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন অনেকেই। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাওয়ার পথে ঘাটে নেমে একটি কুঁড়েঘরে আশ্রয় নেয়ার পর প্রবল বর্ষণের সঙ্গে বজ্রপাত হলে তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহতদের শিবগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃতদের পরিচয় জানতে সূর্যনারায়ণপুরে গেছেন পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রাকিব শিবগঞ্জ থানা পুলিশের দল বলে জানিয়েছেন শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফরিদ। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব-আল-রাব্বী জানান, ১৭ জন মারা গেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি পরিবারের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ঘাটাপাড়ার সাত্তার আলীর ছেলে সহবুল (৩০), চর সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের টিপুর স্ত্রী বেলী বেগম (৩২), মহরাজনগর ডানপাড়ার জামালের ছেলে লেচন (৫০), রফিকুল ইসলামের ছেলে বাবলু (২৬), একই গ্রামের মৃত সৈয়ব আলীর ছেলে তবজুল (৭০), তবজুলের স্ত্রী জমিলা (৫৮), ছেলে সাদল (৩৫), তেররশিয়া দক্ষিণপাড়ার মৃত মহবুলের ছেলে রফিকুল (৬০), সূর্যনারায়ণপুরের ধুনু মিয়ার ছেলে সজিব (২২), একই গ্রামের সাহালালের স্ত্রী মৌসুমী (২৫), বাবুডাইংয়ের মকবুলের ছেলে টিপু (৪৫), কালুর ছেলে আলম (৪০), মোস্তফার ছেলে পাতু (৪০), সুন্দরপুরের সেরাজুলের ছেলে আতিকুল ইসলাম ডাকু (২৪), ফাটাপাড়ার সাদিকুলের স্ত্রী টকি বেগম (৩০)। উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, কয়েকদিন আগে বিয়ে হয় পাঁকা ইউনিয়নের মৃত সুলতান আলীর ছেলে হোসেন আলীর মেয়ের। বুধবার দুপুরে বরপক্ষের লোকজন একটি নৌকায় বৌভাতে আসছিলেন সোহেন আলীর বাড়ি। দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে পদ্মা নদীর দক্ষিণ পাঁকা ঘাটের একটি ছাউনিতে আশ্রয় নেয় বৌভাতে আসা লোকজন এবং স্থানীয় পাঁকা গ্রামের সহবুলের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৫৫)। এসময় বজ্রপাত হলে রফিকুলসহ বর পক্ষের ১৬ জনসহ মোট ১৭ জন মারা যায় ঘটনাস্থলেই। ৩/৪জন গুরুতর আহত হলে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে কয়েক শিশু ছিল সেখানে। ফায়ার সার্ভিস চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনের উপ-পরিচালক সাবের আলী জানান, নিহত ও আহতদের পদ্মা নদী পেরিয়ে নৌকায় করে সদর উপজেলার আলিমনগরের ঘাটে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার-আরএমও ডাঃ কামরুন নাহার নাসু বলেন, বিকেল ৩টা পর্যন্ত হাসপাতালে ১২ জনকে নিহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও আহত অবস্থায় ৯ জনকে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে এক শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, তাদের বিয়ে হয়েছে কয়েকদিন আগে। বুধবার ছিল বৌভাতের অনুষ্ঠান। আকাশ মেঘলা থাকলেও এদিন সকাল থেকেই মনোরম পরিবেশ ছিল উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের। সে গ্রামের যোগাযোগ বলতে পদ্মা নদীতে নৌকায়। সকালে ৫৫ যাত্রী নিয়ে নারায়ণপুর ঘাট থেকে নৌকায় রওনা দেয় তারা। নৌকাটি ঘাটের অদূরে থাকতেই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টিপাত। বৃষ্টির কবল থেকে নিজেদের বাঁচাতে ছাতা ফুটিয়েছেন যাত্রীরা। দুই/এজন করে পাড়েও নেমেছেন। কেউ একটি ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এসময় আকাশ ভেঙ্গে বিকট শব্দে বজ্রপাত। এতেই সবকিছু শেষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পাঁকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন মাস্টার জানান, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন সদর উপজেলার নারায়ণপুর থেকে বউভাতের অনুষ্ঠানে আসার পথে বজ্রপাত হলে এক সঙ্গে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে নিহতদের প্রতি পরিবার পাচ্ছেন ২৫ হাজার টাকা ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বজ্রপাতে নিহতদের দাফন কাজের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মরদেহ দাফনে এ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাকিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। এই সহায়তা মরদেহ দাফনের জন্য। এছাড়া আহতরাও চিকিৎসার জন্য সহায়তা পাচ্ছেন। শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত তারা বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের বাসিন্দা। অন্যজন নৌকার মাঝি রফিকুল ইসলাম। তিনি শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা এলাকার বাসিন্দা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি নিজেই মৃতদের পরিবারকে সহায়তার ২৫ হাজার টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন। নিকলীতে বজ্রপাতে ২ জেলের মৃত্যু ॥ কিশোরগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলার নিকলীতে হাওড়ে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে জলহু মিয়া (৫০) ও শফিকুল (৩৫) নামে দুই জেলের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় কামরুল (৩৫) ও মোতালেব (৪৫) নামে দুই জেলে আহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত একটার দিকে উপজেলার কারপাশা শহরমূল গ্রাম সংলগ্ন বড় হাওড়ে বজ্রপাতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। মৃত দুইজনের মধ্যে জলহু মিয়া নিকলীর কারপাশা শহরমূল আউলিয়াভিটা গ্রামের মৃত আসলাম উদ্দিনের ছেলে এবং শফিকুল কারপাশা শহরমূল গাছগড়িয়া হাটির খেলু মিয়ার ছেলে। অন্যদিকে আহতদের মধ্যে কামরুল কারপাশা শহরমূল উত্তরহাটির কাঞ্চন মিয়ার ছেলে এবং মোতালিব একই গ্রামের মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে ১০ জনের একটি স্থানীয় জেলেদল নৌকা নিয়ে নিকলী ও পার্শ্ববর্তী করিমগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বড় হাওড়ে বেড়জাল দিয়ে মাছ ধরতে যায়। রাত একটার দিকে বৃষ্টিপাতের মধ্যে জেলে দলটির জেলেদের কেউ নৌকায় আবার কেউ হাওড়ের পানিতে থেকে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে জলহু মিয়া, শফিকুল, কামরুল ও মোতালেব নামে চার জেলে গুরুতর আহত হয়। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জলহু মিয়া ও শফিকুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
×