ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনিল মোঃ মোমিন

আমাদের ফেরার তাড়া আছে...

প্রকাশিত: ০২:২০, ২৫ জুলাই ২০২১

আমাদের ফেরার তাড়া আছে...

একটি ‘যুদ্ধ’ জয়ের পর অপার সম্ভাবনার স্বপ্ন নিয়ে আমরা আশিজন তরুণ-তরুণী পা রেখেছিলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। অনেকে বলে থাকেন অর্থনীতির শিক্ষার্থীরা একটু বেশি রিয়েলিস্টিক বা বাস্তববাদী হয়। বাস্তবতার সেই হিসাব-নিকাশের সমান্তরালে আমরা এক প্রকার উদযাপনের মাধমেই দুটি বর্ষ খুব চমৎকারভাবে সম্পন্ন করেছিলাম। পড়ালেখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অন্যান্য অনুষঙ্গগুলোতে জড়িয়েছি আমরা সমান্তরালে। বন্ধুরা কেউ সক্রিয় ছিল সামজিক সংগঠনে, কেউ ডিবেটিং ক্লাবে, কেউ ল্যাংগুয়েজ ক্লাবে, কেউ ক্রিকেট-ফুটবলে, কেউ থিয়েটারে, কেউ বা আবার রাজনীতিতে, কেউ অন্যান্য সৃজনশীল কাজে। প্রাত্যহিক এই রুটিনের মাঝে হানা দেয় করোনাভাইরাস। উদ্বিগ্ন থাকলেও ১৪ দিনের ছুটিতে আমরা বেশ খুশি মনে ক্যাম্পাস ছেড়েছিলাম। বেশকিছু পর ছুটিতে হাঁপিয়ে উঠি। তাড়া অনুভব করি ক্যাম্পাসে ফেরার। কিন্তু ধাপে ধাপে ছুটি বাড়তে বাড়তে প্রায় দুবছর হতে চলল। তবুও এখন কবে ক্যাম্পাসে ফিরতে পারব তার নিশ্চয়তা নেই। দীর্ঘ বন্ধে পড়াশোনায় নেই গতি। টেবিলে থাকা বই-খাতা-শীটে বুঝি ধুলোর আস্তরণ পড়েছে। ব্রেনে জং ধরছে। যোগাযোগ কমেছে বন্ধুদের সঙ্গেও। অবস্থা ঠিক রায়হান রাফির গানের মতোই ‘আমার ধুলোবালি জমা বই/আমার বন্ধুরা সব কই/আমার ভাল লাগে না এই মিথ্যে শহর/রাতের আড়ালেই রই।’ দীর্ঘ দূরত্ব সব স্মৃতিতে পরিণত করছে। অর্থনীতি বিভাগের ৩০তম ব্যাচের পরিবারকে খুব মিস করি। ক্লাসের ফাঁকে জীবন জনির কমেডি, সাকিবদের গান আর অন্যদের অলস গল্প গুজব। আবার ক্লাস শেষে বাপ্পীর সঙ্গে গ্রæপ স্টাডি, শুভর সঙ্গে মধুপুরে হাং আউট কিংবা ক্ষুধার তাৎক্ষণিক সমাধানে আম বাগান অথবা ক্যাফেটেরিয়ায় গমন। এরপর কখনও শামীম সজিবদের ফুটবল-ক্রিকেট উপভোগ করা। কিংবা ভাল না লাগলে বুশরা-মিমের সঙ্গে রূপসা গড়াইয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করা। আবার কখনও নিঃসঙ্গতা উপভোগে প্যারাডাইস রোডে কিংবা মফিজ লেকে, লেক সংলগ্ন ওয়াচ টাওয়ারে চলে যাওয়া। কখনও সেখানে বন্ধুদের জন্মদিন পালন। কিংবা ডায়না চত্বরের আড্ডায় বাদাম খেয়ে তাড়াহুড়ো করে ধরতে যাওয়া লালবাসের শীট। আবার কবে হবে এসব! মনে পড়ে না খেয়ে তাড়াহুড়ো করে সকালে ক্লাসে ছোটা। ৫ মিনিট দেরির জন্য ক্লাসে ঢুকতে না পারা। একটা প্রেজেন্ট দেয়ার অস্থিরতায় থাকা। কিংবা সিঙ্গারা চমুচা খেয়ে বিকেল ৪টা অবধি ক্লাস করা। কতই তেতো মিঠা ছিল! দীর্ঘ এই সময়ে বঞ্চিত হয়েছি ডিপার্টমেন্টের সভা-সেমিনারের নানা আয়োজন থেকে। দুইটা জুন চলে গেল। বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় বাজেট পরবর্তী আলোচনা অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির অনেক পরিভাষা আমরা এই অনুষ্ঠান থেকে শিখেছিলাম। হায় করোনা তুমি কবে মুক্তি দেবে আমাদের! একদিকে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন অন্যদিকে পড়ালেখা থেকে দূরে। অপূরণীয় এক ক্ষতির বোঝায় মানসিক ভারাক্রান্ত জীবন। দীর্ঘ বন্ধে জীবনজুড়ে স্থিবরতা নেমে এসেছে। এই স্থিবরতা ভেঙে ফিরতে চাই পড়াশোনায়, স্বাভাবিক রুটিনে। ভিড় করতে চাই সেমিনার ও কেন্দ্র্রীয় লাইব্রেরিতে, গড়াই ফটোস্ট্যাটে। শীঘ্রই ফিরতে চাই ক্লাস, গ্রæপ স্ট্যাডি, এ্যাসাইনমেন্ট, টিউটরিয়াল, প্রেজেন্টেশন ও পরীক্ষায়। মহামারী বলে সময় থেমে নেই। তাই থেমে থাকার সুযোগ নেই আমাদেরও। জীবন থেকে মহামূল্যবান সময় হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত বাবা-মা অনেক স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষা করছে কবে আমরা সফল হয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাব। তাই আমাদের ফিরতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রæত আমাদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিবে এই আশায় অপেক্ষা করছি। অপেক্ষা করছে বন্ধুরাও। কেননা ক্যারিয়ার, পরিবার আর নিজের জন্যই আমাদের ফেরার তাড়া আছে।
×