ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাস্তি মেনে নিয়েছেন সাকিব ॥ আবার নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ১৩ জুন ২০২১

শাস্তি মেনে নিয়েছেন সাকিব ॥ আবার নিষেধাজ্ঞা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ম্যাচ চলার সময় আম্পায়ারের সঙ্গে বিতর্ক, দুই দফা স্টাম্প ভেঙ্গে ফেলা এবং প্রতিপক্ষ দলের কোচ ও সমর্থকদের সঙ্গে বিতÐায় জড়ানোর শাস্তি পেলেন সাকিব আল হাসান। শুক্রবার চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আবাহনী লিমিটেডের সঙ্গে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচ চলার সময় মোহামেডান অধিনায়ক সাকিব এই তুলকালাম কাÐগুলোর জন্ম দেন। শেষ পর্যন্ত আইসিসির ম্যাচ শৃঙ্খলা নীতির লেভেল-৩ পর্যায়ের আচরণবিধি লঙ্ঘনে ৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে সাকিবকে। কিছুদিন আগেই জৈব সুরক্ষা বলয় নীতি লঙ্ঘন হয় তার ঐচ্ছিক অনুশীলনে। সে জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিশ (সিসিডিএম) তাকে নিয়ে শুনানিতেও বসে। শাস্তি পাননি তিনি, তার দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ক্ষমা চেয়েই পার পেয়ে যায়। তবে এবার মাত্রাতিরিক্ত অসংলগ্ন আচরণ করে পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেও রেহাই পেলেন না বিশ্বের অন্যতম এই অলরাউন্ডার। নিষেধাজ্ঞা পেলেন চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ (ডিপিএল) টি২০ আসরে। শনিবার সন্ধ্যায় সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে সাকিবের শাস্তির বিষয়টি জানিয়েছেন। ম্যাচ রেফারির দেয়া শাস্তিই ঘোষণা করে সিসিডিএম। শুক্রবার দুপুরে দুই চিরশত্রæ আবাহনী-মোহামেডান মুখোমুখি হয় মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দুই ঐতিহ্যবাহী দলের ক্রীড়াক্ষেত্রে ময়দানী লড়াইয়ে সবসময়ই থাকে উত্তেজনা। দু’দলের কর্মকর্তা, ক্রিকেটার ও সমর্থকদের মধ্যে তা প্রায় সমানভাবেই বিরাজ করে। তেমনটা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেখা যায়নি ক্রিকেট মাঠে। কারণ ৫ বছর ধরে আবাহনীকে হারাতে পারেনি জৌলুস হারানো মোহামেডান। এবার তারা শক্তিশালী দল গড়ে সাকিবের নেতৃত্বে। শুক্রবারের ম্যাচে উত্তেজনার রেশ ছিল খেলা শুরুর পর থেকেই। প্রথমে মোহামেডানের ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ের সময় ক্রিকেটারদের সঙ্গে উপস্থিত গুটিকয়েক আবাহনী সমর্থকের মধ্যে তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়েছে। আবাহনী সমর্থকরা মোহামেডান অধিনায়কসহ অন্যদের বিভিন্ন মন্তব্যও করেছেন। এতেই হয়তো মন-মেজাজ বিষিয়ে ছিল সাকিবের। তাছাড়া চলতি লীগে ব্যাট হাতে চরমভাবে ব্যর্থ সাকিব। এদিন তিনি দলের হয়ে ২৭ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন। এটি চলতি লীগে সাকিবেরও সর্বোচ্চ রান। ব্যাটিংয়ের সময় তার আচরণে অবশ্য কোন অসংলগ্নতা দেখা যায়নি। কিন্তু আবাহনী ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকেই মেজাজ বিগড়ে যেতে শুরু করে তার। আবাহনী সমর্থকরা ওই সময় আরও বেশি ¯েøজিং করছিলেন সাকিবদের। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে সাকিবের করা শেষ বলে আবাহনী অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের বিপক্ষে এলবিডবিøউর আবেদন নাকচ করেন আম্পায়ার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্টাম্পে লাথি হাঁকিয়ে উপড়ে ফেলেন সাকিব। আম্পায়ারের সঙ্গেও অশোভন আচরণ করেন ও তর্কে জড়ান। পরের ওভারের পঞ্চম বলের সময় হাল্কা বৃষ্টি নামলে গ্রাউন্ডসম্যানদের কাভার আনার ইশারা করেন আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান। বিষয়টি মানতে পারেননি সাকিব। দৌড়ে এসে স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন তিনি এবং আবারও আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। মাঠ ছাড়ার সময় আবাহনী সমর্থকদের দিকে তেড়েফুঁড়ে যান তিনি এবং অশালীন ভাষায় জবাব দেন। আবাহনী কোচ সুজন সে সময় তেড়ে আসেন। সাকিবের সঙ্গে তার কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলেও দু’দলের ক্রিকেটার ও কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি বেশিদূর গড়ায়নি। সাকিব দাবি করেন তিনি সুজনকে কিছু বলেননি। বিষয়টি নিয়ে পরে সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ জানান আম্পায়ারদের রিপোর্ট পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আম্পায়ার্স কমিটি তাদের রিপোর্টে সাকিবকে ৪ ম্যাচ নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছে বলে শনিবার দুপুরে জানান মোহামেডান ক্রিকেট কমিটির প্রধান মাসুদুজ্জামান। তবে ম্যাচ রেফারি মোরশেদুল আলম বিকেলে পাঠানো শাস্তির নোটিস পৌঁছে সাকিবের হাতে। সেখানে তাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও ৩ ম্যাচ বহিষ্কারের শাস্তি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে সাকিবের বিরুদ্ধে লেভেল-৩ পর্যায়ের আচরণবিধি ভাঙ্গার অভিযোগ আনার বিষয়টি জানানো হয়েছে। যদিও আইসিসির বিধান অনুসারে একই ম্যাচে লেভেল-৩ পর্যায়ের অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সেটির শাস্তি ২ থেকে ৫ ম্যাচের বহিষ্কারাদেশ ও জরিমানা কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে। সাকিবও শাস্তি মেনে নিয়েছেন। আগেরদিনও ম্যাচশেষে তিনি নিজের ফেসবুক পেজে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। সে কারণে আর কোন শুনানি হবে না। আনুষ্ঠানিকভাবে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে সিসিডিএম সাকিবের শাস্তি ঘোষণা করে। এর আগেও অনেকবার ম্যাচ চলাকালীন শৃঙ্খলা ভঙ্গের নজির আছে সাকিবের। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হওয়া টি২০ ম্যাচে আচরণবিধি ভঙ্গ ও ড্রেসিং রুমের কাচের দরজা ভাঙ্গার জন্য শাস্তি পেয়েছিলেন। জুয়াড়িদের কাছে একাধিক ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও গোপন করে পরের বছর আইসিসি থেকে ১ বছর নিষিদ্ধ ছিলেন সাকিব। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় গত বছর ২৮ অক্টোবর। তারপর ক্রিকেটে ফেরেন সাকিব নবেম্বর মাস থেকেই। এখন আবার শাস্তির মুখে পড়লেন তিনি। এরও আগে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে অশোভন আচরণ করে ২০১৪ সালে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বিসিবি থেকে। ২০১২ সালে অশোভন আচরণ ও বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সে সময় বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের কাছে ক্ষমা চেয়ে আলোচিত হয়েছিলেন। ২০১১ বিশ্বকাপে দলের ব্যর্থতায় অধিনায়ক সাকিব দর্শকদের নিন্দা ও দুয়োধ্বনিতে অশোভন অঙ্গভঙ্গি করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন এবং তার বাড়িতেও হামলা করে দুর্বৃত্তরা।
×