ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ কম ॥ সিপিডি

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৩ জুন ২০২১

প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ কম ॥ সিপিডি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ এখনও ১ শতাংশের নিচে বলে সমালোচনা করেছে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতেও বরাদ্দ কমেছে। অথচ দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। শনিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাজেট ডায়ালগ-২০২১’ শীর্ষক বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংলাপে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি ছিলেন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর বিভিন্ন পর্যালোচনা তুলে ধরেন নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সংলাপে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। ১০ মাসে আয় এত কম হয়েছে যে বাকি দুই মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ১২২ শতাংশ। ব্যয় সক্ষমতার অবস্থাও ভাল নয়। কোভিডের কারণে যেই অর্থবছরে ব্যয় বেশি হওয়ার দরকার ছিল, সেই অর্থবছরেই স¤প্রসারণমূলকের পরিবর্তে সংকোচনমূলক বাজেট হয়েছে। ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়েনি, ৮ শতাংশ। অথচ নতুন বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ। কীভাবে তা অর্জন সম্ভব হবে? মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ এখনও ১ শতাংশের নিচে বলে সমালোচনা করেছে সিপিডি। বলেছে, কৃষি খাতেও বরাদ্দ কমেছে। অথচ দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, আগে একটা ধুঁয়া তোলা হতো এনজিওদের বিরুদ্ধে। বলা হতো, কিস্তির টাকার জন্য তারা টিনের চাল খুলে নিয়ে যায়। এবার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। অথচ ব্যবসায়ীদের সরকার এক হাতে দেয়, অন্য হাতে তাঁদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়। নিহাদ কবির বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেয়া অগ্রিম আয়করের শত শত কোটি টাকা আটকে আছে। এগুলো কীভাবে সমন্বয় হবে? কোন কোম্পানির পক্ষে তো এত মুনাফা করা সম্ভব নয়। নীতিনির্ধারণ ও কর আহরণ একই প্রতিষ্ঠানের আওতায় থাকা উচিত নয় বলেও মনে করেন তিনি। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ঘাটতি আছে উল্লেখ করে বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সেটা আমাদের ঠিক করতে হবে। আবার যদি আমরা মনে করি যে শুধু সরকার যেটা দেবে, সেটাকেই পাস করে দেয়া, তা হলে তো আমাদের বাজেট অধিবেশনের প্রয়োজন নেই। এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলের ভূমিকা রাখার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরেকটা ভূমিকা এখানে রাখতে পারে রাজনৈতিক দল। আমাদের সরকারী দল বা মুখপাত্র বাজেটের সঙ্গে সঙ্গেই বলে দেন যে বাজেটটা ভাল, এখানে সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন আছে। তারাও যদি এই বাজেট আলোচনার অংশ না থাকেন তাহলে আসলে জবাবদিহির জায়গাটা কিভাবে তৈরি হবে, জানতে চান তিনি। তিনি বলেন, আরেকটা হচ্ছে বাজেটটা যখন সংসদে উপস্থাপন করা হয়, তারপর কিন্তু আমি আর পরিবর্তন দেখি না। হয়ত আমাদের দুয়েকজন সংসদ সদস্যদের কিছু বিষয় বলা হয়, সেটা ওনারা উত্থাপন করেন। পরে সেগুলোকে মেনে নেয়া হয়। কিন্তু মৌলিক কাঠামোর কোন পরিবর্তন করা হয় না। তার মতে এই প্রক্রিয়ায় বাজেটের গুণগত মান পরিবর্তনে সাংসদ বা সংসদ তেমন একটা কিছু করতে পারছে না। সংলাপে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সৈয়দ আবদুল হামিদ এবং ন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন অব স্মল এ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নুরুল গণি।
×