ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএডিসির বীজে ৪৫ টাকা খরচ করে কৃষক পাচ্ছেন ৩৮ টাকা

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ৪ মার্চ ২০২১

বিএডিসির বীজে ৪৫ টাকা খরচ করে কৃষক পাচ্ছেন ৩৮ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) একজন চুক্তিবদ্ধ বীজ উৎপাদনকারী কৃষক পবা উপজেলার দারুশা কুমড়াপুকুর গ্রামের মোঃ আসাদ। তিনি জানান, কয়েকবছর ধরে অন্যান্য চাষাবাদ ছেড়ে বীজ উৎপাদন করছেন। চলতি মৌসুমে তিনি ২ একরে গম ও ১ একর জমিতে ধান চাষ করেছেন। প্রতিকেজি ধান বীজ উৎপাদনে তার খরচ পড়েছে ৪৫ টাকার মতো। কিন্তু বিএডিসি থেকে তাকে দাম দেয়া হয়েছে প্রতিকেজিতে ৩৮ টাকা। আসাদ বলেন, সাধারণ ফসলের চেয়ে বীজ উৎপাদনে কয়েকগুণ বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এমনিতেই খুব একটা লাভ হয় না। তার ওপর এবার বাজারে সাধারণ ফসলের সমান দাম দেয়া হচ্ছে। এতে করে লসের ওপর লস ! আমরা তো আর খাওয়ার জন্য বীজ উৎপাদন করি না। বিক্রি করে দু’পয়সা আয় করতে চাই। এভাবে লোকসান হলে বাঁচব কিভাবে? আরেক কৃষক মোঃ মুন্টু আলীর মুখেও একই অভিযোগ শোনা গেল। শুধু তারা দু’জনেই নন, রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় ২ হাজারের বেশি কৃষকের বীজ উৎপাদন করে লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছে বিএডিসি চুক্তিবদ্ধ চাষী কল্যাণ সমিতি। সমিতির নেতারা বলছেন, প্রায় তিন মাস আগে বিএডিসি রাজশাহীর ২ হাজার ১০০ কৃষকের কাছ থেকে আমন ধানের বীজ কিনেছে। কিন্তু তখন চুক্তিপত্রে বীজের দর উল্লেখ করা হয়নি। তিনদিন আগে কেজিপ্রতি ৩৮ টাকা হিসেবে চাষীদের মূল্য পরিশোধ করছিল বিএডিসি। কিন্তু চাষীরা এই টাকা নেননি। ৩৮ টাকা দরে বীজের দাম নিলে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর প্রতিকার চেয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বিএডিসি’তে সরবরাহ করা আমন ধানের বীজের দাম বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন কৃষকরা। বিএডিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ চাষীরা এর আয়োজন করেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ভাল বীজ, ভাল ফল। নষ্ট বীজ, নষ্ট ফসল। ভাল বীজ উপহার দিয়েও আজকে আমরা অবহেলিত। আজকে শ্রমিকের মজুরি কত টাকা! কিন্তু আমাদের বীজের দাম দেয়া হচ্ছে কত? সাধারণ চাষাবাদ ও বীজ উৎপাদনের পরিচর্যা, খরচ এক নয়। সাধারণ চাষাবাদের তুলনায় ৩৫ শতাংশ খরচ বেশি হয় বীজ উৎপাদনে। আমাদের এক কেজি আমন ধানের বীজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৪৫ টাকা। সেখানে আমাদের দেয়া হচ্ছে ৩৮ টাকা। আমন ধানের বীজের দাম কমপক্ষে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানান চাষীরা। তা না হলে তারা ৩৮ টাকা কেজি দরে টাকা নেবেন না বলে ঘোষণা দেন তারা। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, বিএডিসির রাজশাহী জোনের চুক্তিবদ্ধ চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইউসুফ আলী। সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান পিপুলের পরিচালনায় এতে বক্তব্য দেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাজদার রহমান, সহ-সভাপতি মোঃ তাজউদ্দীন, সহ-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ফটিক, কোষাধ্যক্ষ আবদুল আওয়াল, সদস্য আবদুস শুকুর, হায়দার আলী, নওয়াব আলী প্রমুখ। কর্মসূচীতে জেলার বিভিন্ন এলাকার চুক্তিবদ্ধ চাষীরা অংশ নেন। সমিতির সভাপতি ইউসুফ আলী বলেন, চুক্তিপত্রের ২৯ নম্বর ম্যানুয়ালে বাজারে সর্বোচ্চ মূল্যের সঙ্গে আরও ৪৫ শতাংশ বেশি দাম দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের থেকে বীজ নিয়ে কোন আলোচনা ছাড়াই দুই মাস পরে ৩৮ টাকা করে দাম দেয়া হচ্ছে। আমরা সেটা গ্রহণ করিনি। আমাদের দাবি, বীজের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা করে দাম দেয়া হোক। আমরা মনে করি, কৃষক বাঁচলেই দেশ বাঁচবে। এ বিষয়ে বিএডিসি রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক জহুরুল ইসলাম বলেন, ৪৫ শতাংশ বেশি দাম দেয়ার কথা রয়েছে এমনটা না। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দাম বেশি দেয়ার কথা মৌখিকভাবে ঘোষণা রয়েছে। কৃষকদের লোকসান হোক আমরা সেটা চাই না, সরকারও চাইবে না। আমরা মূল্যবৃদ্ধির জন্য সুপারিশপত্র পাঠিয়েছি। সরকার কৃষকদের স্বার্থে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করছি।
×