স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে বাদ দিয়ে গণফোরাম এগিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করেছেন একাংশের নেতাদের আয়োজনে বর্ধিত সভায় উপস্থিত জেলা পর্যায়ের নেতারা। তারা বলেন, ড. কামালকে রাখলে গণফোরাম কখনই তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। উনি বঙ্গবন্ধুর সহচর ছিলেন ঠিকই, মেধার কারণে বঙ্গবন্ধু তাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। আসলে উনি এখন জিরো। সব মিলিয়ে নেতৃত্বের কোন্দলে শেষ পর্যন্ত ২৭ বছর ধরে চলা দলটিতে বিভক্তি এখন স্পষ্ট।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের হল রুমে গণফোরামের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ। দলের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনে রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর থেকেই গণফোরামে ভাঙ্গন দেখা দেয়। চলে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার। মন্টুর নেতৃত্বে একটি পক্ষ গত ডিসেম্বরে কাউন্সিল ঘোষণা করে। রেজা কিবরিয়াও কামাল হোসেনকে নিয়ে কাউন্সিল করার ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে তা স্থগিত করা হয়। এক পর্যায়ে ড. কামাল হোসেন বিবৃতি দিয়ে বলেন, দলে কোন বিরোধ নেই। ঐক্যবদ্ধ কাউন্সিল হবে। এর মধ্যে রেজা কিবরিয়াও গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সড়ে দাঁড়ান। কিন্তু কামাল হোসেন কাউন্সিলের নতুন তারিখ ঘোষণা না করায় মন্টু পক্ষের সঙ্গে আবারও দূরত্ব বাড়ে। যার প্রেক্ষিতে এই পক্ষটি আবারও বর্ধিত সভা ডেকে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করল।
বর্ধিত সভায় জানানো হয়, আগামী ২৮ ও ২৯ মে দলটির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটি ও ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করতে মোস্তফা মহসিন মন্টুকে আহ্বায়ক এবং এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন এবং অধ্যাপক ড. আবু সাঈদকে আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট এ এইচ এম খালেকুজ্জামানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। সব মিলিয়ে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া আগামী জাতীয় কাউন্সিল পর্যন্ত গণফোরামের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য মোস্তফা মহসিন মন্টুকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে ড. কামাল হোসেনকে রাখা হয়নি। তবে মোকাব্বির খান এমপিকে রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, মোকাব্বির খান ড. কামাল হোসেন গ্রুপের।
মোকাব্বির খানকে কেন কমিটিতে রাখা হলো সে বিষয়ে মোস্তফা মহসিন মন্টুকে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে গণফোরামে থাকতে চাই। এ জন্য তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তবে তিনি কমিটিতে না থাকতে চাইলে থাকবেন না’।
সভায় দেয়া বক্তব্যে এ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ বলেন, ড. কামাল হোসেন পলিটিশিয়ান নয়। তাকে নিয়ে রাজনীতি হবে না। তিনি একটা জিরো পারসন। তিনি ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করেন।
এ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ বলেন, ড. কামাল ও রেজা কিবরিয়া দুজনেই মিথ্যাবাদী। দলীয় এমপি মোকাব্বির হঠাৎ করে এমপি হয়েছেন। কিভাবে এমপি হয়েছেন, দেশবাসী সবাই জানে। ড. কামাল হোসেনকে বাদ দিয়েই গণফোরামকে এগিয়ে নিতে হবে।
এ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ আরও বলেন, গত নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্য ফোরাম গঠন করা হলো। কী উদ্দেশ্য নিয়ে ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্য ফোরাম গঠন করলেন তা বোধগম্য নয়। ঐক্যফ্রন্টে কারা যোগ দিলেন? জামাতের লোকজন। আর ড. কামাল হোসেন তাদের নিয়ে সুস্থ রাজনীতি স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন করতে চাইলেন। আমি প্রস্তাব করছি ড. কামাল হোসেন ‘ননসেন্স’ তাকে গণফোরাম থেকে বাদ দিয়ে সামনে চলুন।
রংপুর বিভাগের পক্ষে বক্তব্য দেন মির্জা হাসান, ময়মনসিংহের এ্যাডভোকেট রায়হান উদ্দিন ও ঢাকা বিভাগের বিশ্বজিৎ গাঙ্গুলি। এ্যাডভোকেট হাফিজ উদ্দিন ঠাকুরগাঁও জেলা গণফোরামের সদস্য সচিব জাফর সাদেক, রাজবাড়ী জেলা সাধারণ সম্পাদক ওয়াজি উল্লাহ কুষ্টিয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম পর্বতসহ অন্যরা।
ঢাকা বিভাগের গণফোরাম নেতা বিশ্বজিৎ গ্যাঙ্গুলি বলেন, ড. কামাল হোসেনকে অদৃশ্য একটি সুতা টেনে ধরেছে। ফলে গণফোরাম পেছনের দিকে ছুটছে। সামনে আর এগোতে পারেনি। তাই সময় এসেছে সুতা কেটে দেয়ার। সুতাটি কেটে দিন গণফেরাম সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
এ্যাডভোকেট হাফিজ উদ্দিন বলেন, ২০০৮ সালে গণফোরাম ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। ড. কামাল হোসেন সুযোগ কাজে লাগাননি। কেন লাগাননি সে বিষয়টি আজও জানা হলো না। জানা গেল না।
তিনি বলেন, গণফোরাম আজ মৃতপ্রায়। তাকে মৃতপ্রায় অবস্থা থেকে টেনে তুলতে হবে। তা না হলে রাজনীতি থেকে গণফোরাম একেবারে ছিটকে পড়বে। এ ছাড়া বর্ধিত সভায় রাজবাড়ী জেলা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজি উল্লাহ নতুন কোন ফোরামের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব করেন।
বর্ধিত সভা শেষে প্রেস ব্রিফিং করেন অধ্যাপক আবু সাঈদ। তিনি বলেন, দেশ আজ গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত। নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সর্বক্ষেত্রে, স্বৈরতান্ত্রিক কালো থাবায় সবকিছু থমকে গেছে। সর্বস্তরে চলছে দুঃশাসন।
আবু সাঈদ আরও বলেন, যদিও সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছে। কিন্তু চেতনা বাস্তবায়নে সরকার অনেক দূর সরে গেছে। এ সরকার জনগণের সরকার নয়। এ সরকার অবৈধ সরকার। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যত দুঃশাসন হচ্ছে আইয়ুব খানের শাসনামলে এত দুঃশাসন হয়নি।
ড. কামালকে গণফোরাম থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, এটি বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত না, বিভিন্ন নেতারা প্রস্তাব দিয়েছেন। আগামী কাউন্সিলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মন্টু আরও বলেন, আমরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি, পাশাপাশি নতুন নির্বাচন চাই। আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। নতুন নির্বাচন না দিলে স্বৈরাচার এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। বর্ধিত সভায় সারাদেশের ৫৬ জেলা থেকে ২৮১ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
মন্টু বলেন, আমরা জাতি হিসেবে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দুঃশাসনের এ বাংলাদেশে আমরা বিভিন্নভাগে বিভক্ত। এই প্রেক্ষাপটে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল দলের ঐক্য চাই। তিনি আরও বলেন, গণফোরামকে দেশবাসীর আকাক্সক্ষা অনুযায়ী সুসংগঠিত করতে হবে। আগামী ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল দলকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।
মন্টু গ্রুপের বর্ধিত সভা
গণফোরাম থেকে ড. কামালকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: