ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের কাজ

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিএমইটি ও আইওএম বাস্তবায়ন করছে

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২১

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিএমইটি ও আইওএম বাস্তবায়ন করছে

ফিরোজ মান্না ॥ তিনটি সংস্থা যৌথভাবে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিএমইটি ও আইওএম এই কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ‘এ্যাক্টিভিটি প্ল্যান ফর স্কিলস ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড মাইগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট’ নামে প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ১০ লাখের বেশি কর্মীকে দক্ষ করে গড়ে তোলা তুলবে তিন সংস্থা। করোনা মহামারী পরবর্তী বিশ্বে বিপুল সংখ্যক কর্মীর চাহিদা তৈরি হবে। এই চাহিদা পূরণে আগে থেকেই দক্ষ কর্মী গড়ে তোলার কাজ শেষ করবে সংস্থাগুলো। এ তথ্য জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, একজন দক্ষ কর্মীকে নিরাপদ, সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করা সম্ভব হবে। সেই কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে সঠিক ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। দেশে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা বিদেশে যাওয়ার আগে তাদের কর্মদক্ষতা যাচাই করে পাঠানো হবে। দক্ষ কর্মী তৈরি করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চলতি বছর বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ‘দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ করা হচ্ছে। দক্ষতা উন্নয়নে কয়েকটি মন্ত্রণালয় জড়িত, তারা যাতে সবাই ‘ইফেক্টিভ’ পন্থায় কাজ করতে পারেন, সেজন্য জাতীয় একটি সংস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। উন্নত বিশ্বে কর্মী পাঠাতে প্রথম কাজই হলো দক্ষতা উন্নয়ন। কর্মীদের ভাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটা করা সম্ভব হবে। তারা যদি দক্ষ হন তাহলে বিদেশে বেতনও বেশি পাবেন। কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান দুটি ২০২১ সাল পর্যন্ত এক সঙ্গে কাজ করবে। দক্ষ জনশক্তি রফতানি হলে প্রবাসী আয় অনেক বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিদেশে চাকরি করে যে পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন তার প্রায় সমপরিমাণ অর্থ বিদেশী দক্ষ কর্মীরা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর দেশ থেকে ৮ থেকে ৯ লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশের চাকরি নিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষতার অভাবে তারা অনেক কম বেতনে চাকরি করছেন। অথচ অন্য দেশের কর্মীরা দক্ষতার কারণে বেশি বেতন পাচ্ছেন। দেশের প্রায় এক কোটি কর্মী বিদেশে চাকরি করলেও রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়ছে না। প্রতি বছরে রেমিটেন্স এসেছে সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অদক্ষ জনশক্তি রফতানির কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ দিনে দিনে নেমে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে বিদেশী ৫ থেকে ৬ লাখ দক্ষ জনশক্তি কাজ করছেন। তারা প্রায় সমপরিমাণ অর্থ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে মন্ত্রণালয় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আইওএম’র সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জানা গেছে, দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল সংখ্যক অদক্ষ কর্মী যাওয়ার ফলে শুধু প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্ত রেমিটেন্স বাড়ছে না। এই অদক্ষ কর্মীরা বেশিরভাগই গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে আসা। তাদের নানাভাবে প্রলোভনে ফেলে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। তারা বিদেশে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও যে টাকায় বিদেশ গেছেন সেই টাকাই তুলতে পারেন না। এর মধ্যে ওই কর্মীর কাজ করার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। পরে বাড়তি কিছু টাকা আয়ের আশায় তারা অবৈধ হয়ে লুকিয়ে কাজ করে। পুলিশী ভয় সারাক্ষণ মাথায় নিয়ে তাদের কাজ করতে হয়। কেউ আবার পুলিশের হাতে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দালালদের লোভনীয় প্রস্তাবের অনেক বাংলাদেশী কোন প্রকার কাজ ছাড়াই এভাবে বিদেশ গিয়ে বিপদে পড়ছেন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের কর্মীদের মান অনেক নিচে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে লাখ লাখ কর্মী বিদেশ গেলেও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে না। গুণগতমান ঠিক করতে না পারলে দেশের শ্রমবাজার গুলো হারাতে হতে পারে। অন্যদিকে কর্মীদের দক্ষতা অর্জনের জন্য জাপান অদক্ষ কর্মী নিয়ে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য ‘টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের’ (টিআইটিপি) হাতে নিয়েছে। এই প্রোগ্রামের আওতায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে টেকনিক্যাল ইনটার্ন নিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সর্বাধিক পরিমাণ টেকনিক্যাল ইনটার্ন নেবে দেশটি। দেশ থেকে নেয়া শিক্ষানবিস কর্মীদের পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেবে জাপান। পরে তারা দেশে ফিরে নিজেই উদ্যোক্তা হতে পারবেন। আবার তারা দক্ষ কর্মী হিসেবেও বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরি পাবেন। এ পর্যন্ত এই কর্মসূচীর আওতায় জাপান বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার ইন্টার্ন কর্মী নিয়োগ করেছে। তারাও দক্ষ কর্মী তৈরি করে দেশে পাঠাবে। সূত্র জানিয়েছে, আইএম জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ২০১৫ সালের ৮ জুলাই টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চারটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিতে টেকনিক্যাল ইনটার্নগণ তিন বছর মেয়াদী জাপানে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকত। পারে চুক্তিটি সংশোধন করে টেকনিক্যাল ইনটার্নগণ পাঁচ বছর মেয়াদী জাপানে কাজের সুযোগ দেয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষে তারা দেশে ফিরে নিজেরাই উদ্যোক্তা হতে পারবেন। তাদের অর্জিত দক্ষতানুযায়ী শিল্প ও কলকারখানায় উচ্চ বেতনে ম্যানেজার ও সুপারভাইজার পর্যায় নিয়োজিত হতে পারবেন। এই সমঝোতা স্বাক্ষরের মধ্যমে প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন বছর থেকে পাঁচ বছর করা, টেকনিক্যাল ইনটার্ন নির্বাচন ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও নিñিদ্রকরণ, প্রাক-বহির্গমণ প্রশিক্ষণ আরও কার্যকরকরণ, টেকনিক্যাল ইনটার্নদের পাঁচ বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ দিয়ে ম্যানেজার-সুপারভাইজার পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তোলা ও আইএম জাপান, টেকনিক্যাল ইনটার্নদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসমূহ থেকে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট গ্রহণ করবে ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের (টিআইটিপি) আওতায় জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে টেকনিক্যাল ইনটার্ন গ্রহণ করছে।
×