স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট সুপার লীগে দারুন সূচনা করেছে বাংলাদেশ দল। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আজ ৬ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে তামিম ইকবালরা। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাড়ে ১০ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই এমন দুর্দান্ত জয় পেল বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের বোলিং দাপটে ৩২.২ ওভারে মাত্র ১২২ রানেই মুখ থুবড়ে পড়ে উইন্ডিজ ইনিংস। ১৬ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবার শুরু করে বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দুর্দান্ত বোলিং করেন। ৮ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি এছাড়া অভিষেক হওয়া পেসার হাসান মাহমুদ নেন ৩ উইকেট। জবাবে ৩৩.৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১২৫ রান তুলে জয় পায় বাংলাদেশ। ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিক বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেই বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের তোপে পড়ে দলীয় ২৪ রানে ২ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাঝে ৩.৩ ওভারের পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ১ ঘণ্টা পর খেলা শুরু হলে শুরু হয় সাকিবের ঘূর্ণি ম্যাজিক। তার মায়াবী স্পিনে কুপোকাত হন আন্দ্রে ম্যাকার্থি, অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ, এনক্রুমাহ বোনার ও আলজারি জোসেফকে। অপর প্রান্তে ঝড় তোলেন ২১ বছর বয়সী অভিষিক্ত পেসার হাসান। ৩০তম ওভারে পর পর দুই বলে তিনি সাজঘরে ফেরান রোভম্যান পাওয়েল ও রেমন রেইফারকে। তবে হ্যাটট্রিকের সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি এ তরুন।
পরবর্তীতে তিনি আকিল হোসেনকে সাজঘরে ফিরিয়ে অভিষেকটা রঙ্গিন করে তোলেন। ৬ ওভারে ১ মেডেন দিয়ে ২৮ রানে ৩ উইকেট দখল করেন। মুস্তাফিজ নেন ২০ রানে ২ উইকেট। শুধু ব্যতিক্রম কাইল মেয়ার্স ৫৬ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৪০ রান করেন। রোভম্যান পাওয়েল করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ রান। ৩১ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় এ রান করেন তিনি। এরপরও ৩২.২ ওভারে মাত্র ১২২ রানে গুটিয়ে যায় উইন্ডিজরা।
৪৮৬ দিন পর ফিরেই নতুন এক রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। ৪ উইকেট নেওয়ার মাধ্যমে দেশের মাটিতে সাকিব ১৫০ উইকেটের মাইলফলক পেরিয়েছেন। ৪ উইকেট নিয়ে তার এখন দেশে ১৫৩ উইকেট। ৮ রানে ৪ উইকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সেরা বোলিং পারফর্মেন্স। বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে যা দেশের মাটিতে বিশে^র মধ্যে সেরা বোলিং পারফর্মেন্স। আর স্পিনারদের তালিকায় শ্রীলঙ্কার সাবেক অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনের (১৫৪ উইকেট) পরেই সাকিবের অবস্থান। সার্বিক তালিকায় অবশ্য তিনি আছেন পাঁচে। সেরা দু’জন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার শন পোলক (১৯৩ উইকেট) ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার ব্রেট লি (১৬৯ উইকেট)। তৃতীয় অবস্থানে আছেন দেশের মাটিতে ১৬০ উইকেট নেওয়া আরেক সাবেক অসি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা। এরপরই মুরালি ও সাকিব।
দেশের মাটিতে শততম ওয়ানডে ছিল এটি সাকিবের। মুশফিকুর রহিম ১১১, মাশরাফি ১০৩ ওয়ানডে খেলেছেন। এরপরই সাকিব। তবে ক্রিকেট ইতিহাসে ৩৪তম ক্রিকেটার হিসেবে দেশের মাটিতে ১০০ ওয়ানডে খেলার গৌরব অর্জন করলেন সাকিব। ৯৯ ওয়ানডে খেলে ফেলা তামিম আছেন তার পরেই।
ক্যারিবীয়দের মামুলী লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা বেশ সতর্কভাবেই করেছিল বাংলাদেশ। আক্রমণাত্মক লিটন কুমার দাস ব্যর্থ হন ৩৮ বলে মাত্র ১৪ রান করে সাজঘরে ফিরে। ওয়ানডে দলে ফেরা নাজমুল হোসেন শান্তও মাত্র ১ রানে বোল্ড হয়ে যান। ৫৭ রানে ২ উইকেট হারালেও বাঁহাতি ওপেনার ও অধিনায়ক তামিম দারুন এক ইনিংস উপহার দেন। ধীরগতির উইকেটে তিনি ৬৯ বলে ৭ চারে ৪৪ রান করে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। এরপর সাকিবও ১৯ রানে সাজঘরে ফেরেন। তবে মুশফিকের দৃঢ়তায় জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। এনক্রুমাহকে চার হাঁকিয়ে দলকে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তিনি। ৯৭ বল হাতে রেখেই ৪ উইকেটে ১২৫ রান তুলে জয় আসে। মুশফিক ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন। দারুন বোলিং করে বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেন ২৬ রানে নেন ৩ উইকেট।
স্কোর॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস- ১২২/১০; ৩২.২ ওভার (মেয়ার্স ৪০, রোভম্যান ২৮, জেসন ১৭, ম্যাকার্থি ১২; সাকিব ৪/৮, হাসান ৩/২৮, মুস্তাফিজ ২/২০)।
বাংলাদেশ ইনিংস- ১২৫/৪; ৩৩.৫ ওভার (তামিম ৪৪, সাকিব ১৯, মুশফিক ১৯*, লিটন ১৪; আকিল ৩/২৬)।
ফল॥ বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ॥ সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।
সিরিজ॥ ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: