ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়েবিনারে আশাবাদ

উত্তরে দুই বছরের মধ্যে লো-ভোল্টেজ সমস্যার সমাধান

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

উত্তরে দুই বছরের মধ্যে লো-ভোল্টেজ সমস্যার সমাধান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে লো-ভোল্টেজ সমস্যার সমাধান হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) যৌথভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। পাক্ষিক এনার্জি এ্যান্ড পাওয়ার (ইপি) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে শনিবার এই আশার খবর জানানো হয়েছে। দেশের দক্ষিণ এবং পূর্বাঞ্চলে এখন চাহিদার কয়েকগুণ বেশি বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু উত্তরাঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। জ্বালানি পরিবহন জটিল হওয়ায় সেখানে কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহ দেখায়নি বেসরকারী কোন কোম্পানি। সরকারী কেন্দ্রের মধ্যে বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রটি জ্বালানি সঙ্কটে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন করতে পারে না। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের চাহিদা মেটাতে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া হয়ে বিদ্যুত সঞ্চালন করতে হয়। বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের বিশাল দৈর্ঘের কারণে একেবারে শেষ প্রান্তের মানুষকে লোভেল্টেজের ভোগান্তি পোহাতে হয়। মানসম্মত বিদ্যুত না পাওয়ার জন্য উত্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান (লিটন) বলেন, উত্তরাঞ্চল আগে অবহেলিত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। যাতে করে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের বদল হতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, শহরের পরিচ্ছন্নতার জন্য সকল বিদ্যুতের তার মাটির নিচে দিয়ে নিতে হবে। এজন্য একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করায় নেসকোকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে বিসিক এবং রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার সঙ্গে বসে শিল্পে কিভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান রাজশাহীর নগর পিতা। ওয়েবিনারে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা জানি উত্তরের মানুষের বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত মানুষ মানসম্মত বিদ্যুত পায় না। এই সমস্যা সমাধানে ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে কেন্দ্রটি চালু করার জন্য জার্মানী থেকে প্রকৌশলীরা আসতে পারেননি। এছাড়া সৈয়দপুরে একটি কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু করেছে পিডিবি। কেন্দ্র দুটি উৎপাদনে না আসা পর্যন্ত সঙ্কট সামাল দেয়া একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক (পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন) ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী বলেন, ভারত থেকে আমদানির এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এবং পাবনার ঈশ^রদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র উৎপাদনে আসলে বগুড়ার কাছেই দুটি বিদ্যুতের বড় উৎস পাওয়া যাবে। এতে পরে বিদ্যুত সঞ্চালনে এখন যে সমস্যা রয়েছে তা আর থাকবে না। তিনি বলেন, রাজশাহী এবং রংপুরে আমরা ২৪টি নতুন গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ করছি। এরমধ্যে রংপুরে ১১টি এবং রাজশাহীতে ১৩টি গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া রোহানপুর-নিয়ামতপুর-জয়পুরহাট-পূর্বসাদিপুর- ডোমার পর্যন্ত নতুন ১৩২ কেভি গ্রিড লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কাজগুলো শেষ করতে আরও দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে। এরপরই নিরবচ্ছিন্ন মানসম্মত বিদ্যুত পাওয়া যাবে। দেশের উত্তরাঞ্চল সব সময় খাদ্য উৎপাদনে রেকর্ড করে থাকে। উত্তরাঞ্চলে যে ধান উৎপাদন হয় তা সারাদেশে উৎপাদিত ধানের চেয়ে বেশি। কিন্তু কৃষকের মাঠে সেচের পানির জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত পৌঁছে দিতে হয়। কিন্তু লোভোল্টেজের কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলো সঙ্কটে পড়ে। এ বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুত বিভাগও নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। উত্তরে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি নর্দার্ন ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, আমাদের সঙ্কটের মধ্যেও গ্রাহকরা খুব বেশি অভিযোগ করছেন না। এজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আমরা বিলিং কাজকে অনলাইনে করতে পেরেছি। এতে করে বছরে আমাদের ৫৪ কোটি টাকা লাভ হচ্ছে। এর বাইরে আমরা সিস্টেম লস তিন ভাগ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। যাতে করে আমাদের বছরে আরও ৮৪ কোটি টাকা লাভ হবে। নেসকোর চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব একেএম হুমাযূন কবির বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন আমরা উত্তরবঙ্গে উড়োজাহাজ তৈরির কারখানা করব। এই ঘোষণা আমাদের জাগিয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের নতুন কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও আমরা গ্রাহকের চাহিদা এবং সরকারের ভিশন ২০৩০ মাথায় রেখে কাজ করছি। ফলে ভবিষ্যতে হয়তো আমরা ইউরোপীয় মানের বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারব। ইপির সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে নেসকো ছাড়াও রাজশাহী এবং বগুড়া অঞ্চলের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
×