ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরেনিয়ামের মজুত ২০ গুণ বাড়াতে চায় ইরান ॥ জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২ জানুয়ারি ২০২১

ইউরেনিয়ামের মজুত ২০ গুণ বাড়াতে চায় ইরান ॥ জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক ॥ ইউরেনিয়ামের মজুত ২০ গুণ বাড়াতে চাচ্ছে ইরান। জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা এই ঘটনাকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে। এখন পর্যন্ত ইউরেনিয়ামের মজুত ১২ গুণের বেশি বৃদ্ধি করেছে ইরান। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুতের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৪৪৩ কেজি। মূলত পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। তবে ইরান সবসময়ই দাবি করে আসছে যে, তারা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের মজুত আরও বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আইএইএ। ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরানকে ইউরেনিয়ামের মজুতের পরিমাণ ৪ শতাংশের কম রাখতে হবে। দেশটির ৩.৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুত থাকার কথা থাকলেও এর চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। চুক্তির বাইরে পরমাণুর মজুত বাড়িয়েই চলেছে দেশটি। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ইরানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছে। এছাড়া ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। এসব কারণে ইরান অন্য সময়ে চেয়ে বেশি মাত্রায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়াতে শুরু করে। তবে এখনও পরমাণু চুক্তি নিয়ে আশাবাদী যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং চীন। আইএইএ বলছে, ইরান তাদের ফরদো ফুয়েল ইনরিচমেন্ট প্লান্টের পরমাণু মজুত ২০ শতাংশে বৃদ্ধির পরিকল্পনার বিষয়ে জানিয়েছে। তবে সংস্থাটি বলছে, পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখন হবে সে বিষয়ে ইরানের দেওয়া চিঠিতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। গত মাসের শুরুর দিকে শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য ২০ শতাংশ মাত্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে ইউরেনিয়ামের উৎপাদন ও মজুত রাখতে পারার বিষয়ে আইন পাস করে ইরানের পার্লামেন্ট। এর ফলে দেশটির জাতীয় আণবিক শক্তি সংস্থা চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে। দেশটির অন্যতম শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসিন ফাখরিজাদেহের হত্যাকাণ্ডের পরই দেশটি এমন পদক্ষেপ নেয়। ওই আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় আণবিক শক্তি সংস্থাকে প্রতিবছর চাহিদা মেটানোর পর ২০ মাত্রার ১২০ কেজি ইউরেনিয়াম দেশে মজুত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে কোনো ধরণের বিলম্ব গ্রহণযোগ্য হবে না। পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষরকারী পক্ষগুলো যদি তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি মেনে না চলে এবং ইরানের তেল ও তেলজাত পণ্য রপ্তানি ও বিদেশ থেকে অর্থ দেশে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সৃষ্ট বাধা দূর না করে তাহলে এই আইন পাসের একমাসের মধ্যে পরমাণু ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত সব প্রটোকল বাস্তবায়ন থেকে সরে আসতে হবে। ইরান শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু কর্মসূচির কথা বললেও এর শত্রু দেশগুলোর দাবি, পরমাণু বোমা তৈরির জন্য ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়িয়ে চলেছে। ২০১৫ সালে চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে ওই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যাবেন।
×