ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রূপগঞ্জে গর্ভের সন্তান ২০ হাজার টাকায় আগাম বিক্রি

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

রূপগঞ্জে গর্ভের সন্তান ২০ হাজার টাকায় আগাম বিক্রি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ১১ ডিসেম্বর, রূপগঞ্জ ॥ এক সময়ের লড়াকু বাসচালক সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িয়ে নানা কারণে প্রায় কর্মহীন লাল মিয়া এখন পিঠা বিক্রেতা। আর মৌসুমি এ পিঠা বিক্রেতার কোন মতে চালানো সংসারে আগমন করতে যাচ্ছে নতুন অতিথি। এই অতিথি তার স্ত্রীর গর্ভে বড় হচ্ছে এ ধরায় আসবে বলে। আগামী জানুয়ারিতে আগমন হবে তার। এটি তার তৃতীয় সন্তান। তবে এমন সংবাদে সব বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটলেও দারিদ্র্যের ভয়ে মলিন লাল মিয়া ও তার স্ত্রী রোজিনা। ঋণের বোঝা লাঘবে অনাগত এ সন্তানটিকে গর্ভে রেখেই বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। এমনই এক সংবাদ পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা সদর ইউনিয়নের ভক্তবাড়ি এলাকায়। লাল মিয়া ভক্তবাড়ি এলাকার মারফন মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া। হতদরিদ্র লাল মিয়া জানান, রাজধানীর হাজারীবাগ থানার পাশের একটি ছোট্ট ঘরে তার জন্ম হয়। তার পিতা চান মিয়া শহরের অলিগলিতে রিক্সা চালাতেন। তা দিয়ে তাদের ৩ ভাই ও ৫ বোনকে লালন-পালন করেছেন। বাবার দারিদ্র্যের কারণে কাউকেই লেখাপড়া করানো সম্ভব হয়নি। তাই লাল মিয়া শৈশব থেকেই যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাসের হেলপারদের সহযোগিতা করতেন তিনি। এক সময় সংশ্লিষ্ট ওস্তাদকে বলে বাস চালনা রপ্ত করে নেন। কিন্তু লাইসেন্স না থাকা ও বয়স না হওয়ায় কোথাও চাকরি মেলেনি তার। ফলে জীবিকার তাগিদে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাস চালাতেন তিনি। পরে একটি মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে ২০০১ সালে রূপগঞ্জ ভক্তবাড়ি থেকে গুলিস্তান রোডে মিনিবাস চালক হয়ে কাজ করতে থাকেন তিনি। সে সময় দিনে হাজারের অধিক আয় হতো তার। এর মাঝে সড়ক দুর্ঘটনার জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্তকে ক্ষতিপূরণ আর জেলহাজতের পর বদলে গেল চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহের পথ। মাথায় আঘাত পাওয়ায় আগের শারীরিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। আবার রূপগঞ্জ গুলিস্তান রোডে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে শুরু হয় দিন মজুরের কাজ। আঘাতজনিত কারণে সেই দিনমজুরের কাজেও শারীরিক পরিশ্রম করতে পারেন না তিনি। তাই মাঝে মধ্যে ভাড়ায় লেগুনা, অটোরিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতেন তিনি। আর ঘর ভাড়া, নিজ চিকিৎসা ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে গিয়ে ঋণে জড়িয়ে পড়েন। একাধিক লোক থেকে সুদের ওপর ঋণ করেন তিনি। সম্প্রতি করোনা মহামারী আসার পর এ জীবিকা সমস্যা হয়ে ওঠে আরও ভয়াবহ। লকডাউনের সময় চরম বিপাকে পড়তে হয় তাকে। যদিও এখন ভক্তবাড়ি বাজার এলাকায় শীত মৌসুম আসার পর থেকে পিঠা বিক্রি করতে দেখা গেছে। লাল মিয়া আরও জানান, ১৯৯৮ থেকে মাদারীপুর জেলা শহরের বাসিন্দা রোজিনাকে বিয়ে করে রূপগঞ্জের ভক্তবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে সংসার জীবন শুরু করেন তিনি। তার সংসারে রয়েছে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। বড় মেয়ের বর্তমান বয়স ১৯ আর ছোট ছেলের বয়স ৭ বছর। বর্তমানে তার স্ত্রীর গর্ভে আসছে আরও একটি সন্তান। আগামী জানুয়ারিতে ডেলিভারি হওয়ার কথা। তবে লাল মিয়া ও রোজিনা এখন দুশ্চিন্তায়। এত ঋণের মাঝে, অভাব অনটনের মাঝে কেমনে চালাবে সংসার। তার ওপর সবেমাত্র বড় মেয়ের সন্তান হয়েছে। লাল মিয়া এখন নানা আর রোজিনা নানি হয়েছে। লোকে কি বলবে মেয়ে ও মা দুজনেই এক সঙ্গে মা হয়েছে! এমন ভাবনাও তার মুখ মলিনের দ্বিতীয় কারণ। এমন দোটানায় দারিদ্র্য আর লোকলজ্জার ভয়ে অনাগত সন্তানটিকে গর্ভে রেখেই বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
×