ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রয়োগ শুরু হবে আগামী সপ্তাহে

যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পেল ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন

প্রকাশিত: ২২:০৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পেল ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথম বৈশ্বিক ব্যবহারের জন্য করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। বুধবার দেশটির তরফ থেকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী সপ্তাহ থেকে যুক্তরাজ্যে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার এবং জার্মানির বায়োএনটেক যৌথভাবে ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে। এর আগে জার্মানি ভ্যাকসিনটি নিজেদের দেশে জরুরী ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসন এখনও বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রেখেছে। ভ্যাকসিনের বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন নিতে হয় এরমধ্যে যুক্তরাজ্যের মেডিক্যাল এ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) একটি। এমএইচআরএ ভ্যাকসিন অনুমোদনের বিষয়ে যে সুপারিশ করেছিল বুধবার তা গ্রহণ করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। ফলে ভ্যাকসিনটি এখন এমএইচআরএ এর অনুমোদন পেয়েছে। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটির অনুমোদনের জন্য গত সপ্তাহে এমএইচআরএ’ এর অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ হয়েছে তেমন কোন ভ্যাকসিনের এটিই প্রথম অনুমোদন। তবে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার শুরুতে চীন এবং রাশিয়া নিজেদের দেশে ব্যবহারের জন্য ভ্যাকসিনের জরুরী অনুমোদন দিয়েছে। তবে বৈশ্বিক ব্যবহারের জন্য যে সব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন প্রয়োজন দেশ দুটি তা অনুসরণ করেনি। তবে এই অনুমোদনের এখনও চূড়ান্ত হিসেবে দেখছেন না অনেকে। ভ্যাকসিনটির অনুমোদনের খবর প্রকাশের পরও নিউইয়র্ক টাইমস এর পূর্ণ ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য ভ্যাকসিনের অনুমোদনের ঘরে শূন্যই লেখা ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এখন পর্যন্ত কোন নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের অনুমোদনের বিষয়ে কিছু বলেনি। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যই প্রথম দেশের বাইরে তৈরি কোন ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমোদন দিলো। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে এখন বিপাকে রয়েছে দেশটি। সংক্রমণের ‘সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে’ থাকা ব্যক্তিদের আগামী সপ্তাহ থেকে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর খবর দিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকককে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান বলছে, আগামী সপ্তাহে তারা আট লাখ ডোজ ভ্যাকসিন হাতে পাবে। এজন্য ৫০টি হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফাইজারের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের মধ্যে যুক্তরাজ্য চার কোটি ডোজ প্রিঅর্ডার বা অগ্রিম কিনে রেখেছিল যা সর্বোচ্চ দুই কোটি মানুষকে দিতে পারবে তারা। এই চার কোটি ডোজের মধ্যে চলতি বছর তারা দুই কোটি ডোজ হাতে পাবে। বাকি ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্য পর্যায়ক্রমে পেতে থাকবে। সংরক্ষণ প্রক্রিয়া জটিল হওয়ার কারণে ভ্যাকসিনটি সব দেশ ব্যবহার করতে পারবে না। ভ্যাকসিনটি মাইনাস ৮০ ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। পাশর্^প্রতিক্রিয়া শূন্য বলে দাবি করার পরও ভ্যাকসিনটি সারা বিশ্বে ব্যবহারোপযোগী করা জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যেও এত শীতল পরিবেশে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা না থাকায় ফাইজার নিজেরাই সংরক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করে দিচ্ছে। ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ফাইজারের ভ্যাকসিনটি ৯৪ শতাংশ কার্যকর। এই পরীক্ষায় সম্পৃক্ত করা হয়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৪১ হাজার মানুষকে। তাদের অর্ধেকের মধ্যে এ ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয় আর বাকি অর্ধেককে প্লাসেবো প্রয়োগ করা হয়। এরপর ভ্যাকসিনটির যে ফলাফল এসেছে তা বিশ্লেষণ করে কার্যকারিতার এই মাত্রা নির্ধারণ করেছে ফাইজার। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। তবে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষে ভ্যাকসিনটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এজন্য এটির অনুমোদনে কিছুটা সময় বেশি লাগছে। তবে এই ভ্যাকসিনটির সংরক্ষণ ব্যবস্থা সহজ এবং দাম নাগালের মধ্যে থাকাতে সব থেকে জনপ্রিয় ভ্যাকসিন বলা হচ্ছে।
×