ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আয়কর রিটার্ন জমার সময় এক মাস বাড়ল

প্রকাশিত: ২২:১৯, ১ ডিসেম্বর ২০২০

আয়কর রিটার্ন জমার সময় এক মাস বাড়ল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেষ পর্যন্ত করোনা মহামারীর কারণ দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় এক মাস বাড়াল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সোমবার কর আইন-১ এর দ্বিতীয় সচিব মহিদুল ইসলাম চৌধুরী স্বাক্ষরিত আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। করোনা পরিস্থিতিতে আয়কর মেলার শেষ দিনে সময় বাড়িয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়, ‘আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ধারা ১৮৪জি-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে, ব্যক্তি- শ্রেণীর করদাতার ২০২০-২১ করবছরে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা (যা ট্যাক্স ডে নামে সংজ্ঞায়িত) ৩০ নবেম্বর ২০২০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বর্ধিত করল।’ এর আগে সকাল থেকে আয়কর মেলার শেষ দিনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ দিনে করদাতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে কর অঞ্চলগুলোতে। কোথাও সেবাগ্রহীতাদের লাইন মূল ভবন ছেড়ে রাস্তায় গড়িয়েছে। মানুষের গাদাগাদিতে স্বাস্থ্যবিধির প্রতিপালন ছিল না। এছাড়া জ্বর মাপার ব্যবস্থা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারও দেখা যায়নি। সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও বিজয়নগরের বিভিন্ন কর অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে এমন অবস্থার। করদাতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। মানুষের ভিড়ে বুথ খুঁজে না পেয়ে অনেকেই পথ হারাচ্ছেন। বিজয়নগরের শাহান শাহ টাওয়ারে কর অঞ্চল-৪-এ রিটার্ন জমা দিতে আসা সরকারী চাকরিজীবী সামাদ বলেন, ‘আধ ঘণ্টার মতো বাইরের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরে এত জটলা কেন জানি না। বৃহস্পতিবার তো জমা দিয়েছি এত ভিড় ছিল না।’ কর অঞ্চল-৪-এর ভবনের নিচে অস্থায়ী ৬টি বুথে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। মানুষের দীর্ঘ লাইন মূল সড়কে চলে যাওয়ায় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। বিজয়নগরের ২০৯ এ বি শহীদ নজরুল ইসলামে অবস্থিত কর অঞ্চল-৬-তেও একই চিত্রের দেখা মিলেছে। রিটার্ন জমা দিয়ে ব্যবসায়ী আনোয়ার আবেদিন বলেন, ‘দেখেন অবস্থা। কি ভিড়! কোথাও কোন করোনা নেই, কোন স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।’ করদাতা ও কর কর্মকর্তারা বলছেন, রিটার্ন জমা দেয়ার সময় না থাকায় ও জমা দেয়ার সময় না বাড়ানোর কারণে কর অঞ্চলগুলোতে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে। এর আগে ৩০ নবেম্বরের পর আয়কর রিটার্নের সময়সীমা বাড়ছে না বলে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ দিন ৩০ নবেম্বরই থাকছে। নির্ধারিত সময়ে যারা আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না তারা সংশ্লিষ্ট কর অফিসে আবেদন করতে পারবেন। তবে ২ শতাংশ জরিমানার বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়। গ্রাহক সঠিক সময়ে কেন রিটার্ন জমা দিতে পারেনি, এর যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে জরিমানা মওকুফ করা হবে। বিক্ষোভ স্থগিত ॥ এদিকে যুগ্ম কমিশনার লুৎফর কবিরের বিরুদ্ধে কর্মচারী লাঞ্ছনার অভিযোগ এনে সোমবার সকালে এনবিআর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে বাংলাদেশ কাস্টমস, এক্সাইজ এ্যান্ড ভ্যাট এক্সিকিউটিভ অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশন। ওই কর্মকর্তার শাস্তির দাবি জানান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। পরে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিমের আশ্বাসে এ বিক্ষোভ স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশ কাস্টমস, এক্সাইজ এ্যান্ড ভ্যাট এক্সিকিউটিভ অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বাকাএভ) সভাপতি মাজহারুল ইসলাম সোমবার দুপুরে বলেন, ‘চেয়ারম্যান স্যারের আশ্বাসে এখন আমাদের বিক্ষোভ স্থগিত আছে।’ এর আগে, সকালে রাজস্ব ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করায় ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার লুৎফুল কবিরকে অবিলম্বে অব্যাহতি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে বাকাএভ ও এর অন্তর্ভুক্ত তিনটি কর অঞ্চলের কর্মীরা। এনবিআর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এর আগে, গত ২৯ নবেম্বর তারা একই দাবিতে এনবিআরের কাছে ওই যুগ্ম কমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। উল্লেখ্য, গত ২৬ নবেম্বর পর্যন্ত দুই হাজার ৩৮৭ কোটি টাকার পরিশোধিত কর আদায় হয়েছে বলে জানিয়েছে এনবিআর। এ সময়ের মধ্যে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৮২৫টি রিটার্ন দাখিল হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। করদাতার সংখ্যা বেড়েছে ৩৫৭ শতাংশ ॥ বিগত এক দশকে দেশে করদাতার সংখ্যা বেড়েছে ৩৫৭ শতাংশ। একই সময়ে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১২৫ শতাংশ। সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে ‘স্বচ্ছ ও আধুনিক কর সেবা প্রদানের মাধ্যমে করদাতা বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর নীতি) আলমগীর হোসেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘এক দশকে কর জনসংখ্যা করদাতা অনুপাত বেড়েছে ৩১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, আয়কর খাতে প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের অধিক।’ এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘করবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্বচ্ছ পরিবেশ নিশ্চিত হলে বাড়বে করদাতার সংখ্যা। করবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা কর হার কমিয়েছি। বিভিন্ন অটোমেশনের মাধ্যমে রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা করছি। ভবিষ্যত এমন অনেক কার্যক্রম থাকবে।’
×