ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন কিংবদন্তি ফুটবলার বাদল রায়

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২৩ নভেম্বর ২০২০

চলে গেলেন কিংবদন্তি ফুটবলার বাদল রায়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মৃত্যু নামক অমোঘ নিয়তির কাছে হেরে গেলেন কিংবদন্তি ফুটবলার বাদল রায়। খেলোয়াড়ী জীবনের বাইরে সংগঠক হিসেবেও বাংলাদেশের এই সাবেক তারকা ফুটবলারের রয়েছে যথেষ্ট সুনাম। কিন্তু তার এই বর্ণাঢ্য ক্রীড়া জীবন এখন ইতিহাস। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যালে মৃত্যুবরণ করেন। গত ৫ নবেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে আজগর আলী হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক এই তারকা ফুটবলার। ১১ নবেম্বর অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে আজগর আলী হাসপাতাল থেকে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বাদল রায়ের স্ত্রী মাধুরী রায় জানিয়েছিলেন, হঠাৎ তার কিডনি সমস্যা দেখা দেয়। ক্রিয়েটিনিং বেড়ে গেছে। রক্তচাপ কমে গেছে। এখন ডায়ালাইসিস করতে হবে। তাই স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাদল রায় গত ১৩ আগস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকে চিকিৎসা করে করোনামুক্ত হন। গত বৃহস্পতিবার ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আসগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ডাক্তাররা তাকে দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে যান। প্রসঙ্গত ২০১৭ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিন কারণে বাদল রায়ের জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছিল। দেশে চিকিৎসা নেয়ার পর অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাদল রায়কে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছিলেন। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরেন তিনি। বাদল রায়ের বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারে মোহামেডানের জার্সিতে খেলেছেন ১২ বছর। বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন পাঁচ বছর। দেশের ফুটবল অঙ্গনে তিনি মোহামেডানের বাদল রায় হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন। কিন্তু একের পর এক রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাদল রায়। দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ডের সব কষ্টের সমাপ্তি ঘটল মৃত্যুর কাছে হার মেনে। তিনি ১৯৫৭ সালের ৪ জুলাই কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার পর সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বাদল রায়। বিশেষ করে প্রিয় খেলা ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন নিজেকে। তিনবার তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাহী কমিটির সহসভাপতি। এর আগে সহসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন বাদল রায়। কিন্তু অসুস্থতার কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তবে জীবদ্দশায় ফুটবলের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার ছিলেন বাদল। ক্যাসিনো কাণ্ডের পর দেশের ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ক্লাব পুনর্গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। ১৯৮১ ও ১৯৮৬ সালে মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন বাদল রায়। ১৯৮৬ সালে মোহামেডানের লীগ শিরোপা পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন বাদল রায়। মোহামেডানের ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার। এই সাবেক তারকা ফুটবলারের মৃত্যুর খবর চাউর হওয়ার পর শোকের ছায়া নেমে আসে ক্রীড়াঙ্গনে। ক্লাব, ক্রীড়া ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি দেশের ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেন বাদল রায়ের মৃত্যুতে। এক শোকবার্তায় তিনি সাবেক তারকা ফুটবলারের আত্মার শান্তি কামনা করেন। ঢাকার ওয়ারির স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তবে তার জন্মস্থান হচ্ছে কুমিল্লা। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন বাদল রায়।
×