ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বোন গণধর্ষণের শিকার

মামলা তুলে না নেয়ায় ভাইকে অপহরণ করে নির্যাতন

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১৯ নভেম্বর ২০২০

মামলা তুলে না নেয়ায় ভাইকে অপহরণ করে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ গণধর্ষণের মামলা তুলে না নেয়ায় ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়ের ভাইকে অপহরণের পর হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে আসামিরা। মৃত ভেবে বস্তাবন্দী করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার সোয়ালিয়া ব্রিজ নামকস্থান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে এলাকাবাসী। প্রথমে তাকে স্থানীয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে অবস্থার অবনতি হলে বুধবার সকালে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নির্যাতিত ওই যুবকের বোন ধর্ষণের শিকার এ নারী জানান, সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত গণধর্ষণের মামলা (নাঃ শিশু-৪৯/১৮) তুলে নেয়ার জন্য আসামি ও তাদের স্বজনরা তার ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এরই জেরে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তার ভাই বাড়ি থেকে অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে শ্যামনগর উপশহরে যাওয়ার সময় তাকে অপহরণ করা হয়। মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে সোয়ালিয়া ব্রিজের পাশ থেকে দু’হাত ও দু’পা বাঁধা বস্তাবন্দীসহ মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি এ সময় অভিযোগ করে বলেন, তার দায়েরকৃত মামলায় নিশ্চিত শাস্তি জানতে পেরে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তার ভাইকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ জুবায়ের জানান, ওই যুবকের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ভারি জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এছাড়া শরীরে বিষাক্ত কোন তরল পুশ করা হয়েছে। তাকে জরুরী ভিত্তিতে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বুধবার বিকেলে জানান, এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত থানায় কেউ কোন অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের সুকুমার মণ্ডল ও দেবীপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম রসুল ওই নারীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ফুলবাড়ি গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের মৎস্য ঘেরের বাসায় নিয়ে যায়। ওইদিন তারা বহু প্রতিশ্রুতি দিয়ে হুজুর ডেকে ছিদ্দিকের সঙ্গে ওই নারীর কাল্পনিক বিয়ে দেয়। ওই বছরের ১১ জুন সকালে খুলনায় একটি বাড়িতে তাকে আটকে রেখে ৫ দিন যাবত ছিদ্দিক, গোলাম রসুল ও সুকুমার তিনজনে মিলে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ওই বছরের ২৬ জুলাই ওই নারী বাদী হয়ে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে তারা বিভিন্ন সময় মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাদের হুমকি দিয়ে আসছিল।
×