ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মাউশির আদেশ জারি

করোনাকালে টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোন ফি নয়

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ১৯ নভেম্বর ২০২০

করোনাকালে টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোন ফি নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার বন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিতে পারবে বলে আদেশ জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। তবে একই সঙ্গে আদেশে বলা হয়েছে, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন বা উন্নয়ন ফিয়ের মতো অনুষঙ্গিক ফি আদায় করতে পারবে না। ফি নিয়ে নানা অভিযোগের মধ্যে বুধবার এ আদেশ জারি করেছে মাউশি। এদিকে করোনাকালীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন ফি মওকুফ করাসহ চার দফা দাবি তুলেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন থাকা অভিভাবকদের ছাড় দিয়ে স্কুল-কলেজগুলোকে তাদের শিক্ষার্থীদের শুধুই টিউশন ফি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মাউশি। আদেশে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের এ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোন ফি নেয়া যাবে না। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন প্রতিষ্ঠান এসব ফি আদায় করে থাকলে তা ফেরত দেবে বা টিউশন ফিয়ের সঙ্গে তা সমন্বয় করবে। অপরদিকে কোন অভিভাবক চরম আর্থিক সঙ্কটে থাকলে তার সন্তানের টিউশন ফিয়ের বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবে। কোন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে যত্নশীল হতে বলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। নির্দেশনা আরও বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর থেকে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ক্লাসের পাশাপাশি বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্যকরভাবে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করলেও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তা ভালভাবে করতে পারেনি। একইভাবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এসব অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পেরেছে, কিছু শিক্ষার্থী পারেনি। সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ করে উদ্ভূত এ পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার। তবে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়ে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অভিভাবকদের মতদ্বৈততা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অভিভাবকরা বলছেন, একদিকে স্কুল বন্ধ ছিল আর অন্যদিকে এ করোনার সময়ে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অতএব তাদের পক্ষে টিউশন ফি দেয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও স্কুল রক্ষণাবেক্ষণ খাতে প্রতি মাসে তাদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেই হয়। মাউশি বলেছে, এমতাবস্থায় আমাদের যেমন অভিভাবকদের অসুবিধার কথা ভাবতে হবে, অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে না যায় কিংবা বেতন না পেয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবন যেন সঙ্কটে পতিত না হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। পূর্বাপর বিষয়গুলো বিবেচনা করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো (এমপিওভুক্ত ও এমপিও বিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নেবে। কিন্তু এ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোন ফি নিতে পারবে না বা নিয়ে থাকলে তা ফেরত দেবে অথবা তা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে। এছাড়া অন্য কোন ফি যদি অব্যয়িত থাকে তা একইভাবে ফেরত দেবে বা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে। তবে যদি কোন অভিভাবক চরম আর্থিক সঙ্কটে থাকেন, তাহলে ওই শিক্ষার্থীর টিউশন ফির বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবে। এদিকে এদিকে করোনাকালীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন ফি মওকুফ করাসহ চার দফা দাবি তুলেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। চার দফা দাবিতে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। সংগঠনটির আহ্বায়ক এপিএম সুহেলের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ইসমাইল সম্রাটের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির উপদেষ্টা মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, মুজাম্মেল মিয়াজীসহ অন্যরা। ছিলেন পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সমন্বয়ক একেএম রাজন হোসাইন, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিম খান নিলয়, মোঃ সাইফুল ইসলামসহ অন্যরা। এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়াতুল্লাহ বেহেশতি, ভুক্তভোগী অভিভাবক মাসুম বিল্লাহ, দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষার্থী পৃথু হামিদ ও রিয়াদ হোসেন বক্তব্য রাখেন। চার দফা দাবির মধ্যে আছে-করোনাকালীন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বা বেতন অর্ধেক মওকুফ করতে হবে। করোনাকালীন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট একটিভিটি ফি (ল্যাব ফি, লাইব্রেরি ফি, ট্রান্সপোর্ট ফি, ক্লাব ফি ইত্যাদি) মওকুফ করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে এপিএম সুহেল সম্প্রতি ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন ভাতা মওকুফের দাবিতে আন্দোলনরত দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কারের বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন জানান। বলেন, করোনাকালীন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অপারগদের জন্য বিকল্প যৌক্তিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। করোনাকালীন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ইন্টারনেট (ব্রডব্যান্ড, মোবাইল ডাটা) ব্যবহারে মূল্যহ্রাস বা বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা করতে হবে। ৭ দাবিতে ইবতেদায়ির শিক্ষকদের অবস্থান অব্যাহত ॥ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সকল ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণাসহ সাত দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। স্বতন্ত্র মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি চতুর্থ দিনের মতো এ কর্মসূচী পালন করছে। শিক্ষক সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি জানিয়ে আসছি। ২০১৮ সালে আমাদের ধর্মঘট ও অনশন চলাকালে সরকারের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব শিক্ষক সমিতির দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
×