ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস নেই কৃষকের

ঘাটাইলে পোল্ট্রির বিষাক্ত বর্জ্যে ফসলি জমি নষ্ট

প্রকাশিত: ২১:১৭, ১২ নভেম্বর ২০২০

ঘাটাইলে পোল্ট্রির বিষাক্ত বর্জ্যে ফসলি জমি নষ্ট

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১১ নবেম্বর ॥ পোলট্রি হ্যাচারির (সিপি) বিষাক্ত বর্জ্যে কষ্টে ফলানো ফসল চোখের সামনেই পচে-পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আকন্দ বাইদ গ্রামের কৃষকের। অথচ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো সাহস হয় না কোন কৃষকের। বছরের পর বছর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঘামের বিনিময়ে ফলানো ফসল। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এমন ঘটনাই ঘটছে উপজেলার আকন্দ বাইদ গ্রামে। প্রতিবাদে কৃষকরা মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর দিয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। সরজমিনে দেখা যায়, আকন্দের বাইদ ব্রয়লার সিপি ভালুকা নামে পোলট্রি হ্যাচারিটি কৃষিজমি ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা এ প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। পাইপ দিয়ে বর্জ্য ছেড়ে দেয়া হয় ফসলি জমিতে। এতে বিনষ্ট হচ্ছে ফসল। দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এলাকার মানুষের শ্বাসকষ্টসহ দেখা দিয়েছে নানা ধরনের রোগ। অসহায় কৃষক যারা জমি চাষ করে খায় তাদের হয়েছে মহাবিপত্তি। প্রতি বছরের ন্যায় চলতি বছরও প্রায় ৫০ একর আমন ধানের গোড়া পচে শীষ পুড়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে প্রায় তিন শ’ কৃষক পরিবারের স্বপ্ন। জমির উৎপাদিত ফসল বাঁচাতে পরবর্তীতে কৃষকরা গণস্বাক্ষর করে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। স্থানীয় কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পোলট্রি হ্যাচারি কর্তৃপক্ষকে প্রতিবারই ফসল ক্ষতির বিষয়টি জানানো হলেও কোন লাভ হয় না। উল্টো একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে আমাদের মামলার ভয় দেখানো হয়। প্রতি একর জমিতে এখানে আমন ধান হয় প্রায় ৫০ মণ। সে হিসেবে এবার প্রায় আড়াই হাজার মণ আমন ধান পোলট্রি হ্যাচারির বিষাক্ত বর্জ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। অপর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক লস্কর আলী জানান, ৫ বছর ধরে এ ঘটনা ঘটছে। এ বছরও তাদের প্রায় ৫০/৫৫ একর জমির আমন ধানের গোড়া পচে ধানের শীষসহ গাছ পুড়ে গেছে। আমরা এর একটা সমাধান চাই। আমাদের এই জমির ধানেই সংসার চলে। কিন্তু গত কয়েক বছর সব ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ না পেলে বউ-বাচ্চা নিয়ে পথে বসতে হবে। লক্ষিন্দর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান খান হাবিব বলেন, ইউএনও বরাবর আমরা অভিযোগ দিয়েছি, যেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তাদের ক্ষতিপূরণ পায় এবং ওই কারখানার বিষাক্ত পানি কৃষকের জমিতে পুনরায় না আসে সেই ব্যবস্থা যেন তারা করে দেন। তাহলেই অসহায় দরিদ্র কৃষক দু’মুঠো ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবে। এদিকে ব্রয়লার সিপি ভালুকা নামে পোলট্রি হ্যাচারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোন কথা বলবেন না বলে জানান। এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। রিপোর্ট এলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কারও যদি আপীল থাকে সেটাও আমলে নেয়া হবে।
×