ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্ত্রীর কথায় হাতি কিনলেন দরিদ্র কৃষক

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

স্ত্রীর কথায় হাতি কিনলেন দরিদ্র কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২২ সেপ্টেম্বর ॥ স্ত্রী স্বপ্নে দেখেছেন। তাকে দেবাদিদেব মহাদেব (শিব) হাতিকে যতœ করে লালন পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই স্ত্রী স্বামীর কাছে আবদার করে হাতি কিনে দিতে। আবদার পূরণ করতে ৩ বিঘা জমি বিক্রি করে সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় হাতি কিনে আনেন দরিদ্র কৃষক দুলাল চন্দ্র রায়। এই হাতি কেনার ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। গ্রামের মানুষজন বলছে, স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা। কেউ বলছে বিষয়টি নিছক মতিভ্রম-মোহ। গ্রামবাসীরা জানান, সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রতিধর গ্রামের গরিব প্রান্তিক কৃষক দুলাল চন্দ্র রায় (৪৮)। পৈত্রিক সূত্রে কয়েক বিঘা চাষের জমির মালিক। কৃষি কাজ করে সংসার চলে। ২০ বছর পূর্বে তুলসি রানীর সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ছেলে ও মেয়ে আছে। কৃষক দুলাল চন্দ্র দাবি করেন, কয়েক বছর ধরে তার স্ত্রীর ওপর দেবতা ভর করে। সে তখন অন্য জগতের চলে যায়। কেন যেন, বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আনমনা হয়ে যায়। সংসারে মন থাকে না। আগে থেকেই তার স্ত্রী মানুষকে নানা রোগ ব্যাধিতে ঝাঁড় ফুঁক ও গাছ গাছালির ওষুধ দিয়ে আসছিল। মানুষ উপকার পেয়ে পুনরায় আসে। তার সুনাম বহুদূরে ছড়িয়ে পড়ে। তার স্ত্রী স্বপ্নে দেখেন শিব ঠাকুর তাকে বলেছে, হাতি কিনে লালন পালন করতে। তাহলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। পাবে দৈবিক শক্তি। দরিদ্র কৃষক দুলাল চন্দ্রের স্ত্রীর প্রতি বিরল ভালবাসা অনুরাগের মূল্য দিতে গিয়ে হাতি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। সিলেটের মৌলিভীবাজার থেকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় নগদ অর্থে হাতি কিনে নিয়ে আসে। হাতি ট্রাকে করে আনতে পরিবহন ভাড়া লাগে ২০ হাজার টাকা। জমি বিক্রি করে হাতি কিনতে সব টাকা শেষ হয়ে গেছে। ট্রাক ভারা ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে বাড়ির ফলদ গাছ বিক্রি করে। এর আগে মাহাদেব স্ত্রীকে স্বপ্ন দেখিয়ে বলেছিল ঘোড়া কিনতে। সেই সময় ৮ লাখ টাকা দিয়ে ঘোড়া কিনে এনেছিল। সে ঘোড়া এখনও আছে। তবে খাদ্যাভাব ও যন্ত্রের অভাবে ঘোড়াটি এখন রুগ্ন হয়ে গেছে। এবারে কৃষক দুলাল চন্দ্র হাতি পতিপালনে হাতির সঙ্গে মাহুতকে নিয়ে এসেছে। তাকে পোষ মানাতে সিলেট থেকে এসেছে শরিফুল ইসলাম নামের হাতির একজন মাহুত। তাকে প্রতিমাসে বেতন দেয়া হয় ১৫ হাজার টাকা। মাহুতকে পৃথকভাবে মাসিক খোরাকি হিসেবে দিতে হবে আরও ৬ হাজার টাকা। সে হাতি চড়ানো শেখাবে। হাতিকে খাওয়াবে। হাতির যত্ন নেবে। হাতির মাহুত শরিফুল ইসলাম জানান, একটি হাতি প্রতিদিন ১০টি কলার গাছ, ৩ কেজি ভুসি, দুই কেজি গুড়, দুই পীর (ছড়ি) কলা খাদ্য হিসেবে খায়। প্রতিমাসে হাতির খোরাকের জন্য প্রায় ১০/১২ হাজার টাকা খরচ হবে। দরিদ্র কৃষক দুলালকে প্রতিমাসে হাতির পেছনে ব্যয় করতে হবে প্রায় ৩৫/৪০ হাজার টাকা। হাতির রোগ বালাই হলে পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ওষুধের নির্বাহ করতে হবে। প্রতিমাসে হাতি পালনের ব্যয় নিয়ে চিন্তিত দরিদ্র কৃষক দুলাল চন্দ্র। তবে তিনি বলেন, ঈশ্বর হাতি কিনতে বলেছেন। তিনিই উপায় করে দেবেন। পঞ্চগ্রামে এই হাতি দেখতে এখন প্রতিদিন শতশত মানুষ ছুটছে। সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়িতে মানুষের ভিড় করে। বাড়িতে হাতি দেখার পাশাপাশি লোকজন অন্ধ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। তুলসি রানী দৈবিক শক্তির অধিকারী হয়েছে। তাই তার কাছে নানা রোগ, শত্রুবশ, মামলায় জয়, বিরহ, প্রেম ভালবাসা ও মনোষ্কামনা পূরণেও দৈবিক তদ্বির করতে মানুষ আসছে। তুলসি রানীর বাড়িতে কয়েকটি দেবীর পৃথক মন্দির ঘর আছে। মহাদেব, বিশ্ব কর্মা, মা মনসা, মা কালী ও জগন্নাথের মন্দির আছে। মন্দিরে নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যা পূজা দেয়া হয়। ভক্তরা ও তদ্বির নিতে আসা লোকজনও পূজা অর্চনা করে। দুলাল চন্দ্রের স্ত্রী তুলসী রানী জানান, ভগবানের দয়ায় হাতি আনার পর আমি কিছুটা সুস্থ আছি। ভগবান স্বপ্নে বলেছে হাতি কিনতে; স্বামী কিনে এনে দিয়েছে। তাই আমি খুব খুশি। পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, দুলাল চন্দ্র স্ত্রীর জন্য হাতি কিনেছে শুনে দেখতে গিয়েছিলাম। হাতির খরচ কিভাবে বহন করবে। এই নিয়ে সে চিন্তিত। তার স্ত্রীর আবদার পূরণ করায় এটা একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভাদাই দুর্গা মন্দিরের পুরোহিত বিশ্বনাথ জানান, সনাতন ধর্মে হাতি শুভ। এটি শক্তি ও ঐশ^র্যের প্রতীক। কিন্তু ঘোড়া অশুভ দেবতার প্রতীক। ঘোড়া অপদেবতা। সনাতন ধর্মে কোন দেবতার বাহন ঘোড়া নয়।
×