ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আফগান শান্তি আলোচনা শুরু

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

আফগান শান্তি আলোচনা শুরু

আফগানিস্তানে প্রায় দুই দশক ধরে চলা যুদ্ধ অবসানে শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। বৈঠকে আফগান সরকারের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ, তালেবানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদরসহ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ বছরের চেষ্টার পর শনিবার প্রথমবারের মতো তালেবান ও আফগান সরকার সরাসরি বৈঠকে অংশ নেয়। তবে এ আলোচনা থেকে অতি দ্রুত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নাও আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আফগান সরকারের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ বৈঠকে বলেন, আমরা সুদূরপ্রসারী ও স্থায়ী শান্তি চাই। তিনি বলেন, আমরা যদি খোলামনে আলোচনা করি এবং সেভাবে কাজ করি তবে অবশ্যই আফগানিস্তানের মাটি থেকে চিরতরে ক্ষুধা ও দারিদ্রতা দূর করতে পারি। খবর ডন, বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। তালেবান নেতা মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদর বলেন, আমরা আফগানিস্তানকে একটি প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। এ বিষয়ে তালেবান কোনপ্রকার আপোস করবে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, আফগানিস্তানের ভাগ্য আফগানরাই নির্ধারণ করুক। তিনি বলেন, তবে সকল পক্ষের উচিত একটি শান্তিময় পরিবেশ খুঁজে বের করা। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি বৈঠক শুরুর আগে বলেন, বৈঠকে সফলতা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের ছাড়ের ওপর। তবে উভয় পক্ষকে ভাল মানসিকতা পোষণ করতে হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে সম্মত হওয়া বিতর্কিত বন্দী বিনিময় চুক্তির বিষয়ে তিক্ত অসম্মতির কারণে পরিকল্পিত সময়ের চেয়ে ছয়মাস পর যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এ আলোচনা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ ভয়াবহ বিমান হামলার ১৯তম বার্ষিকীর একদিন পর আফগান শান্তি আলোচনা শুরু হলো। আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে সহযোগিতা করা তালেবান সরকারকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আক্রমণ চালায়। এ শান্তি আলোচনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাওয়ার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ‘সংঘাত পরিহার এবং আফগান জনগণের চাহিদা পূরণ করে দেশকে কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে উভয় পক্ষ দ্বিধাহীনভাবে অগ্রসর হবে।’ নবেম্বরে পুনর্নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে নামা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধের অবসানে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং তিনি চান আগামী বছর নাগাদ সকল বিদেশী সৈন্য আফগাস্তিান ত্যাগ করুক। আফগানিস্তানের বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ শান্তি চুক্তি করতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। আর এটি নির্ভর করবে দেশের জন্য তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিশন কার্যক্রমে উভয় পক্ষের ইচ্ছার ওপর। এক্ষেত্রে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকারকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানো তালেবান একটি ইসলামিক ‘আমিরাতের’ বিষয়ে আফগানিস্তানকে ঢেলে সাজানোর বিষয়ে চাপ দেবে বলে মনে করা হচ্ছিল। অপরদিকে গনির প্রশাসন পশ্চিমা সমর্থিত সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা চালাবে। পশ্চিমা ধাঁচের এ সংবিধানে নারীদের ব্যাপক স্বাধীনতা দেয়াসহ আরও অনেক অধিকারের কথা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। তবে কাতারের এ আলোচনায় উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন হতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক আফগান। কাবুলের বাসিন্দা ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমি বিশ্বাস করি না এই যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ হবে। এই আলোচনা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। কারণ, দুই পক্ষই তাদের বিষয়সূচী ও ব্যবস্থা কার্যকর করতে চায়। তালেবানের শর্ত অনুযায়ী, আফগানিস্তান থেকে সেনার সংখ্যা ১২ হাজার থেকে কমিয়ে ৮,৬০০ করার কথা ছিল আমেরিকার। যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তালেবানদের চাহিদা মতো তাদের ৫ হাজার বন্দীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে বেঁকে বসে আশরাফ গনির সরকার।
×