ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চুরির উদ্দেশ্যে হামলা, না অন্যকিছু

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

চুরির উদ্দেশ্যে হামলা, না অন্যকিছু

গাফফার খান চৌধুরী/ সাজেদুর রহমান শিলু ॥ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার পিতার ওপর নির্মম হামলার প্রকৃত কারণ চুরি নাকি অন্যকিছু, তা নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষ বলছে, হামলার পেছনে থাকতে পারে মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও অবৈধ দখলে বাঁধা দেয়ার ঘটনার প্রতিশোধ। এদিকে ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা কোন চুরির ঘটনা নয় বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন। শনিবার রাতে ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা দিনাজপুর ডিবি পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউএনও বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন। তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওয়াহিদা খানমকে আপাতত বিদেশ পাঠানোর প্রয়োজন নেই। তিনি পরিচিতদের চিনতে পারছেন। তার মাথার বাঁ দিকটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডানপাশের কিছু অংশ প্যারালাইজড অবস্থায় আছে। যদিও র‌্যাবের কাছে যুবলীগ সদস্য আসাদুল এবং রংমিস্ত্রি নবিরুল ও সান্টু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছে, চুরি করতে গিয়েই এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, শুধু চুরির উদ্দেশ্য থেকে এই হামলার ঘটনা ঘটেনি। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে যাদের আটক ও গ্রেফতার করা হয়, তাদের মধ্যে নৈশপ্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশ, রংমিস্ত্রি নবিরুল ও সান্টু ছাড়া বাকি সবার নামে ঘোড়াঘাট থানায় রয়েছে একাধিক মাদক, চাঁদাবাজি ও জমি দখলের মামলা। তাদের নেতৃত্বে ঘোড়াঘাটে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে ছিনতাই ও জমি দখলের ঘটনা। উপজেলাজুড়ে মাদক কারবারেও তারা জড়িত। করোনাকালে ত্রাণ চুরি, জমি কেনাবেচায় চাঁদা আদায়, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং সংসদ সদস্যের ওপর হামলার চেষ্টাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। হামলার ঘটনায় শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা যুবলীগ সদস্য আসাদুল ইসলাম, ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মাসুদ রহমান, নৈশপ্রহরী নাহিদ ও রংমিস্ত্রি নবীরুল ও সান্টুকে আটক করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় র‌্যাব-১৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এর অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলেন, হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করেছিল র‌্যাব। তাদের মধ্যে আসাদুল ইসলাম, নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আসাদুলের দাবি অনুযায়ী, এটি একটি চুরির ঘটনা। প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আরও সময় দিতে হবে, আরও তদন্ত করতে হবে, প্রয়োজনে সম্পৃক্তদের রিমান্ডে নিতে হবে। তিনি বলেন, আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় তদন্তে বাধা হবে না। হামলার মোটিভ জানতে ছায়া তদন্ত চলবে। এদিকে ওই হামলার পর এলাকাবাসী ইতোপূর্বে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার যোগসূত্র খুঁজছেন। তারা মনে করছেন, ওসব ঘটনার কারণেও, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা হতে পারে। প্রসঙ্গত, গত ১২ মে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য নিজ তহবিল থেকে ঘোড়াঘাট পৌরসভার মেয়র আঃ সাত্তার মিলনের মাধ্যমে ইফতারসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেন। সেই ইফতারসামগ্রী ও ত্রাণ ছিনিয়ে নিয়ে মেয়র আঃ সাত্তার মিলনের পাঞ্জাবি ছেঁড়াসহ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার মামলায় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগী মাসুদ রানা, ইয়াদ আলী, নাহিদ, আব্দুর রবকে আসামি করা হয়েছে। সে সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদা খানম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঘোড়াঘাট রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় নুনদহ ঘাটে অবৈধভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছিলেন ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি মাসুদ। ইউএনও ওয়াহিদা খানম সেখানে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এ ঘটনাও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার একটি কারণ হতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। গত ১৪ মে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সায়েদ আলীর জামাতা মোঃ আবিদুর রহমান যুবলীগ দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি অভিযোগ পাঠান। অভিযোগটি ইউএনও ওয়াহিদার কাছেও আসে। অভিযোগে বলা হয়, ‘উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদ রানা আমার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। বিভিন্ন সময় তাদের দুই লাখ টাকা দেয়া হয়। বাকি টাকা দিতে বিলম্ব হলে তারা কলোনিপাড়া এলাকায় আমাদের এক একর জমি দখল করে নেয়।’ ওয়াহিদা খানম বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে জমি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, জাহাঙ্গীর, আসাদুল ও মাসুদ প্রায় সময় উপজেলার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জমি কেনাবেচার সময় চাঁদা দাবি করতেন। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে, তাদের বাহিনী দিয়ে সেই জমি জবরদখল করতেন। এই বাহিনীর প্রধান অর্থদাতা হিসেবে ছিলেন মাসুদ। অভিযোগ রয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম একজন মাদক কারবারি হিসেবেও এলাকায় পরিচিত। পুরো উপজেলায় তিনি মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করতেন। তার নেতৃত্বে নান্নু, মাসুদ রানা, ইয়াদ আলী, নাহিদ, আব্দুর রব, নবিউল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন যুবককে নিয়ে একটি বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। প্রায় এক মাস আগে পাশের হাকিমপুর উপজেলায় মাদক নিতে এসে পুলিশের হাতে আটক হন জাহাঙ্গীর। আটকের ভিডিও সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম একাধিক মাদক মামলার আসামি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তিন মাস আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি।’ এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে এই মুহূর্তে বিদেশ পাঠানোর কোন প্রয়োজন নেই। তবে তার মাথায় লোহার আঘাতের কারণে অপারেশন-পরবর্তী ইনফেকশনের ঝুঁকি আছে। এজন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে চিকিৎসকদের। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ওয়াহিদার সঙ্গে সাক্ষাত এবং তার চিকিৎসা সংক্রান্ত খোঁজখবর নেয়ার কথা বলেন। এদিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান নিউরো সার্জন ও গঠিত ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন বলেন, সফলভাবে ওয়াহিদা খানমের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। আজ ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত হবে। সোমবার তাকে আইসিইউতে রেখে অবজারভেশনে রাখা হবে নাকি বেডে স্থানান্তর করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। মাথার বাঁ দিকটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডান পাশের কিছু অংশ প্যারালাইজড অবস্থায় আছে। তিনি তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিচিতদের চিনতে পারছেন। এদিকে আহত ওয়াহিদার কার্যালয় ও বাসার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দুইটি জায়গায় সশস্ত্র আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা কোন চুরির ঘটনা নয় বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এমনটাই দাবি করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল বেআইনী তদ্বিরে ব্যর্থ হয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। ইতোমধ্যেই দুইজন গ্রেফতার হয়েছে। এজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। যদিও কোন কোন মহল ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ‘বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা’ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ওয়াহিদা খানম একজন সৎ, নির্লোভ ও নির্ভীক কর্মকর্তা। তিনি কোন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না। এজন্য তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুনসহ উর্ধতনরা উপস্থিত ছিলেন। গত ২ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারী বাসায় হামলার ঘটনাটি ঘটে। হামলাকারীরা বাসার পেছনের দিকে থাকা বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে হামলার ঘটনাটি ঘটায়। হামলায় ওয়াহিদা ছাড়াও তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী (৬০) মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। বৃহস্পতিবার রাতেই হামলার ঘটনায় ওয়াহিদা খানমের ভাই শেখ ফরিদ বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর পরই পুলিশ বাসভবনের নিরাপত্তা প্রহরী পলাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেয়। ঘটনার পর পরই দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট এলাকায় র‌্যাব-১৩ শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের সদস্য আসাদুল ইসলাম (৩৫), সান্টু (৩৪) ও নবিরুল ইসলাম (৩৮) নামের তিনজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে নবিরুল পেশায় রং মিস্ত্রি। তাদের কাছ থেকে হামলায় ব্যবহৃত একটি হাতুড়ি উদ্ধার হয়েছে। র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌস গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানান, গ্রেফতারকৃত আসাদুল, সান্টু ও নবিরুল হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা মূলত চুরির উদ্দেশ্যে ওয়াহিদা খানমের সরকারী বাসভবনের পেছনের বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকেছিল। ভেতরে ঢোকার পর পরই চুরির সময় প্রথমে ওয়াহিদার পিতা জেগে যায়। তিনি চোর চোর বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় চোরেরা তার ওপর হামলা করে। তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে। তার পিতার চিৎকার শুনে ওয়াহিদা খানম জেগে যান। তিনিও চোর চোর করে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। এ সময় চোরেরা ওয়াহিদাকেও হাতুড়ি দিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। তারা অচেতন হয়ে পড়ে গেলে লোকজন আসার আগেই চোরেরা পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতরা চুরিতে বাধা দেয়ায় হামলা চালায় বলে দাবি করেছে। চুরিতে বাধা পেয়ে মূল হামলাটি সান্টু চালায় বলে গ্রেফতারকৃত আসাদুল দাবি করেছে। আর চুরির পরিকল্পনা করে নবিরুল। নবিরুল ও সান্টু দু’জনের ওপর হামলা করে। এদিকে সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া চোরদের ছবি মিলেছে। সেখানে লাল গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় যে ঢুকেছিল, সেই আসাদুল ইসলাম। প্রকৃতপক্ষে এমন ঘটনার পেছনে প্রকৃত কারণ কি তা জানার চেষ্টা চলছে। নিছক চুরির ঘটনা নাকি এমন ঘটনার নেপথ্যে আরও কোন রহস্য আছে তা জানার চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হচ্ছে, ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) জাহাঙ্গীর আলম (৪২), উপজেলা যুবলীগের সদস্য (বহিষ্কৃত) আসাদুল ইসলাম (৩৫), শিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা আদুর ছেলে মাসুদ রানা (৪০), নৈশপ্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশ (৩৮), চকবামুনিয়া বিশ্বনাথপুর এলাকার মৃত ফারাজ উদ্দিনের ছেলে রং মিস্ত্রি নবিরুল ইসলাম (৩৫) ও একই এলাকার খোকার ছেলে সান্টু চন্দ্র দাশ (২৮)। এদের মধ্যে কতজনকে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে হামলার প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে পুলিশের তরফ থেকেও জানানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর সাগরপাড়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে। তিনি ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১৭ সালে কমিটি ভেঙ্গে দিলে তিনি আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। আসাদুল ইসলাম ঘোড়াঘাট উপজেলার রানিগঞ্জের আমজাদ হোসেনের ছেলে। অন্যদিকে মাসুদ ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩নং সিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য। ইতোমধ্যেই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই যুবলীগ কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ছাড়া পাবে না বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ বদরুল আলম জানান, তার হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে। আরও পর্যবেক্ষণ শেষে মেডিক্যাল বোর্ড বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। চিকিৎসকরা জানান, আঘাতে মাথায় হাড় ৭-৮ টুকরো হয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। সেগুলো জোড়া দেয়া হয়েছে। আঘাতের কারণে আরও ছোট ছোট যে কাঁটা ছিল সেগুলোও ঠিক করা হয়েছে। মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে পরে আর কোন রক্তক্ষরণ হয়নি। এ ঘটনায় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ করছে। ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে গঠিত সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার পর রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলার ইউএনওদের নিরাপত্তায় ১০ জন করে সশস্ত্র আনসার নিয়োগ করা হয়েছে। দুই আসামি ৭ দিনের রিমান্ডে ॥ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের সরকারী বাসভবনে ঢুকে হাতুড়ি পেটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে এবং তার বাবাকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় আটক দুই আসামিকে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শনিবার বিকেলে দিনাজপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসুর আদালতে হামলায় অভিযুক্ত নবিরুল ইসলাম ও সান্টু চন্দ্র দাসকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন চায় পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেট সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, শনিবার রাত ১টা ৪০ মিনিটে র‌্যাব-১৩ এর ডিএডি বাবুল খানের নেতৃত্বে মামলার দ্বিতীয় আসামি উপজেলার চকবামুনিয়া বিশ্বনাথপুর গ্রামের মৃত ফারাজ উদ্দিনের ছেলে রং মিস্ত্রি নবিরুল ইসলাম (৩৫) ও একই এলাকার খোকা চন্দ্রের ছেলে সান্টু চন্দ্র দাসকে (২৮) ঘোড়াঘাট থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব-১৩। অপরদিকে মামলার প্রধান আসামি উপজেলার সাগরপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে আসাদুল ইসলামকে (৩৫) অসুস্থ থাকায় তাকে রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানায় ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ।
×