ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রীমকোর্টের এফিডেভিট শাখার ৪৩ ক্লার্ককে ধরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ১৭ আগস্ট ২০২০

সুপ্রীমকোর্টের এফিডেভিট শাখার ৪৩ ক্লার্ককে ধরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে সুপ্রীমকোর্টের এফিডেভিট শাখা থেকে আটক ৪৩ ক্লার্ককে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুুপ্রীমকোর্ট আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অন্যদিকে ইয়াবা ও নারীসহ গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ অফিসার মু. মুর্শেদুল হাসান ওরফে সোহেলকে বরখাস্ত করেছে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। সম্প্রতি আইনজীবী সমিতি সুপ্রীমকোর্টের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করে। তারই প্রেক্ষিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে সুপ্রীমকোর্টের এফিডেভিট শাখা থেকে আটক ৪৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মুচলেকায় এবং মৌখিকভাবে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রবিবার দুপুরে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল মুচলেকা নিয়ে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেন। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, অভিযুক্তদের মুচলেকা ও মৌখিক সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হয়েছ। সুপ্রীমকোর্টের ২ নম্বর প্রশাসনিক ভবনে রবিবার এ ঝটিকা অভিযান পরিচালিত হয় এবং প্রাথমিকভাবে সেখানে ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। অভিযানের সময় সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ আলী আকবর ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মোঃ গোলাম রব্বানি উপস্থিত ছিলেন। সুুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মশিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আদালতঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনজীবীরা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। আমরা বারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেছিলাম। রবিবার আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বে সুপ্রীমকোর্টের ২ নম্বর প্রশাসনিক ভবনে একটি ঝটিকা অভিযান পারিচালিত হয় এবং প্রাথমিকভাবে সেখানে ৪৩ ক্লার্ক ও আইনজীবীর সহকারীকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, ৪৩ জনকে আটকের পর বার নেতৃবৃন্দদের খবর পাঠানো হলে বারের সম্পাদকসহ আমরা ঘটনাস্থলে যাই। এরপর জানতে পারি, আটক ব্যক্তিরা নিজ শাখায় নিজ নিজ দায়িত্ব পালন না করে অন্য কার্যক্রমে ব্যস্ত রয়েছেন বলে তাদের আটক করা হয়েছে। সেখানে অভিযুক্তদের নাম, ঠিকানা সংগ্রহ শেষে তাদেরকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন ,সুপ্রীমকোর্টের এফিডেভিড শাখাসহ বিভিন্ন্ন শাখায় দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ প্রধান বিচারপতির কাছেও দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবেন। সুুপ্রীমকোর্ট আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। এতে সেকশনের ৪৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তৎক্ষণাত আটক করে পুলিশ। পরে এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দকে খবর দেয়া হলে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যাপক হট্টগোল করেন ক্লার্করা। পরে মুচলেকা দিয়ে সুপ্রীমকোর্ট বারের জিম্মায় ছাড়া পান আটক হওয়া ৪৩ জন। ভবিষ্যতে যাতে তদবিরের কাজে জড়িত না হয় সেজন্য সতর্ক করা হয়। পরে আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের মধ্যস্থতায় করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি না মানা, সেকশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অযথা ও অযাচিত অবস্থান করা এবং ভবিষ্যতে সেকশনে অন্য কোন অনিয়ম হবে না শর্তে ৪৩ জনকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়। পরে আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ ওই ৪৩ জনের কাছ থেকে মুচলেকা গ্রহণ করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। এ বিষয়ে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘সুপ্রীমকোর্ট একটি পবিত্র বিচারাঙ্গন। এখানে ঘুষ, দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে, এ যুদ্ধে আমরা সবাই শরিক হতে চাই। তবে প্রশাসনিক সহযোগিতা ছাড়াও আমাদের কাজ করা সম্ভব না। তাই আমাদের কিছু নিয়ম রয়েছে, আমাদের এসব নিয়ম মেনে চলতে হবে। তাই ভবিষ্যতে আর এমন হবে না বলে আমরা সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি। হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, ‘বিচারপতি ইমান আলী স্যার হঠাৎ করে অভিযান পরিচালনা করেন। আমরা গেলাম স্যারের সঙ্গে। সেখানে গিয়ে আমরা বহিরাগতসহ ৪৩ জনকে পাই, যারা কোন শৃঙ্খলা মেনে ঢোকেননি এবং তাদের সেখানে ঢোকার কোন কারণও নেই। নিয়ম হচ্ছে যার কাজ তার নাম মেশিনে ডাকা হবে, তখন সে ঢুকবে। যে কারণে তাদের (৪৩ জন) নাম লিখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। বাই দিস টাইম বারের নেতৃবৃন্দ আসেন। তারাও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা আর ঢুকবে না, এই মর্মে অবগত করার পর বার নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গত ৮ অগাস্ট আইনজীবী সমিতি, এ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আশ্বাস দেন, সুপ্রীমকোর্টের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনজীবীদের আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ঢালাওভাবে নয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। অনিয়মের অভিযোগে বেঞ্চ অফিসার বরখাস্ত ॥ অনিয়ম ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে হাইকোর্টের বেঞ্চ অফিসার মোরশেদুল হাসান সোহেলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রবিবার সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। সুপ্রীমকোর্টের মুখপাত্র সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, বেঞ্চ অফিসার মু. মুর্শেদুল হাসানকে তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলায় আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমতে চাকরি থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ১১ আগস্ট এই বেঞ্চ অফিসারকে গ্রেফতারের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। প্রকাশিত খবরে বলা হয়, তিনি হাইকোর্টে বেঞ্চ অফিসারের দায়িত্ব পালন করলেও নিজেকে কখনও ব্যারিস্টার, কখনও বিচারক বলে পরিচয় দিতেন। তার নাম মোরশেদুল হাসান সোহেল। গত ৬ আগস্ট এক নারীসহ রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগের ঝিলপারের তার নিজস্ব ফ্ল্যাট থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার দুটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করেছে পুলিশ। সোহেল এর আগেও একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। মাত্র একদিন কারাগারে থেকে পরের দিন জামিনে মুক্তি পান। এবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতারের সূত্রে ফের গ্রেফতার হন তিনি। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, গত ৬ আগস্ট তার থানার সাব-ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান অভিযান চালিয়ে রানা মণ্ডল নামের এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে। এ সময় তার কাছে ১০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানান, এই ইয়াবা তিনি মিরপুর এলাকার ‘মাদক সম্রাট’ সোহেলের কাছ থেকে কিনে এনেছেন। তার দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে পরে যাত্রাবাড়ী থানা ও মিরপুর থানার পুলিশ ওই দিনই অভিযান চালায় মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের ৩১৫ নম্বর বাড়ির (তাসমিম বিজয় এ্যাপার্টমেন্ট) চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে। সেখানে গিয়ে ফাতেমা ইসলাম চাঁদনী নামের আরেক খুচরা মাদক বিক্রেতাকে পায় পুলিশ। তার কাছ থেকে ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আর সোহেলের কাছে পাওয়া যায় ৬০০ পিস ইয়াবা। পরে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
×