ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইসরাইল-আমিরাত শান্তি চুক্তি প্রসঙ্গে হামাস ॥ ইরান বলছে শত্রুপক্ষ শক্তিশালী হবে

ফিলিস্তিনীদের পিঠে ছুরিকাঘাত

প্রকাশিত: ২০:১০, ১৫ আগস্ট ২০২০

ফিলিস্তিনীদের পিঠে ছুরিকাঘাত

ইসরাইল ও উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ‘ইউএই’র মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির কঠোর সমালোচনা করেছে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তুরস্ক ও ইরান এ চুক্তিকে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়েছে। তবে মিসর, জাতিসংঘ, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জর্ডান ও বাহরাইন এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। চুক্তির আওতায় ইসরাইল দখলকৃত পশ্চিম তীরের বিশাল অঞ্চলে বসতি স্থাপন স্থগিত করবে। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও এএফপির। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দেয়ার পর পরই হামাসের পক্ষ থেকে এ চুক্তিকে ফিলিস্তিনীদের পিঠে ছুরিকাঘাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল স্বাধীনতার ঘোষণার পর ইসরাইল ও আরবের মধ্যে এটি তৃতীয় চুক্তি। এর আগে মিসর ১৯৭৯ সালে ও জর্ডান ১৯৯৪ সালে তেল আবিবের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। এখন পর্যন্ত উপসাগরীয় কোন আরব দেশের সঙ্গে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব মোকাবেলায় ইসরাইলের সঙ্গে এসব দেশের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই চুক্তি ফিলিস্তিনীদের কোন স্বার্থের অনকূলে নয়। এতে ফিলিস্তিনী জনগণের অধিকারকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সংগঠনটি আরও বলেছে, ইসরাইলের সঙ্গে এই চুক্তি ফিলিস্তিনী জনগণের পিঠে ষড়যন্ত্রমূলক ছুরিকাঘাত। আরেক ফিলিস্তিনী সংগঠন পপুলার রেসিস্ট্যান্স কমিটি চুক্তিটিকে ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছে। ইসলামিক জিহাদ মুভমেন্টের পক্ষ থেকে নয়া চুক্তিটিকে আত্মসমর্পণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেন, ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সমঝোতায় পৌঁছেছে। এই লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আবুধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ও ট্রাম্প এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, তাদের আশা এই বিরাট ঐতিহাসিক পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি অগ্রগতিকে এগিয়ে নেবে। ট্রাম্পের ঘোষণার পর নেতানিয়াহু টুইটারে দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতাইবা এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি কূটনৈতিক জয়। চুক্তির আওতায় আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইসরাইল ও আমিরাতের প্রতিনিধিরা বিনিয়োগ, পর্যটন, সরাসরি বিমান চলাচল, নিরাপত্তা, টেলিযোগাযোগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও দূতাবাস স্থাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র ও সিনিয়র উপদেষ্টা নাবিল আবু রুদাইনাহ বলেন, মাহমুদ আব্বাস এ চুক্তির কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। চুক্তিটিকে তিনি ফিলিস্তিনীর সাধারণ জনতা, আল-আকসা মসজিদ ও জেরুজালেম ইস্যুর জন্য বিরাট আঘাত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে ইসরাইল-আমিরাত চুক্তির বিরোধিতায় পশ্চিমতীরে বিক্ষোভ করেছে একদল ইহুদী। কট্টর এসব ইহুদী পশ্চিমতীরে দ্রত বসতি স্থাপনের পক্ষে। ডেভিড ইলহাইয়ানি নামে একজন বিক্ষোভকারী বলেছেন, নেতানিয়াহু তার নিজের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি এ এলাকার শত শত ভোটারকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে স্রেফ ব্যর্থ। ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তির নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার তেহরান বলেছে, আবুধাবি এই চুক্তি করে কৌশলগত নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছে এবং এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে শত্রুপক্ষ শক্তিশালী হবে। ইরান বলছে- মুসলমানদের এই প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাস একদিন মুক্ত হবেই। সেদিন ইসরাইলের সঙ্গে তার সহযোগীরাও বানের পানির মতো ভেসে যাবে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে আরও বলেছে, নির্যাতিত ফিলিস্তিনী জাতিসহ বিশ্বের কোন স্বাধীনচেতা জাতি অবৈধ দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে তার অপরাধের ভাগীদারদের এই সম্পর্ক স্থাপন প্রক্রিয়াকে কখনও ক্ষমা করবে না। তুরস্ক বলেছে, ইসরাইল ও আমিরাতের এ ভন্ডামি মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ ভুলে যাবে না।
×