ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যার পানি কমলেও নদী ভাঙ্গনে বিপাকে মানুষ

প্রকাশিত: ২২:১৩, ১৪ আগস্ট ২০২০

বন্যার পানি কমলেও নদী ভাঙ্গনে বিপাকে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নদ-নদীর পানি কমে এলেও বেড়েছে নদী ভাঙ্গন। টানা ৪৮ দিন পর গত বুধবার সব জেলার থেকে বন্যা পানি নেমেছে। কিন্তু একই সঙ্গে বেড়ে গেছে নদী ভাঙ্গন। বন্যার পরে তীব্র নদী ভাঙ্গনের দিশাহারা হয়েছে পড়ছে নদী তীরের বাসিন্দারা। দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ছাড়াও ঢাকার আশপাশে বয়ে যাওয়া নদীর পাড় ভাঙছে পানির তোড়ে। ফলে পানি কমায় যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল, নদী ভাঙ্গনের কারণে মানুষজন আবারও বিপাকে পড়েছে। দেশের প্রধান নদী পদ্মা মেঘনা এবং যমুনা নদীগুলোতেও ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলা। যমুনার ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলার মানুষ। এছাড়া বংশী তুরাগ ও ধলেশ্বর নদীর পাড়ও দ্রুত ভাঙ্গনে পানি কমে যাওয়ায় তীব্র স্রোতের টানে। বন্যায় আক্রান্ত অনেক পরিবার এখন নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। বন্যার কারণে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মেরামত করতে পারছে না। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। ফলে মুহূর্তেই নিঃস্ব হয়েছে পড়ছে জমি জায়গা ভিটেমাটি হারিয়ে। এবারের বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত একটি জেলার নাম কুড়িগ্রাম। পানি কমায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। চিলমারি উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নে ছয় হাজার পরিবারে মধ্যে তিনশ’ পরিবারের ঘরবাড়ি পুরোপুরি ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়েছে। ফসলি জমিতে বালু জমে চাষাদের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে অনেকে বন্যার পরে নিজের ঘরবাড়িতে ফিরতে পারছে না। পানি কমায় তীব্র স্রোতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের সিডারচর এলাকায় করপারা গুচ্ছগ্রামটি পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ১৫ দিনে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ৪০ শতাংশ জায়গা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন-আতঙ্কে গুচ্ছগ্রামটির বাসিন্দারা নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ময়মনসিংহ নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র স্রোতের টানে। ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বিভিন্ন এলাকায় বসতবাড়ির রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বটতলা মোড় থেকেই উত্তর মরিচারচর পর্যন্ত চার কিলোমিটার পাকা সড়কের অর্ধেক অংশই নদীভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। বটতলা মোড় থেকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার অংশজুড়েই অসংখ্য স্থানে পাকা সড়কের অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ওই সব অংশে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ভাঙ্গন তীব্রতায় নদীর গতিপথই বদলে গেছে। এদিকে ঢাকার আশপাশের নদ নদীর পাড় ভাঙ্গছে। এত নদীর গর্ভে অনেক বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বংশী, তুরাগ ও ধলেশ্বরী নদীর পানি কয়েক দিন ধরে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঢাকার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে বটে। কিন্তু নতুন উপদ্রুত হিসেবে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। ফলে মানুষ বিপাকে পড়ছে নতুন করে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে ধলেশ্বরী নদী পাড়ের মানুষজন। বন্যার পানি কমলেও ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ফসলি জমিসহ ঘর-বাড়ি যাচ্ছে নদীগর্ভে। সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের নলাগড়িয়া এলাকায় সাতদিনে প্রায় দশটি ঘরবাড়ি ধলেশ্বরী নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙ্গন আতঙ্কে বহু পরিবার ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছেন। কুড়িগ্রাম ॥ ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তাসহ ১৬ নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ফের বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। পানি বেড়ে অর্ধশতাধিক চর-দ্বীপচরের নিচু এলাকা আবারও প্লাবিত হয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে সদ্য রোপণ করা রোপা আমনসহ কিছু বাড়িঘর। ধরলা নদীর তীব্র ভাঙ্গনে সদর উপজেলার সারডোব এলাকায় বিকল্প বাঁধের নতুন করে আবারও ৪ মিটার অংশ ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। প্রবল নদী ভাঙ্গন ও পানির তীব্র স্রোতে সারডোব এলাকার ঘর বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন এলাকাবাসীরা। অনেক গৃহহীন মানুষ চলে যাচ্ছেন বাঁধ ও উঁচু রাস্তায়। গত চারদিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে আরও শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। ওই এলাকার নূর হোসেন ও তার পরিবার ঘরবাড়ির মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে নৌকা করে বাঁধে যাবেন। তিনি বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেল। কোথাও থাকার জায়গা আমার নাই। একই অবস্থা আরও অনেক পরিবারের। গত তিন দফা বন্যায় নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করে। সেসময় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিকল্প বাঁধটির ৪০০ মিটার অংশ বিলীন হয়ে গেলে গৃহহীন হয় দুই শতাধিক পরিবার। টাঙ্গাইল ॥ সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও উন্নতি হয়েছে। তবে জেলায় এখনও ২টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এখনও মানুষ উঁচু কিংবা খোলা স্থানে অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। পানি কমতে থাকায় কিছু কিছু স্থানে ভাঙ্গনও দেখা দিয়েছে। বন্যায় জেলায় ৬ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা ত্রাণ শাখার তথ্য অনুয়ায়ী বর্তমানে পানিবন্দী কোন লোকসংখ্যা নেই। বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে এখন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, তৃতীয় দফা বন্যায় ১৮ হাজার ১২৬ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে বোনা আমন, রোপা আমন (বীজতলা), আউশ, সবজি, লেবু এবং আখ রয়েছে।
×