ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জ টাঙ্গাইলসহ ১২ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

প্রকাশিত: ২২:০১, ১০ আগস্ট ২০২০

সিরাজগঞ্জ টাঙ্গাইলসহ ১২ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের ১২ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এদিকে বন্যার পানি কমতে থাকায় নদীভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদী তীরবর্তী অনেক স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। কুড়িগ্রামের দুধকুমারের ভাঙ্গনে নিশ্চিহ্নের পথে দুটি গ্রাম। হুমকিতে রয়েছে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী পরিবারগুলোর। অনেকে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। আর দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে গাইবান্ধার চরাঞ্চলে মরিচের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে দাম বেড়েছে মরিচের। খবর স্থানীয় সংবাদদাতাদের। রবিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি হ্রাস পাচ্ছে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকতে পারে। আর গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রাজধানী ঢাকার আশপাশের নদীসমূহের পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। দেশের ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি ১৬টি এবং হ্রাস ৮০টির এবং অপরিবর্তিত তিনটি, বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১২, বিপদসীমার ওপরে নদীর সংখ্যা আট, বিপদসীমার ওপর স্টেশনের সংখ্যা ১১টি। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে মহেশখোলা ৭৯ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জ ৪২ মিলিমিটার। এদিকে সপ্তাহের শেষদিকে সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিমি বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ দুধকুমার নদের ভাঙ্গনে বিলীনের পথে ভুরুঙ্গামারীর পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা ও চরভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রাম। ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে ওই গ্রামের তিনটি মসজিদসহ কয়েক শ’ হেক্টর আবাদি জমি ও শতাধিক বসতবাড়ি। ভাঙ্গনের তীব্রতায় হুমকির মুখে পড়েছে দুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুধকুমারের ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে জানান স্থানীয়রা। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার নদের তীরবর্তী পরিবারগুলো। ভাঙ্গনের হুমকিতে থাকা অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, দুধকুমারের অব্যাহত ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে পাইকডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আব্দুল করিম ১৫শ’ নামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বদলে যাচ্ছে এলাকার মানচিত্র। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ভাঙ্গনকবলিত এলাকার মানুষ। বসতভিটা, বাঁশঝাড়, বাগান ও আবাদী জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। বসতভিটা হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে মানুষ। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা), আলোকিত ভুরুঙ্গামারী ও দুধকুমার নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শাহানারা বেগম মীরা বলেন, ‘আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া থেকে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ী ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেছেন। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’ নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে চরভুরঙ্গামারী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম ফজলুল হক ও পাইকেরছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাঙ্গনের তথ্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক জানান, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বিত পরিদর্শন শেষে নদী শাসনের জন্য একটি প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আপাতত শিলখুড়ি খেয়া ঘাটের দুইপারের জনগণের পারাপারের সুবিধার্থে ঘাট উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন। এছাড়াও কালজানি ও দুধকুমার নদীর ভাঙ্গন রোধে ‘দুধকুমার নদী উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে বলেও তিনি জানান। গাইবান্ধা ॥ এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ব্যাপক মরিচের চাষ করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে জমিতেই মরিচের গাছ পচে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে মরিচ উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।
×