ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবলারদের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করতে নাসিরের পরামর্শ

প্রকাশিত: ২১:১০, ২৫ জুলাই ২০২০

ফুটবলারদের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করতে নাসিরের পরামর্শ

রুমেল খান ॥ কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য কোচিং করতে বাড়ি থেকে যে টাকা দেয়া হতো, তা খরচ করে ফুটবল খেলে বেড়াতেন। শুধু তাই নয়, বাড়ি থেকে খেলতে নিষেধ করায় বাড়িও ছেড়েছিলেন! এ ব্যাপারে কারোর বাধা-নিষেধই মানতেন না। স্কুল ফাঁকি দিয়ে ফুটবল খেলতে চলে যাওয়ায় মায়ের হাতে প্রায়ই পিটুন খেতেন। স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতেন, পরে হয়ে যান ডিফেন্ডার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে বিদেশ সফরও করেছিলেন। ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীর হয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে লাইবেরিয়া যান তিনি। সেখানে চাকরির সুবাদে আত্মরক্ষার জন্য তাকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। ৫০০ রাউন্ড গুলিসহ অস্ত্র কাঁধে রাখা, প্রয়োজনে দায়িত্ব পালন করাসহ নানা ধরনের কাজ করতে হয়েছে তাকে। আর বিকেলে ফুটবল নিয়ে মেতে থেকেছেন। সেখানে তার সঙ্গে দেখা হয় আফ্রিকার প্রথম ব্যালন ডি’অর জয়ী ও বর্তমানে লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান জর্জ উইয়াহর সঙ্গেও। শুধু অনুশীলনই নয়, সেখানকার টুর্নামেন্ট খেলে সেরার পুরস্কারও জিতেছিলেন। ২০০৬ সালে সেনাবাািহনীর চাকরি ছেড়ে দিলেও আজও তিনি পরিচিত ‘আর্র্মি নাসির’ বলে। তার পুরো নাম নাসির উদ্দিন চৌধুরী। পাইওনিয়ার ক্লাব বৌ বাজারের জার্সি গায়ে চাপিয়ে ক্যারিয়ারের শুরু নাসিরের। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। আট বছর ওখানেই খেলেন। ২০০৩ সালে ডাক পান বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে। মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, শেখ জামালে, শেখ রাসেল, চট্টগ্রাম আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংস ঘুরে এখন খেলছেন আবাহনী লিমিটেডের হয়ে। করোনোভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে আছে বাংলাদেশের ফুটবল। তারও আগে থেকেই এই স্থবিরতার শুরু হয়েছিল দেশের তৃণমূল থেকে ফুটবলার বের করার প্রক্রিয়াটা থমকে যাওয়ায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন লীগ ও বয়সভিত্তিক দলে খেলোয়াড়রা নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে। এই লীগগুলো অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে করে আমাদের জাতীয় দল এবং অন্যান্য বয়সভিত্তিক দলগুলো ফুটবল সঙ্কটের মুখোমুখি না হয়।’ নিজের জেলা চট্টগ্রামের উদাহরণ দিয়ে ৩৮ বছর বয়সী নাসির বলেন, ‘চট্টগ্রাম ডিএফএ (জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন) প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ও অন্যান্য লীগে চালিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের অনেক ফুটবলার জাতীয় দলসহ বয়সভিত্তিক দলে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আমি আশা করি দেশের অন্য ৬৩ জেলা বা ডিএফএ একই উদ্যোগ নেবে।’ যত বেশি প্রতিযোগিতা হবে, তত বেশি খেলোয়াড়ের জোগান বাড়বে বলে মনে করছেন এই ডিফেন্ডার। ‘নিজ নিজ জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ লীগ শুরু হলে আমরা আরও খেলোয়াড় পাব। এখান থেকে উঠে আসবে ভাল খেলায়াড়। দিনশেষে জাতীয় দল এবং আমাদের ফুটবল উপকৃত হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘অনেক ভাল দল ও ক্লাব বিপিএলে আছে, খেলোয়াড়রা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, যা আমাদের তরুণ খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করছে। তারা ফুটবলের প্রতি উৎসাহী হচ্ছে। আসলে আমাদের খেলোয়াড়দের আগ্রহের অভাব নেই, বাকিটা ডিএফএকে করতে হবে। তারা যদি এগিয়ে আসে এবং ফুটবলকে নিয়ে নানা উদ্যোগ অব্যাহত রাখে, তাহলে আমার বিশ্বাস দেশের ফুটবল অনেক এগিয়ে যাবে।’
×