ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে লাশ হয়ে ফিরল কিশোরী

প্রকাশিত: ২০:১৯, ২০ জুলাই ২০২০

কেরানীগঞ্জে প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে লাশ হয়ে ফিরল কিশোরী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ১৯ জুলাই ॥ তাহমিনা আক্তার বীথি (১৯)। পিতা-মতার সঙ্গে বসবাস করতেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী খালপাড় এলাকার খলিল মিয়ার ভাড়া বাড়িতে । পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। বাবা পেশায় একজন চাকরিজীবী ও মা গৃহিণী। বীথি এলাকায় কয়েক স্কুল শিক্ষার্থীকে বাসায় গিয়ে পড়াতেন। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল তার। ৬ মাস আগে এলাকার পার্শ¦বর্তী ভাড়াটিয়া মোঃ ফিরোজের (২৬) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। আস্তে আস্তে তাদের প্রেম গভীর হয়। একই এলাকায় হওয়ায় বীথির পরিবার ছেলেটিকে চিনত। কিন্তু তাদের প্রেম সম্পর্কে কিছু জানত না। চলতি মাসের ৬ জুলাই বীথি ও ফিরোজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। দিনশেষে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও বীথির পরিবার তার সন্ধান পায় না। ঘটনার পরেরদিন বীথি তার বাবাকে ফোন করে বলে, আমি ফিরোজকে ভালবাসতাম তার সঙ্গেই চলে এসেছি এবং তাকে বিয়ে করেছি। তোমরা আমার জন্য ভেবো না। আমি ভাল আছি। এই বলে ফোন কেটে দেয়। এর পর বীথির বাবা অনেক চেষ্টা করেও আর তার মেয়ে সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। রবিবার বেলা ১১ টায় কেরানীগঞ্জের কদমতলী খালপাড় এলাকার রাস্তায় একটি এ্যাম্বুলেন্স আসে। ওই বাড়ির লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে এসে দেখে এ্যাম্বুলেন্সে বীথির লাশ। ঘটনাটি তার বাবা-মাকে জানালে তাড়াহুড়া করে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে এ্যাম্বুলেন্সে মেয়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এ্যাম্বুলেন্সে একজন লোক বসেছিল। লাশ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে পরিচয় দেয় আমি মৃত বীথির স্বামী। পড়ে লোকজন লাশটি বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগীর বাবা বিল্লাল হোসেন জানান, আমার মেয়ে গত ৬ জুলাই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। পরেরদিন সে আমাকে ফোন করে বলে আমি ফিরোজ নামে একটি ছেলেকে ভালবাসি। তাকে আমি বিয়ে করেছি। তার পর আর সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় সে নগদ ৭০ হাজার টাকা ও ১ ভরি স্বর্ণ নিয়ে গেছে। আজ সে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বীথির লাশের মাথায় ও কপালে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ফিরোজ আমার মেয়েকে অত্যাচার করে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই। এ ঘটনায় মৃত বীথির স্বামী ফিরোজের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বীথির পরিবার আমাদের সম্পর্কটি মেনে নেবে না ভেবে আমরা গত ৬ জুলাই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি। বিয়ের পর আমার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার কালকিবাড়ি চলে যাই। সেখানেই আমরা সংসার গোছাতে থাকি। আমাদের বিয়ের ৪ দিন পরে হঠাৎ বীথি অসুস্থ বোধ করে। পরে তাকে চিটাগং হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। গতকাল রাতে হঠাৎ বীথি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যাই। আজ ভোরে বীথির মৃত্যু হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তার পরিবারকে জানাই এবং লাশ এ্যাম্বুলেন্সে করে কেরানীগঞ্জে তার বাড়ি নিয়ে আসি। ভুক্তভোগীর মা আমেনা জানান, আমার মেয়েকে ফুঁসলিয়ে তার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে ফিরোজ বীথিকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। ফিরোজ এর আগেও একটি বিয়ে করেছে। তার একটি সন্তানও রয়েছে। আমার মেয়ের সঙ্গে করে নেয়া ৭০ হাজার টাকা ও স্বর্ণ হাতিয়ে নিয়ে তাকে হত্যা করে এখন নাটক সাজিয়ে বীথির লাশ আমার কাছে নিয়ে এসেছে। আমার মেয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। তার কোন ধরনের অসুখ ছিল না। আমি খুনী ফিরোজের শাস্তি চাই।
×